Sunday, November 10

কানাইঘাটের মুনতাহার জন্য কাঁদছে সারাদেশ


কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক :

কানাইঘাটের মুনতাহা। পাঁচ বছরের শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিন। ফুটফুটে প্রাণচাঞ্চল্য মেয়েটি ছিলো পুরো পরিবার-পরিজনের আদরের। বাবা-মায়ের কলিজার টুকরো ধন। প্রায় সময়ই বাবার সঙ্গে বাইরে যাওয়ার বায়না ধরতো। সর্বশেষ বাবার সঙ্গে স্থানীয় একটি জলসায় গিয়েছিলো। বাড়ি ফিরে পরদিন বাড়ির আঙ্গিনায় খোলা করছিলো অন্য শিশুদের সঙ্গে। কিন্তু বিকেলে পেরিয়ে সন্ধ্যা গড়ালেও ঘরে ফিরেনি মুনতাহা।

চারিদিকে শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। কোথাও নেই মুনতাহা। একপর্যায়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন বাবা। পুলিশও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করে। সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয় নিখোঁজের ঘটনা। সিলেটভিউসহ স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পায় এই সংবাদ। দেশের নামকরা তারকারাও ফেসবুকে মুনতাহাকে নিয়ে পোস্ট দেন। সবার আশা ছিলো মুনতাহা ফিরবে। মুনতাহা ফিরেছেও! কিন্তু প্রাণচঞ্চল হয়ে নয়, সবাইকে কাঁদিয়ে নিথর দেহ নিয়ে।

রোববার (১০ নভেম্বর) ভোররাত চারটার দিকে মুনতাহার নিজ বাড়ির পুকুরে তার নিথর দেহের সন্ধ্যান পাওয়া যায়। এ খবর দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে সবজায়গায়। তার মৃত্যুর খবরে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন দেশের মানুষ।

মুনতাহা  সিলেট জেলার কানাইঘাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের বীরদলের ভাড়ারিফৌদ গ্রামের শামীম আহমদের মেয়ে।

কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল আওয়াল জানান, ভোর ৪টার দিকে মুনতাহার নিজ বাড়ির পুকুরে তার মৃতদেহের সন্ধান পাওয়া যায়। তার গলায় রশি পেঁচানো ও শরীরে ক্ষত চিহ্ন পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে তাকে হত্যা করে পুকুরে ফেলে দেয়া হয়েছে।

স্থানীয়দের বরাতে জানা গেছে, মুনতাহাকে হত্যা করে গুম করে রাখা হয়েছিলো বাড়ির পাশেই। রোববার ভোররাতে তার লাশ বাড়ির পাশের একটি পুকুরে ফেলার সময় স্থানীয়দের চোখে পড়ে। এসময় এক নারীকে আটক করে স্থানীয় জনতা। খবর পেয়ে কানাইঘাট থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

এদিকে মুনতাহার হত্যাকাণ্ডের খবর হৃদয়বিদারক মন্তব্য করে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে সমাজকর্মী ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ফারমিস আক্তার লিখেন, 'ক্ষমা করে দিস মা মুনতাহা, মুনতাহা আর আমাদের মাঝে বেচে নেই পাশের বাড়ির পুকুর থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।'

বাংলাদেশ বাউল সমিতির মহিলা সম্পাদিকা মুক্তা সরকার লিখেছেন, 'ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।  নিখোঁজ মুনতাহা আর বেঁচে নেই। বাড়ির পাশ থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।  খুনিদের চরম থেকে চরম শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।'

লন্ডন প্রবাসী নাজমুল হুদা নামের একজন লিখেছেন, 'এই মাসুম বাচ্চাটাকে কিভাবে হত্যা করতে পারলি, তর কলিজা টা একটি বার কেপে উঠল না।'

ফান্স প্রবাসী সাংবাদিক আবু বকর আলামিন লিখেছেন, 'মানুষ পরিচয়টা এমন মুহুর্তে বড় লজ্জার হয়ে যায়। ক্ষমা করিস রে মা মুনতাহা।'

এরআগে মুনতাহার পরিবার দাবি করে, তাকে পরিকল্পিতভাবে ‘অপহরণ' করা হয়েছে। এ ঘটনায় কানাইঘাট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী দায়ের করা হয়েছিলো। ‘অপহরণকারীকে’ ধরিয়ে দিতে এক লাখ টাকা পুরুস্কারও ঘোষণা করেছিলো পরিবার।

গত ৩ নভেম্বর সকালে বাবার সঙ্গে স্থানীয় একটি ওয়াজ মাহফিল থেকে বাড়ি ফিরে। পরে প্রতিদিনের মতো আশপাশের বাড়িতে শিশুদের সঙ্গে খেলাধুলা করতে যায়। কিন্তু বিকেলে হলে বাড়ি না ফিরলে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। তারপর তাকে আর কোথাও পাওয়া যায়নি।


শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়