বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার শুভ মহালয়া আজ (বুধবার)। মহালয়া দুর্গোৎসবের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কারণ এদিন থেকেই দেবীপক্ষের শুরু। মূলত মহালয়া থেকে পূজার আনুষ্ঠনিকতা শুরু হয়ে যায়। এরপর ষষ্ঠী থেকে শুরু হয়ে দশমীতে বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হয় পূজার আনুষ্ঠনিকতা।
মণ্ডপে মণ্ডপে প্রতিমা দেখা, ঘোরাঘুরি, ঢাকের বোল, লুচি-পায়েশ, নাড়ু খাওয়া এসবের মধ্যে দিয়ে ভীষণ আনন্দে কেটে যায় এই ৫ দিন। এই আনন্দমুখর দিনগুলোতে সবাই চান বিশেষভাবে নিজেকে সাজাতে। পূজার এই ৫ দিন কীভাবে সাজবেন, কেমন পোশাক বেছে নেবেন তা নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন।
পোশাকে উৎসবের আমেজ
এবার পোশাকের ক্ষেত্রে আবহাওয়ার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। বাঙালির উৎসব মানেই প্রচুর খাওয়াদাওয়া আর ঘোরাঘুরি। যেহেতু এখনো গরম কমেনি তাই এই বিষয়টি মাথায় রেখে আরামদায়ক পোশাক বেছে নিতে হবে। দেশীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো এবার গরমের কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন ধরনের পোশাক ডিজাইন করেছে।
অনলাইন ভিত্তিক ফ্যাশন ব্র্যান্ড ‘বিজেন্স’ এবার পূজা উপলকক্ষে বেশ কিছু পোশাক এনেছে। বিজেন্সের সহ উদ্যোক্তা ও নকশাকার জিনাত জাহান নিশা বলেন, ‘উৎসবে অনেকে বিশেষভাবে সাজতে চান, আবার অনেকে সাদাসিধে নতুন পোশাকও খোঁজেন। তাই সবার কথা মাথায় রেখে আমরা জাঁকালো পোশাক থেকে শুরু করে অপেক্ষাকৃত সরল, ছিমছাম নকশা সব আয়োজনই রাখি। পোশাকে এবার সুতির পাশাপাশি সেমিসিল্কে কাজ এসেছে বেশি এর জনপ্রিয়তা বিবেচনায়। এ ছাড়াও একুয়া সিল্ক, সুতি কোটা, সুইস কটন এসমস্ত ম্যাটেরিয়ালেও পোশাক প্রস্তুত করেছি আমরা’।
পূজার কেনাকাটায় কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখেন জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী পূজা মজুমদার বলেন, ‘নতুন জামা-জুতা আর মণ্ডপ ঘুরে ঘুরে ঠাকুর দেখা ছাড়া ছোটবেলার দুর্গাপূজা কল্পনাই করতে পারতাম না। এখনো পূজার ৫ দিন সব আত্মীয়-স্বজন মিলে হইহই করতে করতে সারা বছরের সব দুঃখ, হতাশা ভুলে যাই। এ বছরের পূজায় বেশ অনেকটা গরম পড়বে মনে হচ্ছে। তাই সবার জন্য আরামদায়ক জামা কেনার পরিকল্পনা করছি। মায়ের জন্য শাড়ি কেনা হয়ে গেছে, এবারে নিজের জন্য আর পরিবারের বাকিদের জন্য আস্তে ধীরে বাকি শপিংটাও সেরে ফেলব’।
পূজায় বাঙালি নারীর প্রিয় পোশাক শাড়ির পাশাপাশি এবার কুর্তা, সালোয়ার কামিজের কদর রয়েছে। পাশ্চাত্য ঘরানার পোশাক অথবা দেশীয় পোশাকের সঙ্গে পাশ্চাত্য ঘরানার মিশেলে ফিউশন বেছে নিতে পারেন।
পূজার সময় একেকদিন একেক ধরনের পোশাক বেছে নিতে দেখা যায়। দাওয়াতে জমকালো কোনো শাড়ি বা সালোয়ার কামিজ পরলেও অতিথি আপ্যায়ন বা মণ্ডপে ঘোরার জন্য বেছে নিতে পারেন আরামদায়ক কুর্তা বা টপস। যে পোশাকই আপনি বেছে নেন না কেন আরামের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। শরতের শুভ্রতার সঙ্গে মিল রেখে সাদার ওপর নকশা করা পোশাক বেছে নিতে পারেন যেকোনো দিন। লাল, কমলা, সবুজ এরকম রঙিন পোশাকও পরতে পারেন নিজের পছন্দমতো। তবে দশমীতে লাল পাড়ের সাদা শাড়ির অন্যরকম আবেদন রয়েছে সবসময়।
বিভিন্ন কাটছাঁটের বাহারি ব্লাউজ দেখা যাবে এবার পূজায়। শাড়ির সঙ্গে নিজের ব্যক্তিত্ব ও পছন্দের সঙ্গে মিলিয়ে নিজের ব্লাউজের ডিজাইন করতে পারেন। বর্তমানে অনলাইন বা দোকানে অনেক ডিজাইনার ব্লাউজও পাওয়া যায়। সাধারণ শাড়ির সঙ্গে স্টাইলিশ ব্লাউজ আজকাল বেশ ট্রেন্ডি। বিশেষ করে টিনএজাররা এরকম বাহারি ব্লাউজ খুব পছন্দ করছেন।
পূজায় ছেলেদের পাঞ্জাবিতেও এসেছে নতুনত্ব। সুতির পাশাপাশি একটু জমকালো লুকের জন্য সিল্কের পাঞ্জাবি পরতে পারেন। এবার একরঙা বা হালকা কাজের পাঞ্জাবি বেশি দেখা যাচ্ছে। তবে একটু স্টাইলিশ লুকের জন্য পাঞ্জাবির সঙ্গে পরতে পারেন প্রিন্স কোট। পাঞ্জাবির সঙ্গে নিজের স্বাচ্ছন্দ্য অনুযায়ী পায়জামা বা ধুতি পরতে পারেন। তবে শুধু পাঞ্জাবি নয়, পূজাতে পাঞ্জাবির পাশাপাশি ফতুয়া, শার্ট এগুলোও বেছে নিতে পারেন নিজের স্বাচ্ছন্দ্যমতো। জিনাত জাহান নিশা জানালেন, বিজেন্সের এডামস কালেকশনে পাঞ্জাবি, ফতুয়া, হারেম প্যান্ট, বেলবটম প্যান্ট, কোটি, গলার লকেট সব আয়োজনই রয়েছে।
গত কয়েক বছরে যেকোনো অনুষ্ঠানে পরিবারের সবার মিলিয়ে পোশাক পরার একটি প্রচলন খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পূজাও তার ব্যতিক্রম নয়। পরিবারের সবাই মিলিয়ে শাড়ি পাঞ্জাবি পরে সকলের নজর কাড়তে পারেন।
বিজেন্সের নিশা আরো জানালেন, ‘বিজেন্স যুগল আয়োজন নিয়ে কাজ করছে বহু বছর ধরে। মিলিয়ে কিংবা বিপরীত রঙের ভেতরও যুগল আয়োজন সব সময় জনপ্রিয় বিজেন্সের। শাড়ির সঙ্গে থাকতে পারে পাঞ্জাবি কিংবা ফতুয়া। থ্রিপিসের সঙ্গে পাঞ্জাবি বা ফতুয়া অথবা দুজনেই যদি একসঙ্গে পাঞ্জাবি কিংবা ফতুয়া পরতে চান সব ধরনের আয়োজন বরাবরই থাকে বিজেন্সে’।
বর্ণিল অনুষঙ্গ
উৎসবের বিশেষ দিনগুলোতে নিজেকে সাজিয়ে তুলুন বর্ণিল অনুষঙ্গে। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে গয়না বেছে নিন। বাঙালি হিন্দু নারীদের বিবাহিত জীবনের একটি অংশ ছাড়াও শাঁখা-পলা এখন জায়গা করে নিয়েছে ফ্যাশনেও। আজকাল বাহারি পলা পাওয়া যায় বাজারে। শুধু লাল নয়, সবুজ, কালো, হলুদসহ বিভিন্ন রঙের মধ্যে বিভিন্ন নকশায় দেখা যায় পলা।
পার্পল বক্সের স্বত্বাধিকারী মালিহা জামান ইনার মতে, পূজার গয়নার মধ্যে পলার বিশেষ চাহিদা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘পূজায় পলার বিশেষ আবেদন থাকলেও বর্তমানে পলার চাহিদা কেবল পূজায় না, সারাবছরই থাকে। গোল্ড, মেটাল, সিলভারের গয়নার পাশাপাশি বর্তমানে ক্লে এবং রেজিনের গহনা সবাই খুব পছন্দ করছেন এবং এ ধরনের গয়নার খুব ভালো চাহিদা দেখতে পাচ্ছি সামনে। ক্লে এবং রেজিনের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের পুতি, মুক্তা যোগ করে হাতের ছোঁয়ায় অসাধারণ সব গহনা তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে এসব গহনার বিশেষ চাহিদা দেখা যাবে এবার। এগুলো ভীষণ ট্রেন্ডি এবং যেকোনো পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে পরা যায়’।
নিশা জানান, পুজো উপলক্ষে বেশ কিছু নতুন গয়না এসেছে বিজেন্সে। গয়নায়, পুঁতি, রুদ্রাক্ষের ভিন্ন ব্যবহার এবং তামার গয়নায় হাতে এঁকে নকশা করা হয়েছে। এ ধরনের গহনাগুলো আজকাল বেশ ট্রেন্ডি।
পূজার সাজের আরেকটি গুরুত্বপুর্ণ অনুষঙ্গ হলো টিপ। শাড়ি বা দেশীয় পোশাকের সঙ্গে মুখের গড়ন, পোশাকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে কপালে পরতে পারেন টিপ। তবে এখন শুধু একরঙা টিপ নয়, টিপের মধ্যেও এসেছে নানা নকশা। টিপের ওপর হাতে এঁকে বা পুঁতি বসিয়ে বিভিন্ন রকম নকশা করা হয়। বিজেন্সে কয়েকটি রঙের এবং ডিজাইনের ধাতব টিপ রয়েছে।
নিশা বলেন, ‘ধাতব টিপ নিয়ে ৫-৬ বছর ধরে কাজ করছি আমরা। এবার পুজোয় নতুন কিছু ধাতব টিপ এসেছে’।
স্নিগ্ধ সাজে পরিপূর্ণ
আবহাওয়ার জন্য পূজার সাজ নিয়ে অনেকেই চিন্তায় থাকেন। কোনো দাওয়াতে বা রাতের আয়োজনে ভারী মেকআপ করলেও দিনের জন্য বেছে নিন হালকা মেকআপ। প্রথমেই একটি ক্লেনজার দিয়ে ভালো করে মুখ পরিষ্কার করে ময়েশ্চারাইজার ও সানস্ক্রিন ও প্রাইমার লাগিয়ে নিন। দিনের বেলা হালকা সাজে চোখে ও ঠোঁটের জন্য ন্যুড রং বেছে নিন। গালে হালকা রঙের ব্লাশ ব্যবহার করুন। আর রাতের ভারী সাজের জন্য ঠোঁটে গাঢ় রঙের লিপস্টিক ও চোখে গ্লিটার ব্যবহার করতে পারেন। চোখের সাজে গাঢ় করে আইলাইনার বা কাজল ব্যবহার করুন। সেটিং স্প্রে ব্যবহার করে সারাদিনের মেকআপকে ঠিকঠাক রাখুন।
পূজায় চুলে ফুলের ব্যবহার সাজে একটি স্নিগ্ধ ভাব আনবে। চুল খুলে রাখুন বা বেঁধে রাখুন, একপাশে একগুচ্ছ ফুল আপনার চুলের সাজকে আকর্ষণীয় করে তুলবে। শাড়ির সঙ্গে সাধারণ একটি হাতখোপা করতে পারেন। আর অন্য পোশাকের সঙ্গে পনিটেইল। বর্তমানে স্লিক বান এবং পনিটেইল ভীষণ জনপ্রিয়। এ রকম চুলের সাজ যেমন ট্রেন্ডি, তেমনি আরামদায়ক।
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়