ধর্ম ডেস্ক :
ঐতিহাসিক নানা ঘটনাপ্রবাহের নির্যাস পবিত্র আশুরা। আরবি ‘আশারা’ শব্দ থেকে আশুরা শব্দটি এসেছে। এর অর্থ দশম। মহররমের ১০ তারিখকে আশুরা বলা হয়। এই দিনটি ঐতিহাসিক নানা ঘটনার সাক্ষী। তাই আশুরার বিশেষ দিক হলো- এটি ধর্মীয় ঐক্য ও সম্প্রীতির প্রতীক।
হাদিস ও ইতিহাসের আলোকে দেখা যায়, বড় বড় প্রায় সব ধর্মের লোকেরা আশুরাকে সম্মান করে, শ্রদ্ধার চোখে দেখে। ইহুদিরা এই দিনে রোজা রেখে মুসা (আ.)-এর অনুসরণ করে। এছাড়া খ্রিস্টানরাও এই দিনকে মর্যাদার চোখে দেখে। খ্রিস্টানরা আশুরার দিনকে ঈসা (আ.)-এর জন্মদিন মনে করে। মুসতাদরাকে হাকেমে এসেছে, জাবির (রা.) জায়দ আম্মি থেকে বর্ণনা করেন, ‘ঈসা ইবনে মরিয়ম আশুরার দিনে জন্মগ্রহণ করেন।’ যদিও এ বর্ণনার সনদ দুর্বল বলেছেন আল্লামা জাহাবি (রহ.)। (হাকেম: ৪১৫৫)
অন্যদিকে মূর্তিপূজারি আরবদেরও দেখা গেছে যে, তারা এই দিনকে বিশেষ মর্যাদা দিত। জাহেলি যুগে মক্কার কাফিররা এই দিনে কাবার গিলাফ পরিবর্তন করত। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘সাহাবায়ে কেরাম রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার দিনে রোজা রাখত। সেদিন ছিল কাবাকে গিলাফ পরিধান করার দিন।’ যখন আল্লাহ রমজানের রোজা ফরজ করলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, যারা রোজা রাখতে চায়, তারা রোজা রাখবে, আর যারা ছেড়ে দিতে চায়, তারা যেন ছেড়ে দেয়। (বুখারি: ১৫৯২) আশুরার দিনের ঘটনা, আশুরা কবে ২০২৩, আশুরার ইতিহাস pdf
এসব বর্ণনার আলোকে বোঝা যায়, আশুরা আন্তঃধর্মীয় ঐক্যের প্রতীক। এই দিনটি ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের শিক্ষা দেয়।
তবে, এই দিনের মর্যাদাকে কেন্দ্র করে মুসলিম সমাজে কিছু কুসংস্কারের প্রচলন রয়েছে। কিছু মানুষ মহররম আসার সঙ্গে সঙ্গে হুসাইন (রা.)-এর শাহাদাতের স্মরণ করে মাতম-বিলাপ শুরু করেন এবং নিজ দেহে চাবুকের আঘাত ও ছুরিকাঘাত করেন। এটি গর্হিত আমল। রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘শোকে বিহ্বল হয়ে যে ব্যক্তি গাল চাপড়ায়, কাপড় ছেঁড়ে ও জাহেলি যুগের মতো আচরণ করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (সহিহ বুখারি: ১২৯৭)
এছাড়াও কালো পতাকা উত্তোলন, রাত জাগা, দুলদুল কবর ইত্যাদির আকৃতি বানানো, মর্সিয়া করা, পুঁথি পাঠ করা, হালুয়া-রুটির হৈ-হুল্লোড় করা, শোকযাত্রা বের করা, আতশবাজি ও আলোকসজ্জা করা—এসব কাজ সুন্নাহসমর্থিত নয়। প্রখ্যাত আধ্যাত্মিক সাধক আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) বলেন, ‘হুসাইন (রা.)-এর শাহাদাতের দিনটিকে যদি মাতম বা শোক দিবসের জন্য এতই গুরুত্ব দেওয়া হত, তবে সোমবার দিনটিকে আরো ঘটা করে শোক দিবস হিসেবে পালন করা বেশি বাঞ্ছনীয় ছিল। কারণ, এ দিন মহানবী মুহাম্মদ (স.) ইন্তেকাল করেছেন। এই দিনেই নবীর পর শ্রেষ্ঠ মানব প্রথম খলিফা আবু বকর (রা.) পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন।’ (গুনিয়াতুত তালেবিন: ২/৩৮) আশুরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য, আশুরা উপলক্ষে আলোচনা, আশুরার গুরুত্ব ও শিক্ষা
আল্লামা রুমি (রহ.) বলেন, ‘হুসাইন ইবনে আলী (রা.)-এর শাহাদাতের কারণে রাফেজিদের মতো এ দিনটিকে মাতমের জন্য নির্দিষ্ট করে নেওয়া, বস্তুত দুনিয়ায় নিজেদের পুণ্যময় সব কাজ বিনাশ করার নামান্তর।’ (ফতোয়ায়ে রহিমিয়া: ২/৩৪১-৩৪২) আশুরার দশটি ঘটনা, আশুরা সম্পর্কে হাদিস
মারেফুল কোরআন রচয়িতা মুফতি মুহাম্মদ শফি (রহ.) বলেন, ‘কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনা মুসলমানের অন্তরকে সব সময় ব্যথিত করে। শুধু ১০ মহররমকে শোকের জন্য বেছে নেওয়া বোকামি বৈ কিছুই নয়।’ (ইমদাদুল মুফতিয়িন: ১/৯৬)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রত্যেক বিষয়ে সুন্নাহকে গুরুত্ব দেওয়ার ও সুন্নতের ওপর অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন। সমগ্র মানবজাতিকে আশুরার গুরুত্ব উপলব্ধি করার এবং সম্প্রীতি বজায় রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়