প্রিয় পাঠক,
ঢাকা টাইমসের আয়োজনে আজ আমরা পবিত্র কোরআনুল কারীমের ২১তম পারা থেকে ধারাবাহিক তাফসির করছি।
আগের পর্ব: ইসরাফিল (আ.)-এর প্রথম ফুৎকারে সৃষ্টিজগত প্রকম্পিত হয়ে উঠবে
একুশতম পারায় সূরা আনকাবুতের যে অংশটুকু স্থান পেয়েছে, তার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হলো:
১. একুশতম পারার প্রথম আয়াতটি সূরা আনকাবুতের ৪৫তম আয়াত। এতে আল্লাহর কিতাব তেলাওয়াত এবং নামাজের প্রতি যত্নবান হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নামাজের উপকারিতা: নামাজের উপকারিতার কথা বলা হয়েছে, নামাজ মানুষকে নির্লজ্জতা ও অশ্লীলতা থেকে বিরত রাখে। আল্লাহ তায়ালা যা বলেছেন তা-ই বাস্তব। যখন সকল শর্ত ও আদবের প্রতি লক্ষ রেখে নামাজ আদায় করা হয় তখন অবশ্যই তার উপকারিতা পাওয়া যায়। নামাজ তার ও গুনাহের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
ইমাম আবুল আলিয়া রহ. বলেন, নামাজে তিনটি গুণ পাওয়া যায়। ইখলাস, আল্লাহর ভয় এবং আল্লাহর জিকির। আল্লাহর জিকির হচ্ছে কোরআন তেলাওয়াত, যা তাকে সৎকাজের নির্দেশ দেয় ও অসৎকাজ থেকে বিরত রাখে। যে নামাজে এ তিন গুণের কোনোটি পাওয়া যাবে না, প্রকৃতপক্ষে তা কোনো নামাজই নয়।
আমাদের নামাজের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করা উচিত। এর ফলে আমরা বুঝতে পারবো আমাদের নামাজ কেন নিষ্প্রাণ হয়ে গেছে। মসজিদগুলো নামাজিদের দ্বারা ভরপুর হওয়া সত্ত্বেও ঘরে-বাজারে কেন গুনাহের সয়লাব বয়ে যাচ্ছে? বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের অধিকাংশ লোক নামাজও পড়ে আবার মিথ্যাও বলে। ওয়াদা ভঙ্গ করে, অত্যাচার ও লুটতরাজ চালায়। পর্দাহীনতা ও পাপাচারে তারা ডুবে আছে। তাদের ঘর ও বাজার দেখে মনেই হয় না তারা নামাজি। আসলে তারা নামাজ এবং তার প্রভাবকে মসজিদেই সীমাবদ্ধ রেখেছে। নিজেদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও চারিত্রিক জীবন থেকে নামাজকে পৃথক করে ফেলেছে।
রাসূলের সত্যবাদিতার সুস্পষ্ট নিদর্শন
২. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সত্যবাদিতার সুস্পষ্ট নিদর্শন হচ্ছে তিনি উম্মি ছিলেন। পড়ালেখা জানতেন না। যদি তিনি লেখাপড়া জানতেন (উম্মি না হতেন) তা হলে বাতিলপন্থিরা তার ব্যাপারে সন্দেহ করত, সম্ভবত তিনি পূর্ববর্তী কিতাব থেকে এই জ্ঞান অর্জন করেছেন। তার সত্যবাদিতার সুস্পষ্ট ও জীবন্ত প্রমাণ সত্ত্বেও বিরোধীপক্ষ তার ব্যাপারে আপত্তি তুলেছে। আমরা যেসব মুজিজা চাই, তিনি কেন তা আমাদেরকে দেখান না? আল্লাহ তায়ালা বলেন, মুজিজা হিসেবে কোরআন কি তাদের জন্য যথেষ্ট নয়, (৫১) যার অনুরূপ আরেকটি কিতাব পেশ করতে তাদের বড় বড় সাহিত্যিকরাও অক্ষম হয়ে গেছে? কোরআন তো বহু মুজিজার সমষ্টি। এই মুজিজা থাকা সত্ত্বেও অন্য মুজিজা তালাশ করা অজ্ঞতা ও হঠকারিতা বৈ কিছু নয়। তাদের মূর্খতার অবস্থা এতো করুণ যে, তারা আজাবও তলব করে থাকে। (৫৩-৫৪)
কোরআন গতকাল যেমন মুজিজা ছিল আজও তেমন মুজিজা (জীবন্ত)। কিন্তু কোরআন যে যুগে এতসব বিজ্ঞানগত তথ্য পরিবেশন করছিল, সে যুগের বিজ্ঞানীরা তা কল্পনাও করেনি। কোরআনের বর্ণিত তথ্যের দিকে ফিরে আসতে সেই বিজ্ঞানীদের অনেক সময় লেগেছে। কিন্তু আজকাল যখন বিজ্ঞানচর্চায় নতুন নতুন থিওরি যোগ হচ্ছে, যেগুলো কোনোভাবে হয়তো কোরআনেরই কোনো বর্ণনার সাথে মিলে যাচ্ছে, তখন কোরআনুল কারিমের এই অলৌকিকতা বুঝতে মানুষের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। বরং বর্তমানকালের মানুষজন সহজেই তা বুঝতে পারছে। তাই অধম মনে করে জ্ঞান-বিজ্ঞানের দিক থেকে মানুষ যত এগিয়ে যাবে কোরআনুল কারিমের মুজিজা ততই প্রকাশ পেতে থাকবে।
বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে, কোরআন মাজিদ মুজিজা হওয়া আগের তুলনায় বর্তমানে অধিক স্পষ্ট। তখনকার আরবদের নিকট কোরআনের মুজিজা হওয়া সুস্পষ্ট ছিল। কিন্তু অনারবদের নিকট বিষয়টা তখন কিছুটা মুশকিল ছিল। কিন্তু এই মিডিয়ার যুগে আরব-অনারব, ইউরোপিয়ান-হিন্দুস্থানি সকলেই কোরআনকে মুজিজা হিসেবে স্বীকার করতে বাধ্য। তবে শর্ত শুধু একটাই; তারা এ কোরআন তেলাওয়াত করবে এবং তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করবে।
৩. বিরোধীদের অবস্থা উল্লেখ করার পর মুত্তাকিদের আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে হিজরত করার এবং দীনের পথে আসা বিপদ- আপদ সহ্য করার নির্দেশ দিয়েছেন। (৫৬-৫৯)
যারা স্বীয় মাতৃভূমি ছেড়ে দেয় তাদের অবশ্যই জীবন-জীবিকার ব্যাপারে চিন্তা এসে যায়। ভিনদেশে তারা কীভাবে খাবারদাবারের ব্যবস্থা করবে? এই কারণে সান্ত্বনা দিয়ে বলা হয়েছে, যে মহান সত্তা নিতান্ত দুর্বল প্রাণীদের খাবারের ব্যবস্থা করেন, তিনি তোমাদেরকে রিজিক দেবেন। তাই হিজরতের ক্ষেত্রে দরিদ্রতার ভয় করার কোনো কারণ নেই।
কোরআনের সারসংক্ষেপ
৪. বলা যেতে পারে, এ সুরার শেষআয়াতে আল্লাহ তায়ালা পুরো কোরআনের সারসংক্ষেপ উল্লেখ করে দিয়েছেন। বলা হয়েছে, ‘যারা আমার জন্য চেষ্টা- প্রচেষ্টা করে আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার রাস্তা দেখাই। এবং নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা সৎকর্মশীলদের সাথে আছেন।’ যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নফস ও শয়তানের সাথে জিহাদ করে, আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া ও আখেরাতে তাদেরকে সফলতার রাজপথ পর্যন্ত পৌঁছার তাওফিক দিয়ে থাকেন।
সূরা রুম
এটি মক্কি সূরা। আয়াত সংখ্যা: ৬০। রুকু সংখ্যা: ৬
কোরআনের ভবিষ্যদ্বাণী
কোরআন মাজিদের মুজিজা হওয়ার একটি বিষয় হলো তার ভবিষ্যদ্বাণীসমূহ। এই সূরার শুরুতে এক ভবিষ্যদ্বাণীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে, পরবর্তীতে যা অক্ষরের অক্ষরে বাস্তবায়িত হয়েছিল। রোমকদের বিজয় সম্পর্কে এই ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল। ভবিষ্যদ্বাণীটি বাস্তবায়িত হওয়া এক অস্বাভাবিক বিষয় ছিল। কেননা কোরআন যখন এই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল, পারসিকরা তখন রোমকদের উপর পূর্ণরূপে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে বসেছিল। রোমান সাম্রাজ্য মৃত্যুর দুয়ারে উপনীত ছিল। সীমান্ত অত্যন্ত নাজুক হওয়ার পাশাপাশি ভেতরগত অবস্থাও ছিল খুব করুণ। ইউরোপের দিকে দিকে বিদ্রোহ দানা বেঁধে উঠেছিল। রোমক সম্রাট হিরাক্লিয়াস শোচনীয় পরাজয়-মুহূর্তে লাঞ্ছনাকর সন্ধি করতে বাধ্য হয়েছিল। ২
যেহেতু তখন পারসিকরা মূর্তিপূজক ছিলো আর রোমকরা আল্লাহর ইবাদত করত এ কারণে মক্কার মুশরিকরা পারসিকদের বিজয়ের খবর শুনে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়। এই অবস্থায় কোরআন ভবিষ্যদ্বাণী করে, ‘আগামী কয়েক বছরের মধ্যে রোমকরা পারসিকদের উপর বিজয়ী হবে।’ সন্দেহ নেই কোরআনের ঘোষণা নিয়ে মুশরিকরা বহু ঠাট্টা-বিদ্রুপ করেছে। কিন্তু ঠিক নয় বছরের মাথায় কোরআনের এই ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ হয়েছে। রোমকরা পারসিকদের সম্পদ ও ক্ষমতা নিজেদের পায়ের তলে নিয়ে আসে। তারা পারস্য সাম্রাজ্যের রাজধানীতে নিজেদের পতাকা উড্ডীন করে।
উল্লিখিত ভবিষ্যদ্বাণী ছাড়াও সূরা রুমে যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো:
১. হিযবুর রহমান ও হিযবুশ শাইতানের মাঝে আদিকাল থেকে যে যুদ্ধ চলে আসছে, সূরা রুমে তার বাস্তবতা বলা হয়েছে। বিচার দিবস পর্যন্ত হক-
বাতিলের লড়াই অব্যাহত থাকবে। ওইদিন শুধু এই যুদ্ধেরই পরিসমাপ্তি ঘটবে না; বরং তখন উভয় দলকেই ভিন্ন ভিন্ন ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, যেদিন কেয়ামত সংঘটিত হবে সেদিন তারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে যাবে। মুমিনদের জান্নাতে ঠিকানা দেওয়া হবে। কাফেরদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
আল্লাহ তায়ালার অদ্বিতীয়তা ও বড়ত্ব
২. এ সূরায় আল্লাহ তায়ালা স্বীয় একত্ব ও বড়ত্বের কথা উল্লেখ করার পাশাপাশি তার দলিল-প্রমাণও উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা মৃত থেকে জীবিতকে সৃষ্টি করেন। তিনি স্বীয় ক্ষমতা-বলে বীর্য
থেকে মানুষ সৃষ্টি করেন। ডিম থেকে বাচ্চা, বীজ থেকে গাছ সৃষ্টি করেন। এর বিপরীতও ঘটে থাকে (যেমন জীবিত মুরগী থেকে ডিম)। (১৯)
তিনি মানুষকে প্রাণহীন মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। আদম আলাইহিস সালামকে তিনি সরাসরি মাটি থেকে আর অন্যান্য মানুষকে পরোক্ষভাবে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। কেননা মানুষের যাবতীয় খাদ্য-খাবার মাটি থেকে উৎপন্ন হয় (খাবার থেকে বীর্য তৈরি হয়)। (২০)
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার এমন মহব্বত ও সম্পর্ক তৈরি করে দেন যে, মনে হয় তারা একে অপরের শরীরের অংশ। অথচ বিয়ের পূর্বে তাদের মধ্যে কোনো ধরনের পরিচয়-পরিচিতিই ছিলো না।
আসমান, জমিন এবং এই দুইয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু তিনি সৃষ্টি করেছেন। তাদেরকে বহু ভাষা এবং বর্ণ-বৈচিত্র্য প্রদান করেছেন। কারও ভাষা আরবি। কারও ভাষা ফারসি, ইংরেজি, উরদু, জাপানিজ। কেউ কালো, আবার কেউ লাল। (২২)
দিবারাত্রিতে ঘুমের মাধ্যমে মানুষের শান্তির ব্যবস্থা করেন। মানুষের দেহ এক মেশিনের ন্যায়। যদি ব্যস্ততার দরুন কখনো বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ না ঘটে তা হলে এ মেশিনে সমস্যা দেখা দেয়। (২৩)
আকাশে বিজলি চমকায়। এতে মানুষের মনে ভীতির সঞ্চার হয় আবার আশাও জাগে। এরপর বৃষ্টি বর্ষিত হয়। মৃত জমিন জীবিত হয়ে ওঠে। (২৪)
আসমান-জমিনের সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা আল্লাহ তায়ালার অস্তিত্বের জীবন্ত প্রমাণ। আকাশ নামক ছাদ কোনো খুটি ছাড়াই দাঁড়িয়ে আছে। তাতে গ্রহ-নক্ষত্র প্রদক্ষিণ করছে। কোথাও কোনো সংঘর্ষ বাঁধছে না। বিরোধ লাগছে না। তেমনিভাবে পৃথিবীও ক্রমাগত দুলছে। কিন্তু পৃথিবীতে বসবাসকারী মানুষ তা টেরও পাচ্ছে না।
এর মাধ্যমে জানা যায় যে, আল্লাহর চিরন্তন রীতি হচ্ছে সব সময়ই তিনি হককে বাতিলের বিপরীতে সাহায্য করেন। (৪৭) কোথাও যদি হকপন্থিরা পরাজিত হয় তা হলে তাদেরকে নিজেদের ব্যাপারে হিসাব-নিকাশ করা উচিত। দেখা উচিত যে, তারা এমন কোনো পথ অবলম্বন করেছে কি না, যার কারণে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হচ্ছেন এবং পরীক্ষা নিচ্ছেন?
এ সূরায় আল্লাহ তায়ালার মহত্ত্ব ও তার কুদরতের উপর সাক্ষ্যদানকারী কিছু তাকবিনি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। (১৯-১২৭; ৪৬-৫০)
সূরার শেষে সেসব কাফেরের আলোচনা করা হয়েছে, যারা মৃত মানুষের মতো। তারা কোনো আয়াত শোনে না। তার প্রতি লক্ষ করে না। তা নিয়ে চিন্তাভাবনাও করে না। আর তা গ্রহণও করে না। বলা হয়েছে, আমি এ কোরআনে মানুষের জন্য সর্বপ্রকার দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছি। আপনি যদি তাদের কাছে কোনো নিদর্শন উপস্থিত করেন তা হলে কাফেররা অবশ্যই বলবে, তোমরা সবাই মিথ্যাবাদী। (৫৮)
সূরা লোকমান
এটি মক্কি সুরা। আয়াত সংখ্যা: ৩৪। রুকু সংখ্যা: ৪
সূরার শুরুতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চিরস্থায়ী মুজিজা- হেদায়েতের ঐশীবাণী কোরআনের মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে। কোরআনের ব্যাপারে মানুষ দুই দলে বিভক্ত হয়ে গেছে। একদল তার উপর ঈমান এনেছে। এর প্রতিটি কথা সত্যায়ন করেছে। দ্বিতীয় দল এ কোরআন অস্বীকার করেছে। এর আয়াত শুনে অহংকারে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। অবস্থাটা এমন যেন তারা কিছুই শুনতে পায়নি। (২-৭)
কুদরত ও একত্ববাদের চারটি দলিল
এরপর আল্লাহ তায়ালা স্বীয় কুদরত ও একত্বের চারটি দলিল উল্লেখ করেছেন।
প্রথম দলিল: তিনি খুটিবিহীন আকাশ সৃষ্টি করেছেন; অথচ তাতে উজ্জ্বল নক্ষত্র, চন্দ্র ও সূর্য রয়েছে। মহাকাশ এতটাই বিশাল বিস্তৃত যে, তার তুলনায় আমাদের পৃথিবী সামান্য ধূলিকণার মতো।
দ্বিতীয় দলিল: আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর স্থিরতা দানের জন্য এতে অসংখ্য পাহাড় স্থাপন করেছেন। যদি এসব পাহাড় না থাকত তা হলে বাতাস ও পানির কারণে পৃথিবী দোল খেতে থাকত।
তৃতীয় দলিল: পৃথিবীতে তিনি অসংখ্য চতুষ্পদ জন্তু, কীট-পতঙ্গ, শূন্য ও সমুদ্রে বসবাসকারী হাজার হাজার প্রাণী সৃষ্টি করেছেন, যাদের আকার-আকৃতি ও বৈশিষ্ট্য আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। মানুষ তো এতটাই দুর্বল যে, তারা মাছি ও পিপীলিকার মতো প্রাণী পর্যন্ত বানাতে পারবে না। সুতরাং তারা কীভাবে বুদ্ধিসম্পন্ন বাকশক্তির অধিকারী মানুষ তৈরি করতে পারবে?
চতুর্থ দলিল: তিনি আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন, যার মাধ্যমে অনেক মূল্যবান জিনিস উৎপন্ন হয়। (১০)
বৃষ্টি আল্লাহ তায়ালার এক আশ্চর্য ও বড় কুদরত
আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষিত হওয়া এক আশ্চর্য বিষয়। আল্লাহ তায়ালার অনেক বড় কুদরত। কিন্তু মানুষ এ ব্যাপারে কোনো চিন্তাভাবনা করে না। নদী-নালা ও সমুদ্রে যেসব পানি রয়েছে, তাও বৃষ্টির মাধ্যমে আকাশ থেকে বর্ষিত হয়। এর মাধ্যমে যে ফুলফল, শস্য ও গাছগাছালির জন্ম হয় তার বিবরণ দিতে গেলে হাজার পৃষ্ঠার প্রয়োজন হবে।
এ ছাড়াও সূরা লোকমানে যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে, নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো:
হযরত লোকমান হাকিম ও পাঁচটি অসিয়ত
১. হযরত লোকমান হাকিম নবী ছিলেন না বটে; কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাকে হেকমত ও প্রজ্ঞা দান করেছিলেন। তার কথামালা শিক্ষা ও উপদেশের অফুরন্ত ভাণ্ডার হয়ে রয়েছে। তার বাণীসমূহ মুক্তার ন্যায়। তার নির্দেশনাগুলো উপদেশ এবং তার নীরবতা গভীর চিন্তার খোরাক হয়ে আছে।
কোরআনে আল্লাহ তায়ালা তার পাঁচটি অসিয়তের কথা উল্লেখ করেছেন, যা তিনি তার ছেলেকে করেছিলেন। আকিদা-বিশ্বাস, ইবাদত-বন্দেগি, আখলাক- চরিত্রসহ সর্বদিক থেকে এটি সমৃদ্ধতর মহা মূল্যবান অসিয়ত।
প্রথম অসিয়ত: হে বৎস, আল্লাহর সাথে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করবে না। জেনে রেখো, শিরক অত্যন্ত বড় জুলুম। ধ্বংসই এর পরিণতি। এরপর আল্লাহ তায়ালা পিতামাতার সাথে সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছেন।
দ্বিতীয় অসিয়ত: আখেরাত সম্পর্কে, যার সারমর্ম হচ্ছে, কোনো জিনিসই আল্লাহর জ্ঞানের বাইরে নয়। গুনাহ যতই সামান্য হোক এবং তা যতই গোপন জায়গায় করা হোক কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তা সামনে নিয়ে আসবেন।
তৃতীয় অসিয়ত: আল্লাহর প্রতি মনোনিবেশ সম্পর্কে। তার প্রতি মনোনিবেশ করার কয়েকটি দিক রয়েছে। অর্থাৎ ভালোভাবে নামাজ আদায় করবে। মানুষকে কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে। তাদেরকে মন্দ কাজ করতে বারণ করবে। বিপদে ধৈর্য ধারণ করবে।
চতুর্থ অসিয়ত: তিনি তার সন্তানদের অহংকার ও গর্ব করতে নিষেধ করেন।
পঞ্চম অসিয়ত: ছেলেকে তিনি উত্তম চরিত্রের প্রতি মনোনিবেশ করেন। অর্থাৎ মধ্যমপন্থা অবলম্বন করবে। নিচু কণ্ঠে কথা বলবে। (১২-১৯)
২. মুশরিকদের প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে যে, একত্ববাদের দলিল প্রত্যক্ষ করার পরও তারা শিরকের উপর অবিচল ছিল। অথচ যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হয় যে, আসমান ও জমিনের স্রষ্টা কে, তা হলে তারাও বলবে ‘আল্লাহ তায়ালা তা সৃষ্টি করেছেন’। সূরার শেষে বলা হয়েছে, পাঁচ বিষয়ে জ্ঞান শুধু আল্লাহ তায়ালার নিকট রয়েছে। কেয়ামত কখন সংঘটিত হবে? কখন কোথায় বৃষ্টি বর্ষিত হবে? গর্ভস্থ সন্তানের গুণাবলি কেমন হবে? মানুষ আগামীকাল কী করবে? কখন কোথায় মৃত্যু হবে? এ পাঁচ বিষয়ের জ্ঞান শুধু আল্লাহ তায়ালার নিকট রয়েছে। এ পাঁচ বিষয়কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অদৃশ্য ভাণ্ডারের চাবি বলে আখ্যা দিয়েছেন।
সূরা সাজদা
এটি মক্কি সূরা। আয়াত সংখ্যা: ৩০। রুকু সংখ্যা: ৩
কোরআন সত্য ও আল্লাহ এক
এ সূরার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো:
১. সুরার শুরুতে কোরআন সত্য হওয়ার বিষয়টি বর্ণনা করা হয়েছে, যা মুজিজা হওয়াটা অত্যন্ত সুস্পষ্ট, যা সত্য হওয়ার উজ্জ্বলতর প্রমাণ। এর উপস্থাপনা- শৈলী মানুষের সাধারণ কথাবার্তা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। কিন্তু এসব সত্ত্বেও মক্কার কাফেররা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর অপবাদ আরোপ করে যে, তিনি নিজে তা বানিয়েছেন! (১-৩)
২. সুরাটিতে আল্লাহ তায়ালার একত্ব এবং তার অসীম কুদরতের দলিল বর্ণনা করেছে। অর্থাৎ তিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। তিনিই সকল জিনিসের ব্যবস্থা করে থাকেন। তারা কেন সামান্য এক ফোঁটা পানির ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করে না! তিনি কীভাবে মাটি থেকে পানি এবং বীর্য থেকে জমাট রক্ত তৈরি করেছেন। জমাট রক্ত থেকে মাংসপিণ্ড তৈরি করেছেন। মাংসপিণ্ড থেকে হাড্ডি ইত্যাদির ধাপ শেষে কীভাবে তা এক চমৎকার ও সুঠাম মানুষে পরিণত হয়!!
অপরাধী ও মুমিনদের অবস্থা
৩. সূরায় অপরাধী ও মুমিনদের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে। অপরাধীরা কেয়ামতের দিন মাথানত করে দাঁড়িয়ে থাকবে। তাদের চেহারায় লাঞ্ছনা ও অপদস্থতার চিহ্ন লেগে থাকবে। তারা আকাঙ্ক্ষা করবে, হায় যদি আমরা পুনরায় দুনিয়ায় ফিরে যেতে পারতাম তা হলে আমরা নেককাজ করতাম!
অপরদিকে মুমিনদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, দুনিয়াতে তারা আল্লাহ তায়ালার সামনে মাথা নত করে ছিলো। রাতে তাদের পিঠ বিছানা থেকে পৃথক ছিলো। তারা আল্লাহর আজাবের ভয় করত। তার রহমতের আশা রাখত। এ ছাড়াও তারা আল্লাহপ্রদত্ত ধনসম্পদকে তার মর্জি মোতাবেক ব্যয় করত। তাদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, কেউ জানে না তাদের কৃতকর্মের জন্য চক্ষু শীতলকারী কী প্রতিদান লুক্কায়িত রয়েছে। (১৬-১৭)
তাদের ইবাদত ছিলো লৌকিকতামুক্ত। তারা মানুষদের দেখানোর জন্য ইবাদত করত না। তারা গোপনে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করত। তাই আল্লাহ তাদের জন্য এমন নেয়ামত লুক্কায়িত রেখেছেন, যা কারো কখনো কল্পনাতেও আসেনি। তেমনিভাবে জান্নাতের নেয়ামতও কেউ কখনো কল্পনা করতে পারবে না। দুনিয়ার নেয়ামত শুধু শাব্দিক দিক দিয়েই আখেরাতের নেয়ামতের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। কিন্তু এই দুয়ের মাঝে আকাশ-পাতালের চেয়েও বেশি ব্যবধান রয়েছে।
সূরার শেষে মুসা আলাইহিস সালামকে তাওরাত দেওয়ার কথা আলোচিত হয়েছে। এর মাধ্যমে ইঙ্গিত করা হয়েছে, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও হযরত মুসা আলাইহিস সালামের রিসালাতের মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে।
সুরা আহযাব
সূরাটি মাদানি। আয়াত সংখ্যা: ৭৩। রুকু সংখ্যা: ৯
এ সূরায় তিনটি বিষয়ের আলোচনা করা হয়েছে: ১. সামাজিক নীতি, ২. শরয়ি বিধান এবং ৩. বিভিন্ন যুদ্ধের বর্ণনা। উদাহরণত গাজওয়ায়ে আহযাব, গাজওয়ায়ে বনু কুরাইজা এবং এই যুদ্ধ-দুটোয় মুনাফিকরা যে কর্মপন্থা অবলম্বন করেছিল, সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এ সুরায় যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচিত হয়েছে, নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো:
১. প্রথম দুই আয়াতে নবীর মাধ্যমে উম্মতকে চার বিষয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে যা সফলতা ও সৌভাগ্যের মাধ্যম।
প্রথমত, আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করো।
দ্বিতীয়ত, কাফের ও মুনাফিকদের অনুসরণ কোরো না।
তৃতীয়ত, আল্লাহর ওহীর অনুসরণ করো।
চতুর্থত, আল্লাহর উপর ভরসা করো।
লক্ষণীয় একটি বিষয়
এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, কোরআনের কোথাও আল্লাহ তায়ালা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে (হে মুহাম্মদ) বলে সম্বোধন করেননি। এখানেও তাকে یا ایها النبي (হে নবী) বলে সম্বোধন করেছেন। কিন্তু অন্যান্য নবীকে তিনি یا آدم ) হে আদম (یا نوح ) হে নুহ (یا موسی ) হে মুসা (یا عیسی ) হে ঈসা (یا زکریا ) হে জাকারিয়া বলে সম্বোধন করেছেন।
২. জাহেলিযুগের কিছু আচার-প্রথা ও সংস্কৃতি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে, যার কিছু যৌক্তিকভাবেই অগ্রহণযোগ্য ছিলো। কিছু শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে খারাপ ছিলো। ৪নং আয়াতে জাহেলিয়াতের তিনটি ভ্রান্ত ধারণা খণ্ডন করা হয়েছে। তাদের ধারণা ছিলো- কিছু লোকের হয়তো দুটি অন্তর রয়েছে। এ ধারণার অপনোদনে বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা কোনো মানুষের মধ্যে দুটি অন্তর সৃষ্টি করেননি। অন্তর তো একটাই হয়। হয়তো সেখানে ঈমান থাকবে, নাহয় কুফর। এক অন্তরে ঈমান ও কুফর একত্র হতে পারে না। এর দ্বারা সেই মুনাফিকদের প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে, যারা ঈমান ও কুফরের মাঝে তৃতীয় স্তর-নিফাক অবলম্বন করে থাকে।
একটা জাহেলিপ্রথা ছিল যে, যদি কেউ স্বীয় স্ত্রীকে انت على كظهر امي ) আমার জন্য তুমি আমার মায়ের পিঠের মতো) বলে তা হলে এতে তার স্ত্রী চিরকালের জন্য হারাম হয়ে যেত। কোরআন বলেছে, এক্ষেত্রে কাফফারা দেওয়ার দ্বারা তার স্ত্রী হালাল হয়ে যাবে।
ইসলাম আসার পূর্বে পালকপুত্র প্রকৃত পুত্রের পর্যায়ভুক্ত ছিল। কোরআন এ ভুল প্রথা বাতিল ঘোষণা করেছে। (৪) পালকপুত্রের ধারণা খণ্ডন করার পরিপ্রেক্ষিতে বলা হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোটা উম্মতের পিতা। আর তার সম্মানিত স্ত্রীগণ গোটা উম্মতের মাতা। তাদের আদব-সম্মান করা ওয়াজিব। তাদেরকে বিয়ে করা হারাম।
গাজওয়ায়ে আহযাব ও গাজওয়ায়ে বনু কুরাইজা
এরপর উনিশটি আয়াতে (৯-২৭) গাজওয়ায়ে আহযাব এবং গাজওয়ায়ে বনি কুরাইজার বিস্তারিত বিবরণ উল্লেখ করা হয়েছে। গাজওয়ায়ে আহযাব পঞ্চম হিজরির শাওয়াল মাসে সংঘটিত হয়েছে। এ সময় দশ থেকে পনেরো হাজার মুশরিক যোদ্ধা মদিনা ঘেরাও করে ফেলে। এতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের যোদ্ধারাও অংশগ্রহণ করেছিল। মুসলমানদের সাথে চুক্তিবদ্ধ ইহুদিগোষ্ঠী বনু নাজিরের নেতৃবৃন্দ ও বনু কুরাইজাও এতে অংশগ্রহণ করেছিল। এর মাধ্যমে তারা মুসলমানদের সাথে কৃত- কেউ কারও শত্রুকে সাহায্য না করার চুক্তি-সুস্পষ্টভাবে ভঙ্গ করেছিল। এ চুক্তি ভঙ্গ করে তারা আবু সুফিয়ানকে সাহায্য করেছিল।
মুসলমানদের সংখ্যা ছিলো তখন মাত্র তিন হাজার। হযরত সালমান ফারসি রাদিয়াল্লাহু আনহুর পরামর্শের ভিত্তিতে শত্রুপক্ষ আক্রমণের সম্ভাব্য দিক মদিনার উত্তর-পশ্চিমে পরিখা খনন করা হয়। এ কারণে একে ‘গাজওয়ায়ে খন্দক’ (পরিখার যুদ্ধ)-ও বলা হয়। আর যেহেতু বিভিন্ন গোত্র ও দলের সমন্বয়ে কাফেরদের বাহিনী গঠিত হয়েছিল এ কারণে একে ‘গাজওয়ায়ে আহযাব’ বলা হয়।
তারা দীর্ঘ এক মাস মদিনা ঘেরাও করে রাখে। এরপর নুয়াইম বিন মাসউদ গাতফানির প্রচেষ্টায় ইহুদি-কুরাইশিও গাতফানি বাহিনীর মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয়। আল্লাহর পক্ষ থেকে ভয়ঙ্কর তুফান ধেয়ে আসে। এতে তাদের তাঁবু উলটে যায়। ঘোড়া, উট প্রভৃতি প্রাণী দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করে। তাদের মানসিক দৃঢ়তায় ফাটল ধরে। এরপর কুরাইশ, গাতফানি এবং অন্যান্য গোত্র নিজেদের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার পূর্বেই পলায়নের পথ ধরে।
আবু সুফিয়ান এবং তার সহযোগীরা চলে যাওয়ার পর মুসলমানগণ বন্ধু কুরাইজা ঘেরাও করেন। তাদেরকে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করেন। আল্লাহ তায়ালা সূরাটিতে এই দুই যুদ্ধের অবস্থা ও দৃশ্য বর্ণনা করেছেন। মুসলমানদেরকে সুসংবাদ শোনানো হয়েছে যে, অচিরেই তাদের আরও বড় বিজয় অর্জিত হবে। মুসলমানরা শুধু রোম ও পারস্যই নয়; বরং বিশটি সাম্রাজ্য এবং হাজার হাজার শহর জয় করেছেন। ইনশাআল্লাহ যখন কোরআনের সাথে তাদের সম্পর্ক তৈরি হয়ে যাবে এবং তাদের অন্তরে ঈমান প্রোথিত হবে তখন তারা গোটা বিশ্ব জয় করবেন।
আল্লাহ তায়ালার ভবিষ্যদ্বাণী অবশ্যই পূর্ণ হবে যে, আমি শেষ রাসূলকে প্রেরণ করেছি, যাতে ইসলামকে অন্যান্য সকল ধর্মের উপর বিজয়ী করতে পারি। এ বিজয় অবশ্যই হবে। কোনো মুমিনের- এতে সন্দিহান হওয়া উচিত নয়।
বাহ্যত, অবস্থা এখন প্রতিকূল হলেও যখন ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবায়িত হওয়ার সময় ঘনিয়ে আসবে তখন অবস্থা অনুকূল হয়ে যাবে। এমন ব্যক্তি তৈরি হয়ে যাবে, আমল-আখলাকের দিক থেকে যারা প্রথম শতাব্দীর মুসলমানদের অবস্থা স্মরণ করিয়ে দেবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, ঈমান-আমল, আখলাক-চরিত্র ও লেনদেনের দিক থেকে বর্তমান যুগের মুসলমানদের মধ্যে বিশ্ববিজেতারদের সেসব গুণ নেই। কিন্তু ইসলাম ও কোরআনের মধ্যেও কী সে যোগ্যতা নেই? কাবার রবের শপথ, এতে গোটা বিশ্ব এবং বিশ্ববিজেতাদের জয় করার পুরোপুরি যোগ্যতা-গুণ রয়েছে। স্থান ও সময়ের মালিকের শপথ, বিশ্ব অচিরেই এ চিত্র পরিলক্ষ করবে।
চলবে ইনশাআল্লাহ....
লেখক: আলেম ও ওয়ায়েজ; খতিব, বায়তুল আমান জামে মসজিদ, মিরপুর-০১।
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়