নিজস্ব প্রতিবেদক:
সিলেটের কানাইঘাট-চতুল-দরবস্ত সড়কের নয়াগ্রাম ব্রীজের পাশ থেকে এক শিশুর গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পরিচয় সনাক্তের পর জানা যায়, শিশুর লাশটি জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট ইউনিয়নের সারিঘাট চৈলাখেল গ্রামের জামাল উদ্দিনের প্রতিবন্ধী ছেলে ৮ বছর বয়সী জারিফ আহমদের। গত ৫দিন পূর্বে নিখোঁজ জারিফের বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলমের লাশ ওসমানী হাসপাতাল থেকে পাওয়া যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে- শুক্রবার (২১ মার্চ) সকাল ১১টার দিকে কানাইঘাট উপজেলার বড়চতুল ইউনিয়নের নয়াগ্রাম ব্রিজের পাশে একটি ডোবা থেকে জারিফের গলিত লাশ উদ্ধার করে কানাইঘাট থানা পুলিশ। এদিকে প্রতিবন্ধী নিখোঁজ জারিফ আহমদের অর্ধগলিত লাশ পাওয়ার পর রহশ্যের দানা বেঁধেছে।
জারিফের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ৮ মার্চ জারিফকে চিকিৎসা করানোর জন্য তার আপন বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম (২৬) বাড়ি থেকে নিয়ে বের হয়। এরপর থেকে নিখোঁজ ছিল জাহাঙ্গীর আলম ও জারিফ আহমদ। দু’দিন পর ১০ মার্চ জৈন্তাপুরের চিকনাগুল এলাকায় কিছুটা আহত অবস্থায় জাহাঙ্গীর আলমকে পাওয়া গেলেও তার ছোট ভাই জারিফ আহমদ পাওয়া যায়নি।
এরপর চিকিৎসা করার জন্য জাহাঙ্গীর আলমকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ১১ মার্চ পিতা জামাল উদ্দিনের সাথে ওসমানী হাসপাতালের পাশে বাঘবাড়ি জামে মসজিদে ফজরের নামাজ পড়ার সময় আবারও নিখোঁজ হয়ে যায় জাহাঙ্গীর আলম।
নিখোঁজ থাকা অবস্থায় ১৬ মার্চ ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জাহাঙ্গীর আলম মৃত্যুবরণ করলে তার লাশ সিলেট মেট্রোপলিটন কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশের সহায়তার তার পিতা জামাল উদ্দিন সনাক্ত করেন।
পুলিশের ভাষ্যমতে, জাহাঙ্গীর আলম মৌলভীবাজারে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হলে তাকে মৌলভীবাজার জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে অজ্ঞাত কিছু লোক তাকে ওসমানী হাসপাতালে পাঠান। এরপর ১৬ মার্চ সে মারা যায়। পরে ময়না তদন্ত শেষে ১৭ মার্চ জাহাঙ্গীরের লাশ গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এদিকে নিখোঁজ বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলমের লাশ পাওয়ার ৫ দিন পর তার ছোট ভাই প্রতিবন্ধী জারিফ আহমদের গলিত লাশ কানাইঘাটে ব্রীজের পাশ উদ্ধার হওয়ায় জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
অনেকে বলছেন- কিভাবে জাহাঙ্গীর সিলেট শহর থেকে নামাজ পড়ার সময় নিখোঁজ হয়ে মৌলভীবাজার জেলায় গিয়ে আহত হল, আবার তাকে অজ্ঞাত লোকজন ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করেছে এবং প্রতিবন্ধী জারিফ আহমদের লাশ নিখোঁজের ১২ দিন পর কানাইঘাটে পাওয়া গেল, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করলে প্রকৃত রহস্য উদঘাটন হবে।
জাহাঙ্গীর ও জারিফ আহমদের পিতা জামাল উদ্দিন বলেন, তার দুই জন স্ত্রীর সংসারে ১০ জন ছেলে-মেয়ে রয়েছেন। এরমধ্যে বড় স্ত্রী ছলিমা বেগমের দুই ছেলে জাহাঙ্গীর ও জারিফ আহমদ নিখোঁজের পর জৈন্তাপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়রী করেছিলেন তিনি। কিন্তু নিখোঁজের পর বড় ছেলের লাশ হাসপাতাল থেকে ও কয়েকদিন পর প্রতিবন্ধী ছেলের গলিত লাশ কানাইঘাটে থেকে উদ্ধার হওয়ায় তিনি বাকরুদ্ধ। তার কোন শত্রু নেই বলে জানান তিনি।
কানাইঘাট থানার ওসি আব্দুল আউয়াল জানান, বড়চতুল ইউনিয়নের নয়াগ্রাম ব্রীজের পাশে এক শিশুর গলিত লাশের সংবাদ পেয়ে সেখানে যাই। পরে লাশের পরিচয় শনাক্ত করে জানা যায়, গলিত শিশুটি জৈন্তাপুর থানার জামাল উদ্দিনের নিখোঁজ প্রতিবন্ধী ছেলে জারিফ আহমদ। গলিত লাশের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে কি না- এ অবস্থায় বোঝা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে।
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়