Thursday, March 9

কানাইঘাটে যুদ্ধ করে পাচ্ছেন স্বাধীনতা পদক


এহসানুল হক জসীম :

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে কানাইঘাটের কয়েকটি জায়গায় সম্মুখ সমরে অংশগ্রহণ করে এবং কানাইঘাটের বিভিন্ন জায়গায় যুদ্ধকালীন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কয়েক জন বীরউত্তম, বীরপ্রতীক, বীরপ্রতীক খেতাব পান। কানাইঘাটে যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য এবার দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদকে ভূষিত হলেন একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। কানাইঘাটে মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য একজন শহীদ বীরমুক্তিযোদ্ধাকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করায় কানাইঘাটের একজন হিসেবে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ। 

জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ৯ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠান ২০২৩ সালের স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের তালিকা প্রকাশ করে। স্বাধীনতা পুরস্কারের ক্ষেত্রে পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ৫ লাখ টাকা, আঠারো ক্যারেট মানের ৫০ গ্রাম স্বর্ণের পদক, পদকের একটি রেপ্লিকা ও একটি সম্মাননাপত্র দেওয়া হবে।

‘স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ’ ক্ষেত্রে স্বাধীনতা এবার পুরস্কার পাচ্ছেন চার জন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন শহীদ খাজা নিজামউদ্দিন ভূইয়া বীর উত্তম। কুমিল্লা জেলায় জন্মগ্রহণকারী খাজা নিজামউদ্দিন ভূইয়া ১৯৭১ সালে কানাইঘাট উপজেলার ১ নং লক্ষিপ্রাসাদ পুর্ব ইউনিয়নের নক্তিপাড়া, সড়কের বাজার এলাকাসহ এই উপজেলার বিভিন্ন অংশে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং গেরিলা ও সম্মুখ যুদ্ধে দক্ষতার পরিচয় দেন। ১৯৭১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর আটগ্রামের কাছাকাছি সড়কের বাজার এলাকায় প্রায় ১০ ঘন্টাব্যাপী সম্মুখ যুদ্ধে তিনি শহীদ হন। সম্মুখ যুদ্ধের সময় মূলত তিনি কটালপুর ব্রিজ ধ্বংস করতে গিয়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হন। ১ নং লক্ষিপ্রাসাদ পুর্ব ইউনিয়নের বড়খেওড় গ্রামে শায়িত আছেন এই শহীদ মুক্তিযোদ্ধা।

মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য বাংলাদেশ সরকার খাজা নিজামউদ্দিন ভূইয়াকে ‘বীর উত্তম’ উপাধিতে ভূষিত করে। সাবেক সেনা ও ইপিআরের মধ্যে একমাত্র বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তিনি। 

১৯৭১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর রাতে ৮০০ মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হন সাব-সেক্টর কমান্ডার খাজা নিজামউদ্দিন ভূঁইয়া। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী যাতে আর এগুতে না পারে এই কারণে তিনি পরিকল্পনা করেন কটাল ব্রীজ বিস্ফোরক দিয়ে উড়িয়ে দেওয়ার। রাতভর যুদ্ধ করে মুক্তিযোদ্ধাদের এই দল ব্রিজ উড়িয়ে দেয়। তবে সম্মুখ যুদ্ধ পুরোপুরী থামেনি। থেমে থেমে গোলাগুলি হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের গুলি ফুরিয়ে গেলে নিরাপদে সরে যেতে লাগলেন সবাই। 

খাজা নিজামউদ্দিন ভূইয়া অনবরত গুলি ছুড়ছেন। হঠাৎ একটি গুলি এসে তাঁর হাতে লাগল। পরে আরেকটা গুলি আহত এই মুক্তিযোদ্ধার বুকে লাগলো। আরেকটি গুলি মাথায় বিদ্ধ হওয়ার পর তিনি আর পারলেন না। একপাশে ঢলে পড়লেন। ’লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ পড়ার শব্দ শুনে পেছন ফিরে তাকালেন সহযোদ্ধারা। এরই মধ্যে তিনি ইন্তেকাল করেন। সহযোদ্ধারা লাশ নিয়ে ফিরলেন। 

ভারতীয় সেনাবাহিনী চেয়েছিল,শহীদ খাজা নিজামউদ্দিন ভূইয়াকে ভারতেই মাটিতে সমাহিত করা হোক। তবে মুক্তিযোদ্ধারা নিজ দেশের মাটিতে কবর দেওয়ার জন্য অনঢ় রইলেন। অবশেষে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক  সিলেটের কৃতিসন্তান এম এ জি ওসমানী বললেন, নিজাম বাংলাদেশে থাকবে। কানাইঘাট উপজেলার মমতাজগঞ্জ বাজারের পাশে বড়খেওড় গ্রামে পাতা শাহ মোকাম টিলার চূড়ায় তিন পীর হযরত লালশাহ, হযরত পাতাশাহ, হযরত গোলাপ শাহ (রহ.)-এর কবরের পাশেই সমাহিত করা হলো খাজা নিজামউদ্দিন ভূঁইয়াকে।


শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়