Sunday, December 22

শীত এলেই সারা শরীরে ব্যথা? কেন হয়, সমাধান কী জানুন

 

এখন ডিসেম্বরের মাঝামাঝি। গ্রামে শীত নেমেছে বেশ আগে। তাপমাত্রার পারদ নেমে শহরেরও। শীতের এই মৌসুম এলেই অনেকের গাঁটের ব্যথা, হাড়ের যন্ত্রণা যেন তুঙ্গে থাকে। কাজেকর্মে কিছুতেই মনোনিবেশ করা যায় না। রাতেই ঠিকমতো ঘুমানোরও জো নেই।

কিন্তু শীত এলেই কেন বাড়ে এই ব্যথাগুলো? অন্যসময় কেন কম থাকে গাঁটের ব্যথা? এই যন্ত্রণা ঘরোয়া উপায়ে কীভাবে কমানো সম্ভব? চলুন জেনে আসি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা কী বলছেন।

তাদের কথায়, এর একটি বিশেষ কারণ হলো রক্তের সঞ্চালন। আমাদের শরীরের মূল অংশ হলো ধড়। অর্থাৎ মাথা দুই হাত-পা বাদ দিলে শরীরের যে অংশটুকু পড়ে থাকে, সেটুকু। শীতের তাপমাত্রা কমে গেলে শরীরের তাপমাত্রাও কমতে থাকে। তখন হার্ট প্রাণপণে চেষ্টা করে ধড়ের অংশটিতে রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে তাপমাত্রা ধরে রাখার। এর ফলে হাত-পায়ে রক্তের সঞ্চালন অন্য অংশের তুলনায় কমে যায়।

লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, অনেকেই শীতে হাত ঘষেন। এর কারণ ধড়ের তুলনায় হাতের তাপমাত্রা কম থাকে। ফলে হাত গরম করার চেষ্টা করেন। আবার একই কারণে গাঁটের ব্যথা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হাত-পায়ে দেখা যায়। শরীরের অন্যান্য অংশে এই যন্ত্রণা কিন্তু কম।

সোয়েটার বা ফুল প্যান্ট পরলে হাত-পা গরম থাকে। যার ফলে ব্যথা কিছুটা হলেও কম অনুভূত হয়। কিন্তু এই পদ্ধতি আসলে ব্যথা ‘ভুলিয়ে’ রাখার চেষ্টা বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। তাদের কথায়, ব্যথা কমাতে চাইলে হাড় মজবুত করা প্রথমেই জরুরি।

ধরা যাক, সকালে কেউ ফুল হাতার পোশাক ও ফুল প্যান্ট পরে বাইরে বেরোচ্ছেন। এতে তার হাড় মজবুত থাকার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে গেল। কারণ তিনি গায়ে রোদ লাগতে দিচ্ছেন না। সকাল ৭টা থেকে ১১টার রোদ হাড়ের জন্য উপকারী। এটি শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি করে। যা হাড়কে ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে।

বয়স্ক মানুষদের ভিটামিন ডি বেশি প্রয়োজন। তাই হাত-পা না ঢেকে প্রাকৃতিক সূর্যালোকে কিছুটা সময় কাটানো আদতে স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। অস্টিয়োপোরোসিস বা হাড় ক্ষয়ে যাওয়ার সমস্যা যাদের রয়েছে, তাদের জন্য় এই সূর্যালোক বেশ উপকারী।

হাড় ক্ষয়ে যাওয়ার বড় কারণ হাড়ের দুর্বলতা। ক্যালসিয়ামের ঘাটতি মিটলে হাড়ের ক্ষয় অনেকটাই রোধ করা যায়। তাই শুধু গাঁটের ব্যথা ছাড়াও যাদের অস্টিয়োপোরোসিস রয়েছে, তাদের জন্যও সেরা সমাধান এই প্রাকৃতিক সূর্যালোক।

শীতকালীন এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার বেশ কিছু উপায় বাতলে দিয়েছেন চিকিৎসকরা। সেগুলো অনুসরণ করলেই বয়স্ক ব্যক্তিরা এই শীতে নিজেদের সুস্থ রাখতে পারবেন।

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা একান্ত জরুরি বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। তাদের কথায়, ওজন অতিরিক্ত হলে হাঁটুর উপর চাপ পড়ে। এছাড়া নিতম্ব, গোড়ালিতে যথেষ্ট চাপ পড়ে। ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকলে হাড় ও গাঁটের সমস্যা থেকে অনেকটা রেহাই পাওয়া সম্ভব।

নিয়মিত শরীরচর্চা

প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য বিশেষ জরুরি। এই ব্যায়াম হাড়ের ক্ষয় হওয়া আটকাবে। পাশাপাশি হাড় মজবুত রাখবে। হাঁটাচলা, সাঁতার কাটা, যোগব্যায়ামের মতো কাজগুলো করতে পারেন। এতে জয়েন্ট যেমন নমনীয় থাকে, তেমন ব্যথা থেকে অনেকটা রেহাই মেলে।

হাড়ের উপযোগী খাবার

হাড়ের উপযোগী খাবার এই সময় বেশি করে খেতে হবে। এতে হাড় মজবুত হবে। ফলে কমবে যন্ত্রণা। হাড় মজবুত করতে নিয়মিত পাতে রাখতে হবে দুধ, দই, পনির, কেইল, পালং শাক, ব্রকলি, কমলালেবু ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি প্রচুর পরিমাণে উপলব্ধ। যা একসঙ্গে হাড় মজবুত করতে প্রয়োজন।

পর্যাপ্ত পানি খান

শরীরে পানির পরিমাণ কমে গেলে বিভিন্ন জয়েন্টের লুব্রিকেটিং পদার্থগুলো শুকিয়ে যায়। এর ফলে দুটি হাড়ের মধ্যে ঘর্ষণ বেশি হয়। যা থেকে তীব্র যন্ত্রণা হতে থাকে। তাই শীতকাল হলেও বেশি পরিমাণে পানি পান করতে হবে।

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন

শুনতে অবাক লাগলেও এটি সত্যি। মানসিক চাপ জয়েন্টের ব্যথা অনেকটাই বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রাণায়াম করুন। শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম এই ব্যাপারে যথেষ্ট উপকারী।


শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়