নিজস্ব প্রতিবেদক :
ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর নিয়ে চরম কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেওয়ার পর আবারো কানাইঘাট লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়ন শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি প্রাপ্ত তোতা মিয়াকে নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
বহু বিতর্কিত কর্মকান্ড এবং এলাকায় আওয়ামী লীগের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করার অপরাধে কানাইঘাট লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউপি শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি তোতা মিয়াকে গত ১৬ এপ্রিল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লুৎফুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম তার দলীয় পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি প্রদান করেন।
তোতাকে দলীয় পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়ার পর দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পরও এলাকায় আওমীলীগ তথা সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করে তোতা বিতর্কিত কর্মকান্ডে লিপ্ত ছিল বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান।
সর্বশেষ গত শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মস্তাক আহমদ পলাশ লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে এক সভা করেন।
সভায় লাইভে মস্তাক আহমদ পলাশ বক্তব্য প্রদানকালে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অব্যাহতি প্রাপ্ত সভাপতি তোতা মিয়া বলেন ‘সরকারের প্রধানমন্ত্রীর যেতা ঘর, ইতা ঘরে কুকুরও রইতরা না, ফালাইয়া আইছইন, একশটা ঘরের মাঝে ২০ জন আছইন, বাদবাকি ঘর খালি।’
তার এমন বক্তব্যের সময় আওয়ামী লীগ নেতা মস্তাক আহমদ পলাশ তোতা মিয়াকে থামাতে বলতে থাকেন লাইভ চলেরতো লাইভ চলের। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নিয়ে তোতার এমন কটাক্ষমূলক সরকার বিরোধী বক্তব্য এবং প্রধানমন্ত্রীর সম্মানহানি ঘটলেও তখন সেখানে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ কোন প্রতিবাদও করেননি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোতার এমন বক্তব্যের ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে সর্বত্র সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় উঠে। আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে অনেকে তোতার নানা ধরনের অপকর্মের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নিয়ে তার এমন ধৃষ্টতার নিন্দা জানিয়ে পোস্ট দেন এবং তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় প্রশাসন ও উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান জানান।
এমনকি তোতা মিয়া কর্তৃক প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে ভিডিও বক্তব্য এখন ফেসবুকে ব্যাপক ভাইরাল হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মস্তাক আহমদ পলাশের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তোতা মিয়াকে লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়ন শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ থেকে আগেই অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। সে সভায় উপস্থিত হয়ে আমার বক্তব্যের সময় প্রধানমন্ত্রীর মেঘা প্রকল্পের ঘর নিয়ে সমালোচনা করলে তাৎক্ষণিক আমি তার প্রতিবাদ করি এবং সভা শেষে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দকে জরুরীভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করা হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সারাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার দেয়া ভুমিহীনদের জন্য ঘর মানুষের কাছে প্রশংসিত হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন্ত ব্যানার্জি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নিয়ে সমালোচনা করা সরকার তথা রাষ্ট্রের বিরোধীতা করা। কানাইঘাট উপজেলায় সবক’টি প্রধামন্ত্রী উপহারের ঘরে ভুমিহীন ও গৃহহীন পরিবার বসবাস করে আসছেন। সোনাতনপুঞ্জি এলাকায় সরকারি ভুমিতে ভুমিহীনদের ঘর নির্মাণে প্রথমে যে বাঁধা প্রদান করেছিল সেই তোতা নামের ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর ঘর নিয়ে এখন মিথ্যা ভিত্তিহীন বানোয়াট বক্তব্য রেখেছে। এখনও সে সোনাতনপুঞ্জি গ্রামে বসবাসরত পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছে বলে আমি জানতে পেরেছি। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নিয়ে তোতার এমন কটাক্ষমূলক বক্তব্যের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র লুৎফুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, নানা ধরনের বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে তোতা মিয়াকে ইতিপূর্বে দলের সভাপতি পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তারপরও কিভাবে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভায় উপস্থিত হয়ে তোতা প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটাক্ষমূলক বক্তব্য প্রদান করে? জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দকে বিষয়টি অবহিত করে পরবর্তীতে তোতাকে দল থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়