মাহবুবুর রশিদঃ
আজ ৪ ডিসেম্বর। কানাইঘাট উপজেলাবাসীর জন্য একটি স্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের আজকের এ দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধের মাধ্যমে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধারা কানাইঘাটকে হানাদার মুক্ত করেন। এরপর থেকে এই দিনটি কানাইঘাট মুক্ত দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সাথে আলাপ করে জানা যায় , ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর কানাইঘাটকে পাক-হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধারা ৩ ডিসেম্বর রাতে পাক-হানাদার বাহিনীকে বিভিন্ন দিকে থেকে ঘেরাও করেন। ৪ ডিসেম্বর ভোর রাতে পাক-হানাদার বাহিনীর সাথে মুক্তি বাহিনীর তুমুল যুদ্ধ সংঘটিত হয়। সেই যুদ্ধে মুক্তি বাহিনীর পক্ষে নেতৃত্ব মেজর জেনারেল চিত্তরঞ্জন দত্ত (সি আর দত্ত) আর পাক বাহিনীর পক্ষে নেতৃত্ব দেন ক্যাপ্টেন বসারত। মুখোমুখি লড়াইয়ের একপর্যায়ে পরাজয় বরণ করে পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যরা। আর জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধারা কানাইঘাট উপজেলাকে হানাদার মুক্ত করে বিজয় উল্লাসে ফেটে পড়েন।
মুক্তিযুদ্ধকালের অন্যতম স্মরণীয় যুদ্ধ হলো কানাইঘাটের যুদ্ধ। কানাইঘাটে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাঁথা অনেক ইতিহাস-ঐতিহ্য রয়েছে। সম্মুখ যুদ্ধে নিহত অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর ও স্মৃতিসৌধ এখানে রয়েছে।
১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সাথে বীরত্বের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানরা। অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেন, পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা বহু মা-বোনের ইজ্জত হরণ করার পাশাপাশি শত শত বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দেয়। কিন্তু থেমে থাকেনি মুক্তিকামী জনতা। ৪ ডিসেম্বর শত্রু বাহিনীকে পরাজিত করে কানাইঘাটকে মুক্ত করে বিজয়ের স্বাদ পুরো উপজেলায় ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হন।
কানাইঘাট উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নজমুল হক বলেন,'১৯৭১ সালের ৩ডিসেম্বর রাতে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুল যুদ্ধ হয়,দীর্ঘ সময়ে যুদ্ধ করে শত লাশের বিনিময়ে ৪ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত হয় কানাইঘাট।
অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ফখরুল ইসলাম বলেন,'১৯৭১ সালে আমি প্রায়ত মেজর জেনারেল চিত্তরঞ্জন দত্তের (সি আর দত্ত) এর অধীনে ৪ নং সেক্টরে যুদ্ধ করি। সিলেটের কানাইঘাট,গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলায় ভারি অস্ত্র নিয়ে আমার যুদ্ধ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে ।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ফখরুল ইসলাম আরও
বলেন,'সেদিন আমার সাথে আব্দুল খালিক ও মকবুল হোসেন নামে আমাদের এলাকার দুইজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন,আমাদের ক্যাম্প ছিলো লালাখাল। ৪ ডিসেম্বর আমরা কমান্ডারের নির্দেশে বড়বন্দ এলাকার হাজি মুছব্বির সাহেবের বাড়ি থেকে অপারেশন চালাই। পাক হানাদার বাহীনির সাথে আমাদের তুমুলযুদ্ধ হয়,একপর্যায়ে তারা পিছু হটলে মুক্ত হয় কানাইঘাট।
প্রতি বছর এই দিনে কানাইঘাট মুক্ত দিবস স্মরণে উপজেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়ে থাকে।
খবর বিভাগঃ
প্রতিদিনের কানাইঘাট
মুক্তিযুদ্ধে কানাইঘাট
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়