আবগারি দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। শনিবার শর্তসাপেক্ষে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন তিনি। একই দিনে ঘোষণা দিয়েছেন, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়ার এবং বিধানসভা নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত আম আদমি পার্টির (আপ) অন্য কেউ মুখ্যমন্ত্রী হবেন। কেজরিওয়ালের এই ঘোষণার পরই নতুন জল্পনা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, কে হবেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী? একাধিক নাম সামনে আসছে।
মূলত, চলতি বছরের মার্চে আবগারি নীতি দুর্নীতি মামলায় কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করে দেশটির অর্থনৈতিক গোয়েন্দা ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি)। শুক্রবার এই মামলায় কেজরিওয়ালকে শর্তসাপেক্ষে জামিন দেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের নির্দেশে বলা হয়েছে, জামিনে মুক্তি পেলেও মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরে যেতে পারবেন না কেজরিওয়াল। সই করতে পারবেন না সরকারি নথিতে। এমনকী, আবগারি নীতি নিয়ে কোনও মন্তব্যও করতে পারবেন না।
জেল থেকে বেরোনোর পর প্রথনেই দলীয় কার্যালয়ে যান কেজরিওয়াল। সেখানেই তিনি পদত্যাগ করার কথা ঘোষণা দেন। কেজরিওয়াল বলেন, ‘আমি দেশের জনতার কাছে জানতে চাই কেজরিওয়াল কি সৎ? দুইদিন পরে আমি মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেব। যতক্ষণ জনগণ তার মতামত না দিচ্ছেন, ততক্ষণ আমি মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসব না।’
কেজরিওয়ালের ঘোষণার পরই নানা নাম নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। দিল্লির সাবেক উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া কি দৌড়ে রয়েছেন? আবগারি দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল মণীশ সিসোদিয়াকেও। সুপ্রিম কোর্ট থেকে তিনিও জামিন পেয়েছেন।
তবে কেজরিওয়াল তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমি ও মণীশ সিসোদিয়া এখন জনতার আদালতে যাব। আমরা স্বচ্ছ হলে ভোট দেবেন। না হলে দেবেন না।’ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মণীশ সিসোদিয়া যে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে নেই, কেজরিওয়ালের এই বক্তব্যেই তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন কেজরিওয়াল। তাহলে কে হবেন পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রিত্বের দৌড়ে এখন সবার আগে রয়েছেন দিল্লির শিক্ষামন্ত্রী অতীশী মারলেনা সিং। ৪৩ বছর বয়সি অতীশী দিল্লি সরকারের ১৪টি দপ্তরের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। যা এই মুহূর্তে দিল্লির সরকারের কোনও মন্ত্রীর নেই। এছাড়া কেজরিওয়াল ও সিসোদিয়া জেলে থাকার সময় দলের একাধিক কর্মসূচির নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। কেজরিওয়ালের স্ত্রীর সঙ্গেও প্রত্যেক কর্মসূচিতে দেখা গেছে তাকে।
জানা গেছে, কেজরিওয়ালের বিশ্বস্ত নেতাদের মধ্যে একজন অতীশী। তাকে ভরসা করেন কেজরিওয়াল। সিসোদিয়া জেলে যাওয়ার পর শিক্ষা দপ্তরের দায়িত্ব পান অতীশী। দিল্লির বাজেটও পেশ করেন তিনি।
অতীশীর পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন আপ নেতা তথা মন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ। গ্রেটার কৈলাস কেন্দ্রের বিধায়ক তিনি। দীর্ঘদিন আপের সঙ্গে যুক্ত। সৌরভ আপের জাতীয় মুখপাত্রও।
অন্যদিকে আলোচনায় নাম আছে আপের জাতীয় কার্যনির্বাহী ও রাজনীতিবিষয়ক কমিটির সদস্য রাঘব চাড্ডা বর্তমানে ভারতের রাজ্যসভার সদস্য। চাড্ডা রাজিন্দর নগর থেকে বিধায়ক হয়েছিলেন এবং ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পাঞ্জাবে আম আদমি পার্টির ব্যাপক বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
মুখ্যমন্ত্রী পদের লড়াইয়ের উঠে আসছে কৈলাস গেহলটের নামও। নফজগড় বিধানসভা এই আপ বিধায়ক দিল্লির পরিবহণ এবং পরিবেশ মন্ত্রী। খুব একটা সামনে আসে না তার নাম। তিনিও রয়েছেন দৌড়ে।
মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন কেজরিওয়ালের স্ত্রী?
দিল্লির একাধিক মন্ত্রী ছাড়াও আর একজনের নাম নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। তিনি কেজরিওয়ালের স্ত্রী সুনীতা কেজরিওয়াল। আবগারি দুর্নীতি মামলায় কেজরিওয়াল গ্রেপ্তার হওয়ার পর সক্রিয় হতে দেখা যায় সুনীতাকে। কেন্দ্রকে লাগাতার নিশানা করেন তিনি। একাধিক জনসভায় দেখা গিয়েছে তাকে।
বিজেপি বলছে, সুনীতাকে মুখ্যমন্ত্রীর করার চেষ্টা করতে পারেন কেজরিওয়াল। দলের বিধায়কদের এই নিয়ে বোঝাতেই দুই দিন সময় চেয়েছেন তিনি।
সুনীতা ছাড়াও আপের রাজ্যসভার সাংসদ সঞ্জয় সিং এবং মন্ত্রী গোপাল রাইয়ের নামও আলোচনায় উঠে আসছে।
প্রসঙ্গত, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়েছেন, চলতি বছরের নভেম্বরেই এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। অথাৎ মুখ্যমন্ন্ত্রী যেই হোক না কেন— তার হাতে সময় থাকবে মাত্র তিন মাস। এই পরিস্থিতিতে আম আদমি পার্টি চাইবে এমন একজন নেতাকে বেছে নিতে, সাধারণ জনগণ ও দলের মধ্যে যার শক্ত অবস্থান ও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
সূত্র: এনডিটিভি
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়