কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের খবরে নড়াইলে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ছাত্র-জনতার বিজয় মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (৫ আগস্ট) বিকালে শহরের পুরাতন বাস টার্মিনাল, চৌরাস্তা, রূপগঞ্জ, দুর্গাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনকারী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে মিছিল বের করেন। এ সময় তারা আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলীয় জোট সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন।
এদিকে, জাতীয় সংসদের হুইপ নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজার শহরের বাড়ি ভাঙচুর ও আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবাস চন্দ্র বোস, সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নিলু, জেলা আওয়ামী কার্যালয়েও আগুন দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা “মার্চ টু ঢাকা” কর্মসূচিতে ঢাকায় ছাত্রজনতার ঢল নামে। এ উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। দুপুরে একটি সামরিক হেলিকপ্টারে চড়ে ভারতের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। খবরে সারা দেশে আনন্দ উল্লাসে মাতেন সাধারণ জনসাধারণ।
এরপর দেশের বিভিন্ন জায়গায় থানা ও সরকারি অফিস ভবনে অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
সোমবার বেলা আড়াইটার দিকে গণভবন থেকে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরপর গণভবনে প্রবেশ করেন আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার একটি দল।
এ সময় ছাত্রদের একটি অংশ সংসদ ভবনের গেট ভেঙে ভেতর ঢুকে পড়ে। বিভিন্ন ভিডিওতে সংসদ ভবনের ভেতরে তাদের নাচানাচি করে উল্লাস প্রকাশ করতে দেখা যায়। দেখা গেছে সংসদ ভবনের চেয়ারে বসে ধূমপান করতেও।
এদিকে, গণভবনে প্রবেশের পরে আন্দোলনকারীদের অনেককে গণভবনের বিভিন্ন জিনিস লুপপাট করতে দেখা গেছে। সেখানে থাকা সব জিনিস যে যেভাবে পারছেন নিয়ে নিচ্ছেন। অন্যদিকে সেখানে প্রবেশের পর আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার একটি অংশ নামাজ আদায় করেন।
এর আগে শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপর লাখো মানুষ রাস্তায় নেমে আসা। তারা উল্লাস প্রকাশের পাশাপাশি বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালায়।
রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা।
সোমবার বিকেল পৌনে ৪টার দিকে সেখান দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। এ সময় বিক্ষোভকারীদের নানা স্লোগান দিতে দেখা যায়।
এদিকে রাজধানী ঢাকার বিজয় সরণিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হচ্ছে। সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে একদল মানুষকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যকে হাতুড়ি দিয়ে ভাঙার চেষ্টা করতে দেখা গেছে।
এদিকে এই পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করা হবে বলে জানিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
সোমবার বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন সেনাপ্রধান।
সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, “রাজনৈতিক ক্রান্তিকাল চলছে। একটি অন্তবর্তী সরকার গঠন করা হবে। সব হত্যার বিচার হবে। সেনাবাহিনীর ওপর আস্থা রাখেন। আমরা রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি।”
জনগণের উদ্দেশে সেনাপ্রধান বলেন, “দেশে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখেন। আপনারা আমার ওপর আস্থা রাখেন, একসাথে কাজ করি। দয় করে সাহায্য করেন। মারামারি সংঘাত করে আর কিছু পাব না। সংঘাত থেকে বিরত হোন। সবাই মিলে সুন্দর দেশ গড়েছি।”
কোন কোন রাজনৈতিক দল সঙ্গে বৈঠক করেছেন—সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান বলেন, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের ইসলামীর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। শিক্ষক আফিস নজরুল ও জোনায়েত সাকিও বৈঠকে ছিলেন।
সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, “আমরা এখন বঙ্গবভনে যাব। সেখানে অন্তবর্তী সরকার গঠনের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হবে। তিনি ছাত্রদের শান্ত হওয়ার পরামর্শ দেন।”
সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, শেখ হাসিনা বেলা আড়াইটায় বঙ্গভবন থেকে একটি সামরিক হেলিকপ্টারে উড্ডয়ন করেন। এ সময় তার ছোট বোন শেখ রেহানা সঙ্গে ছিলেন।
জানা গেছে, শেখ হাসিনা যাওয়ার আগে একটি ভাষণ রেকর্ড করে যেতে চেয়েছিলেন। তিনি সে সুযোগ পাননি।
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়