প্রকাশিত: ৮:৪৫ অপরাহ্ণ, ২০ নভেম্বর ২০২২
সম্প্রতি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের জনগণের কাছে সেবা পৌঁছে দেওয়ার সরকারি প্রকল্প ‘দুয়ারে সরকারের’ এক কর্মকর্তার গাড়ি আটকে অভিনব প্রতিবাদ করেছেন এক ব্যক্তি। হাতে ব্যাগ আর কাগজ নিয়ে ৪০ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি সরকারি কর্মকর্তার গাড়ির দরজায় মুখ রেখে একটানা ঘেউ ঘেউ করে চলেছেন! ‘দুয়ারে সরকার’ ক্যাম্পে এই দৃশ্য দেখে স্বভাবতই অনেকে বিস্মিত হয়ে যান।
আর এমন পরিস্থিতিতে অন্য সবার মতো ওই কর্মকর্তাও হকচকিয়ে যান। এমনকি ঘটনাস্থল থেকে বেরিয়ে যেতে পারলেই যেন বেঁচে যান তিনি! কিন্তু কেন এমন অভিনব প্রতিবাদ? আসলে যে ব্যক্তি ঘেউ ঘেউ করে প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন তার প্রকৃত নাম শ্রীকান্তি কুমার দত্ত। রেশন কার্ডে নিজের নাম ও পদবিতে ভুল থাকায় সংশোধনের জন্য আবেদন করেছিলেন তিনি।রেশন কার্ড সংশোধন হলেও তার পদবি ‘দত্ত’র জায়গায় লেখা রয়েছে ‘কুত্তা’। যে কারণে ওই ব্যক্তি বিরক্ত হয়ে এমন অভিনব প্রতিবাদ জানিয়েছেন। দেশটির সংবাদমাধ্যম বলছে, পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া-২ নম্বর ব্লকের বিকনা গ্রাম পঞ্চায়েতের কেশিয়াকোল গ্রামের বাসিন্দা শ্রীকান্তি কুমার দত্ত। রাজ্যের খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের কাছ থেকে যে রেশন কার্ড হাতে পেয়েছেন সেই জায়গায় তার পদবি ‘দত্ত’র পরিবর্তে ‘কুত্তা’ লেখা হয়েছে।
ভারতীয় একাধিক গণমাধ্যম জানায়, ঘটনায় ব্যাপক বিব্রত হয়েছেন তিনি। গত বুধবার বিকনা গ্রাম পঞ্চায়েতের ‘দুয়ারে সরকার’ ক্যাম্পে জয়েন্ট বি.ডি.ও পরিদর্শনে এলে কুকুরের মতো ঘেউ ঘেউ করে প্রতিবাদ জানান শ্রীকান্তি। সামনের সিটে বসে থাকা ওই কর্মকর্তার গাড়ির জানালায় মুখ লাগিয়ে ক্রমাগত কুকুরের মতো আওয়াজ করতে থাকেন। এক পলকে দেখলে মনে হবে তিনি হয়তো কথা বলতে পারেন না। কিন্তু বিষয়টি বুঝতে পরে অস্বস্তিতে পড়ে যান ওই কর্মকর্তাও। ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে শ্রীকান্তি দত্ত বলেন, রেশন কার্ডের জন্য আবেদন করেছিলাম, প্রথম পর্যায়ে যখন রেশন কার্ড হাতে পাই তখন দেখি আমি শ্রীকান্তি দত্ত হয়ে গিয়েছে শ্রীকান্ত মণ্ডল। সংশোধনের আবেদন করে আমি হয়ে গেলাম শ্রীকান্ত কুমার দত্ত।
তিনি আরো জানান, সরকারে গিয়ে সংশোধনের আবেদন করলাম। এরপর আর মানুষ নয়, হয়ে গেলাম কুকুর! শ্রীকান্তি দত্তের জায়গায় শ্রীকান্তি কুমার কুত্তা। এই ঘটনার পর আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে গিয়ে জয়েন্ট বি.ডি.ও কে হাতের কাছে পেয়ে ‘দত্ত’ কী করে ‘কুত্তা’ হয় এই প্রশ্ন তার কাছে রাখলেও তিনি কোনও উত্তর না দিয়ে এলাকা ছাড়েন বলে দাবি করেছেন শ্রীকান্তি। ছেলের নামের পদবি বিভ্রাটের এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ শ্রীকান্তি দত্তের মা হীরা দত্ত। পদবির জায়গায় কুত্তা লেখায় তাদের ‘সামাজিকভাবে সম্মানহানি’ হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। হীরা দত্ত বলেন, গুরুত্বপূর্ণ কাজে ‘চুক্তিভিত্তিক আর অশিক্ষিত’ কর্মী নিয়োগের ফলে এই ঘটনা ঘটছে। আর যার ফল ভোগ করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। আমার ছেলের আমি একটা নাম রেখেছি। দোকান করে ছেলে সংসার চালায়। এই ঘটনায় শতগুণ সম্মানহানি হয়েছে বলে তিনি জানান।
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়