Thursday, June 20

কানাইঘাটে বন্যা কবলিত এলাকায় ইউএনও ফারজানা নাসরিনের বিরামহীন ছুটে চলা


নিজস্ব প্রতিবেদক :

য়েক দিন থেকে টানা ভারি বৃষ্টিপাত ও  উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দ্বিতীয় বারের মতো সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিদিন বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে সুষ্ঠুভাবে সরকারি বরাদ্দকৃত ত্রাণ সামগ্রী, নৌকা ও গাড়ি নিয়ে পানিবন্দি দুর্গম এলাকায় পৌঁছে দিচ্ছেন নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরিন।

সম্প্রতি উপজেলা নির্বাচনের সময় পাহাড়ি ঢলের কারনে কানাইঘাটে বড় ধরনের বন্যা দেখা দেয়। সে সময় ৫ জুনের নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন করার পাশাপাশি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বন্যা কবলিত এলাকার লোকজনদের নিজে গিয়ে সার্বিক খোঁজ-খবর সহ সরকারি ত্রাণ সামগ্রী বন্যা কবলিত এলাকার লোকজনদের কাছে পৌঁছে দেয়া সহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সার্বিক বিষয়টি সরকারের বিভিন্ন দপ্তরকে অবহিত করে বন্যা পরিস্থিতি সফলভাবে মোকাবেলা করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরিন। যার কারনে জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক মহল সহ সকল মহলের প্রশংসা কুড়ান ইউএনও ফারজানা নাসরিন। প্রথম দফার বন্যার রেশ কাটতে না কাটতেই টানা ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গত ৩দিন থেকে কানাইঘাট উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়। ঈদের ছুটিতে না গিয়ে কর্মস্থলে থেকে নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরিন বন্যা দেখা দেয়ার পর থেকে উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও পৌরসভায় মেয়রের মাধ্যমে প্রশাসনিক মনিটরিং করে বন্যা কবলিত এলাকার লোকজনদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়া সহ সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য পর্যাপ্ত পরিমান নৌকার ব্যবস্থা করেন। বন্যার মধ্যেও নির্বাহী কর্মকর্তা প্রতিদিন বন্যা কবলিত এলাকার লোকজনদের নৌকা নিয়ে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেয়া, তাদেরকে উদ্ধারে সহায়তা প্রদান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সুরমা ডাইকগুলো পরিদর্শন, ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা-ঘাট স্বচক্ষে দেখে তাৎক্ষণিক যাতে করে বন্যায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি না হয় এজন্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরকে বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি অবহিত করছেন। বন্যা দেখা দেয়ার পর থেকে উপজেলার ২৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেয়া পানিবন্দী পরিবারের সদস্যদের সরকারি বরাদ্দকৃত শুকনো খাবার, রান্না করা খাবার বিতরণ করে যাচ্ছেন। জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ের মাধ্যমে যাতে করে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার লোকজন সার্বক্ষণিক সরকারি ত্রাণ সামগ্রী পান এবং তাদের চিকিৎসার অবস্থা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরিন।

একজন নারী ইউএনও হিসেবে ফারজানা নাসরিন তার কর্মদক্ষতা, সততা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে দু’দফা বন্যা পরিস্থিতি সুষ্ঠুভাবে মোকাবেলা করে সর্বমহলের প্রশংসা পাচ্ছেন। বিশেষ করে বিরামহীন ভাবে রাত-দিন বন্যা দুর্গত এলাকায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে নিষ্ঠার সাথে কাজ করায় উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও  পৌরসভার মেয়র, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও সচেতন মহল নির্বাহী কর্মকর্তা এমন কাজের প্রশংসা করেছেন। এছাড়া টানা ভারি বর্ষনে পাহাড় ও টিলা ধসে যাতে করে জীবনহানি সহ কোন ধরনের ক্ষয়ক্ষতি না হয় এজন্য কানাইঘাট লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব, লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম এবং ৯নং রাজাগঞ্জ ইউনিয়নে পাহাড়ি টিলা এলাকায় বসবাসরত এলাকার লোকজনদের সরেজমিনে গিয়ে সাবধানে থাকার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরিন।

সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা নাসরিনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর নেয়া সহ সুষ্ঠুভাবে জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সরকারি প্রাপ্ত ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা সহ বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সবাইকে সাথে নিয়ে আন্তরিকতার সহিত কাজ করছেন। এটি তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে উল্লেখ করে বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষের পাশে বেসরকারিভাবে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে অনেকে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করায় তাদেরকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি আরো বলেন, দু’দফা বন্যায় সরকারি ভাবে এ পর্যন্ত ১০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পেয়েছি। এর মধ্যে ৬৬ মেট্রিকটন চাল বন্যা কবলিত এলাকার লোকজনদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে, ৩৪ মেট্রিকটন চাল আমাদের কাছে রয়েছে। এ পর্যন্ত ৭ হাজার ৬৪৯টি পরিবার পানিবন্দী আছে। ২৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেয়া ১১৬২ জন মানুষদের মাঝে ১ বেলা খাবার নিশ্চিত করার জন্য চাল, ডাল, আলু, তৈল, মসলা পৌঁছে দিয়েছি। পাশাপাশি শুকনো খাবার, পানি বিশুদ্ধকরন ট্যাবলেট, খাবার স্যালাইন, বিতরণ করা হচ্ছে। সরকারি বরাদ্দকৃত নগদ ১ লক্ষ টাকা শুকনো খাবার ও ৭৫ হাজার টাকার শিশুখাদ্য বরাদ্দ পেয়েছেন। দু’দফা বন্যায় সুরমা ডাইকে ১৮টি পয়েন্ট ভেঙে পানি প্রবেশ করছে। এসব ভাঙন কবলিত এলাকা জরুরী ভিত্তিতে মেরামত করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পানি কমার সাথে সাথে বাঁধের কাজ শুরু হবে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

 


শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়