Wednesday, September 20

সিলেট বিভাগের শ্রেষ্ঠ ফ্রিল্যান্সার কানাইঘাটের ফারজুক


মাহবুবুর রশিদ :

ফারজুক এখন তরুণদের আইডল। পড়ালেখার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং করে মাসে আয় করছেন লাখ টাকা। যোগাযোগ বঞ্চিত গ্রামে জন্ম নেওয়া ফারজুকের কাছে একসময় কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি ছিল অনেকটা স্বপ্নের মতো। যদিও ছোটবেলা থেকেই এসবের প্রতি প্রবল ঝোঁক ছিল তার। অর্থাভাবে কম্পিউটার কিনতে না পারা ছেলেটি এখন জাতীয় পর্যায়ে চারবারের নির্বাচিত সিলেট বিভাগের শ্রেষ্ঠ ফ্রিল্যান্সার।

ফ্রিল্যান্সিংয়ের শুরুটা কীভাবে হয়েছিল জানতে চাইলে ফারজুক বলেন,‘মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আমি। একসময় আমার স্বপ্ন ছিল নিজের একটা কম্পিউটার থাকবে,মানুষকে প্রশিক্ষণ দেব। বাবার কাছে কম্পিউটার কেনার বায়না ধরলে তিনি নানা শর্ত জুড়ে দিতেন-ক্লাসে ফাস্ট হতে হবে, এসএসসি ও এইচএসসিতে ভালো ফলালফল করতে হবে ইত্যাদি-ইত্যাদি। বাবার দেওয়া সব শর্তই আমি পূরণ করেছি । এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছি। এইচএসসি পাসের পর পরিবারের ইচ্ছে পূরণ করতে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দেই। চান্স না পেয়ে পরবর্তীকালে সিলেট এমসি কলেজের গণিত বিভাগে অনার্সে ভর্তি হই। পড়ালেখার পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং কোর্সেও ভর্তি হই। আমার ইচ্ছে ছিল ফ্রিল্যান্সিং করার। সেই থেকে শুরু করি কাজ।’


ফারজুকের গ্রামের বাড়ি সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের ছোটফৌদ গ্রামে। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে ফারজুক সবার বড়। ফ্রিল্যান্সিংয়ের টাকায় পুরো পরিবারকে তিনি এখন আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। ফ্রিল্যান্সিং করে শুধু নিজেই আয় করছেন না,বেকার যুবকদের কাজে লাগাতে গড়েছেন ‘ওয়ান ম্যান সল্যুশনস’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের। ইতোমধ্যে তার প্রতিষ্ঠান থেকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন দুই হাজারের বেশি যুবক। স্বাবলম্বী হয়েছেন ৫শ'র বেশি প্রশিক্ষণার্থী। এ ছাড়াও ফ্রিল্যান্সার ও ডিজিটাল মার্কেটার প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন তিনি । বর্তমানে আইসিটি অলিম্পিয়াড বাংলাদেশের মেন্টর এবং বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভলপমেন্ট সোসাইটি সিলেট জেলার চেয়ারম্যান হিসাবে কর্মরত রয়েছেন। তাছাড়া বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল সিলেটে ডিজিটাল মার্কেটিং ট্রেইনার হিসাবে সদ্য যোগদান করেছেন।


গত পাঁচবছরে ফ্রিল্যান্সিংয়ের পথচলায় আত্নপ্রত্যয়ী ফারজুক পেয়েছেন উদ্যোক্তা, প্রশিক্ষণার্থী অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষীর আন্তরিক সহযোগিতা ও নির্মল ভালোবাসা। সে সঙ্গে তার অর্জনের ঝুঁলিতে উঠেছে কিছু স্বীকৃতি।

সম্প্রতি বাংলাদেশের সবচাইতে বড় ফ্রিল্যান্সার কমিউনিটিতে পেয়েছেন সিলেট বিভাগের শ্রেষ্ঠ ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ড। ন্যাশনাল ইয়্যুথ ক্যারিয়ার কার্নিভাল-২০২৩ এ টেক ক্যাটাগরিতে স্বীকৃতি পেয়েছেন দেশসেরা শ্রেষ্ঠ ফ্রিল্যান্সার মেন্টর হিসেবে। ২০২১ সালে বেসিস আউটসোর্সিং অ্যাওয়ার্ড এ সিলেট জেলার শ্রেষ্ঠ ফ্রিল্যান্সার নির্বাচিত হন এবং ২০২২ সালে ইনফো-সরকার পেজ-৩ এর অধীনে বাংলাদেশের আইসিটি ডিভিশন থেকে সিলেট বিভাগের শ্রেষ্ঠ ফ্রিল্যান্সার অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন। ২০২২ সালের শেষের দিকে রাইজিং ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ডে  ৩য় বারের মতো সিলেট বিভাগের শ্রেষ্ঠ ফ্রিলান্সার নির্বাচিত হন ফারজুক।

ফারজুক বলেন, ‘ফ্রিল্যান্সিংয়ে আমার নিজের একটা টিম আছে,তাদেরকে নিয়ে কাজ করতে ভীষণ আনন্দবোধ করি। যখন জানতে পারি আমার কোনো শিক্ষার্থী ফ্রিল্যান্সিংয়ের টাকায় তাদের পরিবারকে আর্থিকভাবে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে, সত্যি তখন আত্নতৃপ্তি পাই।’


দেশের পিছিয়ে পড়া তরুণদের নিয়ে কাজ করতে চান স্বপ্নবাজ এই ফ্রিল্যান্সার। ইতোমধ্যে যাদের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ নেওয়ার অদম্য আগ্রহ থাকলেও আর্থিকভাবে অস্বচ্ছলতার কারণে প্রশিক্ষণ নিতে পারছেন না, তাদের স্কলারশিপ দিয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন ফারজুক।




শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়