Thursday, November 21

বিড়াল পোষা সুন্নত কী?

 


বিড়াল গৃহপালিত অতি আদুরে ছোট একটি প্রাণী। ইসলামে বিড়াল পোষা জায়েজ। অনেক সাহাবি বিড়াল পালতেন বলে হাদিসে বর্ণিত রয়েছে। আমাদের দেশে অনেকেই বিড়াল পালন করেন।

মানসিক চাপ কমানো, ঘর ইঁদুরমুক্ত রাখাসহ বিড়াল পালার অনেক উপকারিতা রয়েছে।

ইসলামে বিড়াল পোষার শর্ত হলো বিড়ালের যথাযথ যত্ন নিতে হবে, খাবার দিতে হবে। অনাহারে রাখা যাবে না। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, عُذِّبَتِ امْرَأَةٌ فِي هِرَّةٍ سَجَنَتْهَا حَتَّى مَاتَتْ، فَدَخَلَتْ فِيهَا النَّارَ، لاَ هِيَ أَطْعَمَتْهَا وَلاَ سَقَتْهَا، إِذْ حَبَسَتْهَا، وَلاَ هِيَ تَرَكَتْهَا تَأْكُلُ مِنْ خَشَاشِ الأَرْضِ

অর্থ: ‘জনৈক নারীকে একটি বিড়ালের কারণে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। সে বিড়ালটি বন্দি করে রাখে, এ অবস্থায় সেটি মারা যায়। সে এটি বন্দি করে রেখে পানাহার করায়নি এবং তাকে ছেড়েও দেয়নি যেন সে নিজে জমিনের পোকা-মাকড় খেতে পারে’। (সহিহ বোখারি: ৩৪৮২)

এ হাদিসের ব্যাখ্যায় হাফেজ ইবনে হাজার (রহ.) বলেন, কুরতুবি (রহ.) বলেছেন, এ হাদিস থেকে বিড়াল পালা ও বিড়ালকে বেঁধে রাখা জায়েজ বলে প্রমাণিত হয়, যদি তাকে খাবার-পানি দেওয়ার ব্যাপারে ত্রুটি না করা হয়। (ফাতহুল বারি: ৬/৪১২)

তবে বিড়াল পোষা সুন্নত নয়। অনেকে বিড়াল পোষাকে সুন্নত মনে করেন -এটা ঠিক নয়। নবীজি (সা.) বিড়াল পুষেছেন এ রকম গ্রহণযোগ্য কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না। যদিও নবীজি (সা.) এর ঘরে মাঝে মাঝে বিড়াল আসতো এবং তিনি বিড়াল কাছে এলে তাড়িয়ে দিতেন না তা বোঝা যায় বিভিন্ন বর্ণনা থেকে।

সবচেয়ে বেশি হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বিড়াল খুব পছন্দ করতেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর দরবারে থাকা অবস্থায় একবার তার চাদরের আস্তিন থেকে একটি বিড়ালছানা বেরিয়ে পড়ে। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে মজা করে বলেন, ‘ইয়া আবু হুরায়রা’! অর্থাৎ ‘হে বিড়ালের পিতা’! আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, বিড়াল নামাজ বিনষ্ট করে না। কারণ তা ঘরের জিনিসপত্রের অন্তর্ভুক্ত। (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৬৯)

সাহাবি হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, তিনি বলেন, একবার নবীজি মদিনার বাতহান নামক স্থানে গেলেন, তখন তিনি আমাকে ওজুর পানি এনে দিতে বললেন। আমি ওজুর পানি এনে দিলাম। নবীজি (সা.) প্রাকৃতিক প্রয়োজন সেরে এসে যখন ওজু করার জন্য পানির পাত্রটি নিতে যাচ্ছিলেন, তখন একটি বিড়াল এসে পানির পাত্রে মুখ দিয়ে পানি খেতে লাগলো। নবীজি (সা.) বিড়ালটির পানি খাওয়া শেষ হওয়ার জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেন। আমি প্রশ্ন করলে তিনি বললেন, বিড়াল ঘরের প্রাণী। বিড়াল মুখ দেওয়ার কারণে পানি নোংরা বা নাপাক হয় না। (নাসবুর রায়াহ)

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, إِنَّهَا لَيْسَتْ بِنَجَسٍ إِنَّمَا هِيَ مِنَ الطَّوَّافِينَ عَلَيْكُمْ

অর্থ: ‘বিড়াল অপবিত্র নয়। এরা তোমাদের আশেপাশেই ঘোরাফেরা করে’।

আয়েশা (রা.) আরো বলেন, আমি আল্লাহর রাসূলকে (সা.) বিড়ালের উচ্ছিষ্ট পানি দিয়ে ওজু করতে দেখেছি। (সুনানে আবু দাউদ: ৭৬)

উক্ত ২টি বর্ণনা থেকে বোঝা যায়, বিড়ালের মুখ দেওয়া পানি সাধারণ অবস্থায় নাপাক নয়। তবে বিড়ালের মুখে কোনো নাপাকি লেগে থাকলে বিড়ালের মুখ দেওয়া পানি নাপাক হবে।


শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়