কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের একটি আজন্ম ব্র্যান্ড সালমান শাহ। তাকে বলা হতো বাংলা চলচ্চিত্র জগতের রাজপুত্র। মৃত্যুর দুই যুগ পেরিয়ে গেছে, অথচ এখনো তার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা এবং আবেদন। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে আরও অনেক বেশি রঙিন হচ্ছে সালমান শাহকে নিয়ে ভালোবাসার রঙ। এখনো টিভির পর্দায় তার সিনেমা প্রচার হলে দর্শক আগ্রহ নিয়ে দেখেন।
বুহস্পতিবার সেই ক্ষণজন্মা নায়কের জন্মদিন। ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন সালমান শাহ। তার বাবার নাম কমর উদ্দিন চৌধুরী এবং মায়ের নাম নীলা চৌধুরী। সালমান শাহ ছিলেন পরিবারের বড় ছেলে। তার জন্মনাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। তবে চলচ্চিত্রে তিনি সবার কাছে সালমান শাহ নামেই পরিচিত ছিলেন।
আজ তিনি বেঁচে থাকলে হয়তো বাংলা চলচ্চিত্র সমৃদ্ধ হতো আরও বহু সুপারহিট সিনেমায়। সিনিয়র হিসেবে তিনি হয়তো এখন অভিনয় ও ক্যারিয়ার সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দিতেন বর্তমান প্রজন্মের শিল্পীদের। আরও অনেক কিছুই হতে পারতো। কিন্তু সব সম্ভাবনার আলোই নিভে গেছে তার অকাল মৃত্যুর মধ্য দিয়ে।
ক্ষণজন্মা এই নায়ক রেখে গেছেন ২৭টি চলচ্চিত্র এবং অগণিত ভক্ত। সেই ভক্তের সংখ্যা চক্রবৃদ্ধি হারে শুধু বাড়ছেই দিনে দিনে। রুপালি পর্দায় অভিষেকের পর খুব শিগগিরই সালমান শাহ হয়ে উঠেছিলেন কোটি তরুণ-তরুণীর স্বপ্নের নায়ক। শুরুতেই বিশাল সাফল্য দিয়ে তিনি প্রাণসঞ্চার করে দিলেন মৃতপ্রায় চলচ্চিত্রে। তারপর শুধুই ইতিহাস।
অনেকে বলে থাকেন, সালমান শাহর মতো জনপ্রিয় নায়ক হয়তো আর কখনোই কোনো দিন জন্মাবে না বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে।
সালমান শাহ পড়াশুনা করেন খুলনার বয়রা মডেল হাই স্কুলে। ওই স্কুলে চিত্রনায়িকা মৌসুমী তার সহপাঠী ছিলেন। পরে ১৯৯৩ সালে একই সঙ্গে দুজনের চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়। সে বছর সালমান-মৌসুমী জুটি বেঁধে অভিনয় করেন সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবিতে। সেই থেকে একবারের জন্যও পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
মাত্র চার বছরের ক্যারিয়ারে ২৭টি ছবিতে অভিনয় করেন সালমান শাহ। সেগুলোর প্রায় সবগুলোই সুপারহিট। তার অভিনীত ছবিগুলোর মধ্যে অন্যতম অন্তরে অন্তরে, সুজন সখী, স্বপ্নের নায়ক, স্বপ্নের ঠিকানা, চাওয়া থেকে পাওয়া, জীবন সংসার, প্রেম প্রিয়াসী, সত্যের মৃত্যু নেই, মায়ের অধিকার, এই ঘর এই সংসার, তোমাকে চাই, আনন্দ অশ্রু, বুকের ভেতর আগুন ইত্যাদি।
সালমান শাহর সঙ্গে চিত্রনায়িকা শাবনূরের জুটি ছিল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে তাদেরকে সবচেয়ে সেরা জুটিও বলেন অনেকে। একসঙ্গে ১৪টি ছবি করেছিলেন তারা। প্রতিটিই সুপারহিট। তাদের পর্দার রসায়ন ছিল নজরকাড়া। এ জুটির বাস্তব জীবনের রসায়ন নিয়েও তুমুল চর্চা হতো। সালমান-শাবনূরের তখনকার সম্পর্ক নিয়ে এখনো চর্চা হয়।
চলচ্চিত্রে অভিষেকের আগের বছর অর্থাৎ ১৯৯২ সালের ১২ আগস্ট খালার বান্ধবীর মেয়ে সামিরা হককে বিয়ে করেন সালমান শাহ। সামিরা ছিলেন বিউটি পার্লার ব্যবসায়ী। তিনি সালমান শাহর দুটি চলচ্চিত্রে তার পোশাক পরিকল্পনাকারী হিসেবেও কাজ করেন।
কিন্তু দাম্পত্য জীবনের পাঁচ বছরের মাথায় ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর হঠাৎই সালমান শাহর মৃত্যু খবর দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। এদিন রাজধানীর ইস্কাটনে নিজ বাসার সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ পাওয়া যায়। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে এই মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হলেও নায়কের মৃত্যু নিয়ে দানা বাঁধে রহস্য।
সালমান শাহর মৃত্যুর জন্য অভিযোগের আঙুল ওঠে তার স্ত্রী সামিরার দিকে। পরবর্তীতে সামিরা, চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মাদ ভাইসহ ১১ জনকে এই মৃত্যুর জন্য দায়ী করে হত্যা মামলা করে সালমান শাহর পরিবার।
সে সময় সালমান শাহর মৃত্যুর খবরে কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল গোটা দেশ। যদিও তার মৃত্যুরহস্য আজও উদঘাটিত হয়নি। ২০২০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পুলিশের তদন্ত বিভাগ জানায় যে, সালমান শাহ আত্মহত্যাই করেছিলেন। কিন্তু এই প্রতিবেদন আজও মানতে পারেনি সালমান শাহর পরিবার এবং তার অসংখ্য ভক্ত।
এর আগে ১৯৯৬ সালে সালমান শাহর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সেই শোক সইতে না পেরে সারা দেশে আত্মঘাতী হন বেশ কয়েকজন তরুণ-তরুণী। তারা সবাই সালমান শাহর অন্ধ ভক্ত ছিলেন। প্রিয় তারকার মৃত্যুর খবরে এভাবে তরুণ-তরুণীদের আত্মাহুতি পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। সেই সালমান শাহ মরেও অমর হয়ে আছেন এ দেশের লাখো ভক্তের হৃদয়ে।
সূত্র: ঢাকাটাইমস
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়