Sunday, October 20

ভেষজ ফল পাকা পেঁপের বীজ সুস্থ রাখে কিডনি, দ্রুত ওজনও কমে

 


ভেষজ ফল পাকা পেঁপে বহু রোগের মহৌষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে প্রাচীনকাল থেকেই। স্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকায় পেঁপের অবস্থান অন্যতম। এটি কাঁচা ও পাকা দুভাবেই খাওয়া হয়ে থাকে। কাঁচা অবস্থায় সবজি ও পাকা অবস্থায় ফল হিসেবে খাওয়া হয় পেঁপে। আর এটি পাওয়া যায় সারা বছরেই। পুষ্টিবিদরা বলছেন, পেঁপের মধ্যে এমন কিছু প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা সারিয়ে তুলতে পারে বহু জটিল রোগ।

পেঁপের বৈজ্ঞানিক নাম কেরিকা পাপায়া। পেঁপে বৃহৎ প্রসারিত পত্র বিশিষ্ট একটি চিরসবুজ উদ্ভিদ। এর ফুল ক্রিম সাদা বা হলুদ-কমলা রঙের হয়। সবুজ লম্বাটে ডাবরের মতো ফলের ভেতরটা কাঁচা অবস্থায় থাকে সাদা। আর পাকলে ফলের গা হলুদ হয়ে যায়, ভেতরে গাঢ় হলুদ অথবা লাল হয়। পেঁপে পাকলে পানির পরিমান বেড়ে যায় এ কারণে ওজন বাড়ে। চমৎকার সুবাস ছড়ায়। পেটের সমস্যায় একটি চমৎকার মহৌষধ পেঁপে। কাঁচা অবস্থায় তরকারি বা সালাদ এবং পাকা ফল হিসেবে খাওয়া হয়। পেঁপের আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকায়। বাংলাদেশ, ভারত, মেক্সিকো, ব্রাজিলে বেশি জন্মে।

পেঁপেতে রয়েছে প্যাপেইন ও কাইমোপ্যাপেইন নামের প্রচুর প্রোটিওলাইটিক এনজাইম। এ উপাদান আমিষ ভাঙতে ও হজমে সাহায্য করে। আর পাকা পেঁপেতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন এ ও সি। ভিটামিন এ ও সি শরীরের রোগপ্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে, যুদ্ধ করে সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে, দাঁত, চুল, ত্বকের সুরক্ষা করে।

পেঁপের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার। এছাড়াও পেঁপের মধ্যে থাকে ভিটামিন সি, এ, বি, ই, প্রোটিন, খনিজের প্রাকৃতিক উৎস, বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ক্যারোটিনয়েড, ফাইবার, পটাশিয়াম। পেঁপের মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণ লিউটিন। যা মানব দেহের জন্য খুব ভাল। করবে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি রোগ নিরাময়ের আশ্চর্য গুণ রয়েছে পেঁপের বীজে। শত বছর ধরে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে পেঁপের বীজ।

আমরা সাধারণত পেঁপে খেয়ে বীজগুলো ফেলে দেই। কিন্তু জানলে অবাক হবেন, পেঁপের পাশাপাশি এর বীজও কিন্তু ততধিক উপকারী। এতেও রয়েছে একাধিক স্বাস্থ্যগুণ সমৃদ্ধ উপাদান। যা ভয়ানক সব রোগের ফাঁদ এড়াতে সাহায্য করে।

তাই আর দেরি না করে পেঁপের বীজের একাধিক চমকে দেওয়া গুণাগুণ সম্পর্কে জেনে নিন। হলফ করে বলতে পারি, তারপর থেকে আপনিও পেঁপে খেয়ে এর বীজ ফেলে দেওয়ার আগে একবার ভাববেন। নিয়মিত সেবনও করবেন। তাতেই ফিরবে আপনার স্বাস্থ্যের হাল।

কিডনি থাকবে সুস্থ-সবল​

কিডনি হলো আমাদের শরীরের রেচনাঙ্গ। এই অঙ্গটি ঠিকমতো কাজ না করলে দেহের টক্সিন বাইরে বের হতে পারবে না। এই সুযোগেই শরীরে বাসা বাঁধবে একাধিক রোগ। তাই সুস্থ থাকতে এই অঙ্গের হাল ফেরাতেই হবে। এই কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে পেঁপের বীজ। কারণ, এই বীজে রয়েছে এমন কিছু অত্যন্ত উপকারী উপাদান, যা কিডনির ক্ষয়ক্ষতির ভার কমাতে পারে। তাই সুস্থ থাকতে নিয়মিত এই বীজ খেতেই পারেন।

ক্যানসার দূরে রাখে

পেঁপের বীজে রয়েছে পলিফেনলের মতো শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া এতে পাওয়া আইসোথিওসায়ানেট শরীরে ক্যানসার কোষের গঠন ও বৃদ্ধি উভয়ই প্রতিরোধ করে। ক্যানসারের মতো মরণব্যাধির ফাঁদ এড়াতে চাইলে আপনাকে নিয়মিত পেঁপের বীজ খেতেই হবে। কারণ এই বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা কিনা দেহে ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি আটকে দেওয়ার কাজে সিদ্ধহস্ত। এই বিষয়টি ইতোমধ্যে একটি টেস্টটিউব গবেষণায় প্রমাণিত হয়ে গেছে। সুতরাং কর্কট রোগের ফাঁদ এড়াতে এই বীজের সঙ্গে দ্রুত বন্ধুত্ব করে নিন। তাহলেই উপকার পাবেন হাতেনাতে।

ইনফেকশনের সঙ্গে লড়াই করে

একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, ফাঙ্গাস ও প্যারাসাইটজনিত কোনো ইনফেকশনের ফাঁদে পড়লে মহৌষধ হয়ে উঠতে পারে পেঁপের বীজ। এমনকি ইস্ট ইনফেকশনের সঙ্গে লড়াই করার কাজেও এর জুড়ি মেলা ভার। তাই এই ধরনের সমস্যার ফাঁদে পড়লে অবশ্যই পেঁপের বীজ সেবন করুন। এছাড়া যারা এসব রোগের ফাঁদ এড়িয়ে চলতে চাচ্ছেন, তারাও কিন্তু নিয়মিত পেঁপের বীজ গুঁড়া করে পানি দিয়ে গিলে খেয়ে নিতে পারেন। এতেও উপকার মিলবে।

​পেটের স্বাস্থ্য​ ঠিক করে

অনেকেই নিয়মিত পেটের সমস্যায় ভোগেন। তার পরও এর থেকে চিরতরে মুক্তির উপায় খুঁজে পান না। আপনিও কি এই দলেই রয়েছেন নাকি? তাহলে নিয়মিত পেঁপের বীজ সেবন করুন। তাতেই কিন্তু গ্যাস, অ্যাসিডিটির মতো একাধিক রোগের ফাঁদ এড়াতে পারবেন। এমনকি কাছে ঘেঁষবে না কোলাইটিসের মতো সমস্যাও। তাই পেটের হাল-হকিকত বদলে দিতে চাইলে পেঁপের বীজকে ডায়েটে জায়গা করে দিতেই হবে। এতেই উপকার পাবেন চটজলদি।

হাই কোলেস্টেরল​ ​বশে থাকবে

হাই কোলেস্টেরল একটি ঘাতক অসুখ। এই রোগকে নিয়ন্ত্রণে না রাখলে হার্ট অ্যাটাক থেকে শুরু করে পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে। তবে ভালো খবর হলো, নিয়মিত পেঁপের বীজ সেবন করলেই কিন্তু কোলেস্টেরলকে বশে রাখা সম্ভব। তাই তো চিকিৎসকেরা প্রায় সব হাইপারলিপিডিমিয়ায় ভুক্তভোগীদের নিয়মিত পেঁপের বীজ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

ডেঙ্গু প্রতিরোধ করে

ডেঙ্গু প্রতিরোধে পেঁপের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য! ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলেই শরীরের প্লাটিলেটের সংখ্যা কমতে শুরু করে। এই সময় নিয়মিত পেঁপে বীজ এবং পেঁপে পাতা খেতে পারলে প্লাটিলেট কাউন্ট ফের স্বাভাবিক মাত্রায় ফিরে আসে।

পেঁপের বীজেই কমবে ভুঁড়ি

আকর্ষণীয় মেদহীন পেট পেতে চান সবাই। পেটের মেদ একটি বিব্রতকর বিষয়। পেটের চর্বি এবং কোমরের চারপাশের চর্বি দেখতে যেমন খারাপ, তেমনি স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। জাঙ্ক ফুড বা ভাজা খাবার এবং ব্যায়ামের অভাবে পেটের ফ্যাট দ্রুত বাড়ে। সাধারণত মদ্যপান, মিষ্টিজাতীয় খাবার অতিরিক্ত গ্রহণ, ডুবো তেলে ভাজা খাবার, কোমল পানীয়, অস্বাস্থ্যকর বাইরের খাবার, নিয়মিত লাল মাংস (রেড মিট) খাওয়া, স্যাচুরেটেড চর্বি গ্রহণ ইত্যাদি পেটের মেদ বাড়িয়ে তোলার পেছনে ভূমিকা রাখে। এমন পরিস্থিতিতে আপনি যদি পেঁপের বীজ খান, তাহলে তা পেটের মেদ কমাতে সাহায্য

যেভাবে খাবেন পেঁপের বীজ

পেঁপে কাটার পর বীজগুলো ছাড়িয়ে পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়ে নিন। তারপর একটা জারে ভরে রাখুন। প্রতিদিন সকালে কয়েকটা বীজ গুড়া করে পানি দিয়ে গিলে খেয়ে ফেলুন। কিংবা বীজগুলো আগে থেকেই গুড়া করে জারে রেখে দিতে পারেন।


শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়