Tuesday, August 6

আগেই পালিয়েছেন কাদের, এবার সপরিবারে উধাও ছোট ভাই মির্জা

 

বড় ভাই ওবায়দুল কাদের দেশে আছেন নাকি পালিয়েছেন এখনো জানা যায়নি। তবে ধারনা করা হচ্ছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিনই তিনি পালিয়ে সিঙ্গাপুরে পাড়ি দিয়েছেন। আবার ভারতে গেছেন বলেও খবর আসছে।

এদিকে কাদেরের ছোটভাই নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার মেয়র কাদের মির্জাও সপরিবারে উধাও হয়েছে। সোমবার বসুরহাট পৌরসভার ১নম্বর ওয়ার্ড ছোট রাজাপুরের বাড়িতে বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা চালায়। এদিন ওই বাড়িতে কয়েক কোটি টাকাও পাওয়া যায়। হামলাকারী লোকজন এসব টাকা ভাগাভাগি করে নিয়ে যায়।

কাদের মির্জাকে সবশেষ দেখা গেছে সোমবার দুপুরে। ওই সময় তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ছিলেন। দুপুর ১২টার পর সেই কার্যালয় ছেড়ে যান নানা কারণে আলোচিত কাদের মির্জা। যদিও তিনি সপরিবারে কোথায় গেছেন তা জানেন না দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

প্রসঙ্গত, আন্দোলনকারীদের ঠেকাতে ‘ছাত্রলীগই যথেষ্ট’ দম্ভোক্তি করে ছাত্রদের বিক্ষুব্ধ করেছিলেন আওয়ামী লীগের বর্তমানে পলাতক সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ওই বক্তব্যের পর দল ও দলের বাইরে প্রচণ্ড তোপের মুখেও পড়েন বর্ষীয়ান এ রাজনীতিক।

শেষ মুহূর্তে দৃশ্যপট থেকে তাকে সরিয়ে নেওয়া হয়। তাতেও আন্দোলনের তীব্রতা কমেনি, বরং নির্বিচারে হত্যা ও দমন-পীড়নের ফলে ছাত্রদের আন্দোলন শেখ হাসিনার সরকার পতনের আন্দোলনে পরিণত হয়।

সবশেষ সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা গোপনে দেশ ছাড়েন। ওবায়দুল কাদেরও দেশ ছেড়েছেন বলে খবর আসে। তবে কোন দেশে গেছেন তা কেউ নিশ্চিত করতে পারেননি। ওবায়দুল কাদেরের পলায়নের পর আব্দুল কাদের মির্জাও পালিয়ে যান।

কোথায় যেতে পারেন কাদের মির্জা

কাদের মির্জার ঘনিষ্ঠ লোকজনের কাছ থেকে জানা যায়, কাদের মির্জা ও তার স্ত্রী সন্তানদের (এক ছেলে ও এক মেয়ে) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা রয়েছে। তিনি যে কোনো সময় দেশ ত্যাগ করতে পারেন। সেটি সম্ভব না হলে ওবায়দুল কাদেরের প্রিয়পাত্র ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীর সহযোগিতায় বিলোনিয়া সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাড়ি দিতে পারেন। তবে কেউ কেউ বলছেন তিনি ঢাকার উদ্দেশে গেছেন। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদী হাউজিংয়ে তার ফ্ল্যাট রয়েছে। সেখানেও কিছু দিন থাকতে পারেন। পরে সুবিধামতো সময়ে দেশ ত্যাগ করবে।

নিয়ে যেতে পারেননি কোটি কোটি টাকা ও স্বর্ণালংকার

কাদের মির্জা সপরিবারে (স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে) পালিয়ে গেলেও নিয়ে যেতে পারেননি বাড়িতে রাখা কোটি কোটি টাকা ও স্বর্ণালংকার। বিক্ষুব্ধদের দেওয়া আগুনে পুড়ে গেছে আলমিরা ভর্তি টাকা। তবে অগ্নিসংযোগের আগে ঘরে পাওয়া তিন বস্তা টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়ে গেছে বিক্ষুব্ধরা।

কাদের মির্জার বিরুদ্ধে যে-সকল অভিযোগ

ওবায়দুল কাদেরের পরিচয় ও দলীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে কাদের মির্জা নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে ধরাকে সরাজ্ঞান করতেন। কেউ তার কথার বাহিরে গেলে ধরে এনে বেঁধে রাখতেন পৌরসভা কার্যালয়ে। ঠিকাদাররা প্রত্যেক কাজে তাকে দিতে হতো ১০ পার্সেন্ট কমিশন। এ ছাড়া বসুরহাট পৌর এলাকায় জায়গা সম্পত্তি বেচা-কেনায়ও তাকে দিতে হতো কমিশন। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও প্রবাসীরা এলাকায় নির্বিঘ্নে বসবাসের জন্য চাঁদা দিতে হতো।

চাঁদ আদায়ের কৌশল হিসেবে এলাকায় তৈরি করেছেন ভীতিকর এক পরিস্থিতি। এ পরিস্থিতি তৈরির জন্য তার ছিল হেলমেট বাহিনী। তাদেরকে দিয়ে পুরো কোম্পানীগঞ্জে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। তার অত্যাচার নির্যাতন থেকে রেহাই পাননি প্রশাসনের লোকজনও। ওসির কক্ষে ঢুকে ওসিকে হুমকি প্রদানসহ গালমন্দ করা ছিল তার দুধ-ভাত। ফেসবুক লাইভে এসে দলের প্রেসিডিয়াম মেম্বার, এমপি মন্ত্রী, নোয়াখালীর এসপি, ডিসি ও চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজির বিরুদ্ধে বিষোদগার করতেন প্রায় সময়।

স্থানীয়ভাবে এসব কর্মকাণ্ডের বাহিরে দেশের ৬৪ জেলার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এবং মহাসড়কের প্রত্যেকটি ওজন স্কেল থেকে তাকে দিতে হতো নির্দিষ্ট পরিমাণ চাঁদা। তার এসব চাঁদা আদায়ের জন্য ছিল নির্দিষ্ট কয়েকজন লোক।

সূত্র: ঢাকাটাইমস


শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়