এহসানুল হক জসীম :
একান্নবর্তী বা যৌথ পরিবারের সংস্কৃতি সুদীর্ঘকাল আমাদের এই বঙ্গদেশে বলবৎ ছিল। এখনো আছে, তবে আগের মতো নেই। প্রয়োজন ও গুরুত্ব থাকলেও হারিয়ে যাচ্ছে যৌথ পরিবার।
একান্নবর্তী পরিবার মানেই যে আদর্শ পরিবার, সেটা কিন্তু নয়। তবুও এমন পরিবারের আলাদা গুরুত্ব ছিল। এমন পরিবারে সন্তানের জন্ম ও বড় হওয়া একটি ভাল বিষয় ছিল; কিন্তু বর্তমান সময়ে সেটা আর নেই। এখন একান্নবর্তী পরিবারে বসবাস ও যোগসূত্র থাকা মানেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যন্ত্রণা ভোগ করা। একান্নবর্তী পরিবারের সাথে থাকা ও সন্তান বড় করার মধ্যে ভাল দিকের চাইতে এখন মন্দ দিক বেশি, যেটা এই কয়েক বছর আগেও এখনকার মতো মারাত্মক পর্যায়ে ছিল না। শুধু একান্নবর্তী পরিবার নয়, গ্রামে এখন একই বাড়ির অন্যান্য পরিবার এবং পাড়া-প্রতিবেশির সাথে অনেকের জন্য শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলা দিন দিন কঠিন হয়ে যাচ্ছে, যা আগে এমনতর পর্যায়ে ছিল না। তাইতো করিম গেয়ে গেছেন, ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম...’।
খেয়াল করে দেখবেন, অনেকে একান্নবর্তী পরিবার থেকে কেবলই বেরিয়ে আসছে না, বরং তার বাড়ির বা পাশাপাশি অন্যান্য পরিবার থেকে দুরে চলে যাচ্ছে অনেক বেশি বিষিয়ে উঠার কারণে। সে জানে যৌথ পরিবারে সন্তানের লালন-পালনের আলাদা গুরুত্ব, তবুও চরম বিরক্তি ও দুর্বিষহ অবস্থা থেকে মুক্ত থাকতে পরিবার-বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ দুরত্বে চলে যায়। কেউ হয়তো কর্মব্যস্ততা কিংবা বাস্তবিক কারণেই দুরে চলে যায়, কিন্তু সময়-সুযোগে পরিবার বা বাড়ির সাথে নিয়মিত যোগাযোগও রাখতে চায়না সেই চরম বিরক্তি থেকে।
আগের একান্নবর্তী পরিবারে বড় ভাইকে যতটা মান্য করা হতো এখন ততটা নেই, বরং তার উল্টোটা। এখনকার একান্নবর্তী পরিবারে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বড় ভাইকে চরম অবজ্ঞা করা হয়। মুরব্বীকে বা বড়কে মান্য করার সংস্কৃতি দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে যৌথ পরিবার আগের চাইতে এখন আরো চরম বৈষম্যের হয়ে উঠেছে। পরিবারের ভেতরে মন কষাকষি, মনোমালিন্য, ক্ষোভ-বিক্ষোভ, বৈরিতা, বৈষম্য, দুঃখ-হতাশা, অমানবিকতা এখনকার দিনে চরম আকারে বিরাজ করে। ফলে এসব বর্তমান সময়ের একান্নবর্তী পরিবারগুলোতে খুবই পরিচিত বিষয়।
চরম অশান্তি ও অবজ্ঞা নিয়ে যৌথ পরিবারের সুবিধাগুলো ভোগ করার চাইতে না-পাওয়ার বেদনা ও ঘাটতি নিয়ে একক পরিবার নিয়ে একটু দুরে থাকাকে এখন অনেকে তাদের জন্য ভাল মনে করছে।
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়