কালের আবর্তে জীবন পঞ্জিকা থেকে বিদায় নিলো ২০২১ সাল। সবাই এখন ২০২২ সালকে বরণ করছে। তবে বিদায় নেওয়া ২০২১ সালে পাওয়া না পাওয়ার হিসাব ইতোমধ্যে কষা শুরু হয়েছে। নানা কারণে ২০২১ সাল ছিল কানাইঘাটবাসীর কাছে আলোচিত-সমালোচিত। বছরের শুরুটা পৌর নির্বাচনের আমেজে বেশ ভালো কাটলেও মাঝামাঝি এবং শেষ সময়ে কখনও খুন, কখনও ধর্ষণ, কখনো আবার সড়ক দুর্ঘটনায় সংবাদের শিরোনাম হয়েছে এই উপজেলা ।
বিশেষ করে সীমান্তে বিএসএফ এর গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত,বিয়ের সেন্টারে জোড়া লাশ,নানার হাতে নাতি,চাচার হাতে প্রতিবন্ধী ভাতিজা হত্যাসহ বেশ কয়েকটি আলোচিত ঘটনা বছরজুড়ে শুধু কানাইঘাটে নয় পুরো দেশজুড়ে ছিল আলোচিত। ২০২১ সালের ঘটে যাওয়া আলোচিত-সমালোচিত কয়েকটি ঘটনা ‘কানাইঘাট নিউজ’ পাঠকের জন্য ক্রমানুসারে তুলে ধরা হলো-
নানাকে পাথর ছুড়ে হত্যা করে নাতি::
নানাকে পাথর ছুড়ে হত্যার ঘটনাটি উপজেলাজুড়ে ছিলো বেশ আলোচিত। গত ০৬ এপ্রিল মঙ্গলবার দিনগত রাত ১১টার দিকে উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের এরালিগুল গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত নাতি আব্দুল কাদিরকে (৩২) তখন গ্রেফতার করে কানাইঘাট থানা পুলিশ।
জানা যায়, এরালিগুল খাছাড়িপাড়া গ্রামের মৃত মরতুজ আলীর ছেলে আব্দুল কাদির স্ত্রী নিয়ে তার আপন নানির দ্বিতীয় স্বামী আব্দুল মালিক উরফে মলিক মিয়ার (৭৩) বাড়িতে থাকত। একসময় নানা-নাতির মাঝে মনোমালিন্য দেখা দিলে নানা বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে নাতি আব্দুল কাদির নানাকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়লে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় মলিক মিয়ার।
এ ঘটনায় মলিক মিয়ার ছেলে আবুল কাসিম বাদী হয়ে আব্দুল কাদিরের বিরুদ্ধে কানাইঘাট থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
বিষপানে শিশুর মৃত্যু::
মাত্র ১০ বছরের শিশু নাবিলের বিষপানে মৃত্যুর ঘটনা নিয়েও কম মাতামাতি হয়নি কানাইঘাটে । গত ৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার কানাইঘাট লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের কেরকেরি গ্রামের মৃত হারিছ উদ্দিনের পুত্র নাবিল আহমদ রাত সাড়ে ১২ টার দিকে পরিবারের অগোচরে বিষপান করে। পরে তার আতœচিৎকারে বাড়ির লোকজন উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে আসার পতিমধ্যে মৃত্যু হয় নাবিলের। নাবিল আহমদের স্বজনরা জানান, দীর্ঘদিন থেকে নাবিল মানসিক রোগে ভুগছিল।
ট্রাক চাপায় ২ যুবকের মৃত্যু::
গত ৩ মে সোমবার জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত-কানাইঘাট সড়কের প্রবেশ মুখে একটি ওয়ার্কসপে ট্রাক চাপায় মর্মান্তিক মৃত্যু হয় কানাইঘাটের দুই যুবকের। তাদের মধ্যে একজন কলেজ শিক্ষার্থী সুলতান আহমদ মিনহাজ (২৬) ও অপরজন আশিক উদ্দিন (২৫)। দুই যুবকের মৃত্যুতে পুরো উপজেলাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছিল।
জানা যায়, সুলতান আহমদ মিনহাজ ও তার প্রতিবেশী বন্ধু আশিক উদ্দিন রাতে নিজ বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলযোগে দরবস্ত-কানাইঘাট সড়কের প্রবেশ মুখে অবস্থিত একটি ওয়ার্কসপে গাড়ীর কাজ করাচ্ছিলেন। রাত ১টার দিকে একটি ইট বোঝাই ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ওয়ার্কসপে ঢুকে পড়লে ট্রাকের চাকায় পৃষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় সুলতান আহমদ মিনহাজ, আশিক উদ্দিন ও ওয়ার্কসপ মালিক গোলাপগঞ্জ উপজেলার সুহেল আহমদের।
ট্রাক্টরচাপায় ভাই-বোনের মৃত্যু::
গত ১১ মে মঙ্গলবার ট্রাক্টর চাপায় নাইম ও মাইশা নামের আপন ভাই-বোনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। উপজেলার দিঘীরপার ইউনিয়নের লন্তিরমাটি গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। তারা ঐ গ্রামের মাহতাব উদ্দিনের ছেলে নাইম আহমদ (৮) ও মেয়ে মাইশা বেগম (৫) । দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ট্রাক্টরের চালক শরীফ উদ্দিন। জানা যায়, লন্তিরমাটি গ্রামের শরীফ উদ্দিন ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ করছিলেন। তার পাশে বসা ছিল শিশু নাইম ও মাইশা। ট্রাক্টরটি ঘুরানোর একপর্যায়ে উল্টে গিয়ে শিশু নাইম ও মাইশার উপরে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই তারা মারা যায়।
প্রতিপক্ষের কিল ঘুষিতে মারা গেলেন বৃদ্ধ::
গত ১৬ মে রবিবার তুচ্ছ ঘটনায় প্রতিপক্ষের কিল-ঘুষিতে আতাউর রহমান (৬০) নামের এক বৃদ্ধ মারা যান। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার ঝিঙ্গাবাড়ী ইউনিয়নের ওপর ঝিঙ্গাবাড়ী হরিসিংমাটি গ্রামে । এ ঘটনায় তখন তিনজনকে আটক করে থানা পুলিশ।
জানা যায়, আতাউর রহমান তার ভাতিজাকে নিয়ে বসতবাড়ির পাশে একটি খালে পানি নিষ্কাশনের জন্য কাজ করছিলেন। এসময় মিরমাটি গ্রামের কুদরত উল্লা ও তার ছেলে লিমন আহমদ, সুমনসহ পরিবারের লোকজন আতাউর রহমানকে পানি নিষ্কাশনের কাজে বাধা দেয়। দুপক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে কুদরতের পরিবারের সদস্যরা আতাউর রহমানকে কিল, ঘুষি ও লাথি মারতে থাকলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে জ্ঞান হারান। পরে উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রতিবন্ধীকে ঘাড় কেটে হত্যা ::
গত ১৪ জুন সোমবার কানাইঘাটের সীমান্তবর্তী লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়নের একটি টিলার উপর থেকে রুহুল আমিন (২৫) নামের এক শারীরিক প্রতিবন্ধীর ঘাড় কাটা অবস্থায় লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ রুহুল আমিনের আপন চাচা সোনাতনপুঞ্জি গ্রামের মৃত ইছরাক আলীর পুত্র সামছুল হক ও তার পুত্র ইমরান আহমদকে তাৎক্ষণিক গ্রেফতার করে।
স্থানীয়রা জানান, গত ১৩ জুন রবিবার রাতে প্রতিবন্ধী যুবক রুহুল আমিন তার চাচা সামছুল হকের বাড়িতে গিয়েছিলেন। পরদিন সোমবার সকাল ৮টার দিকে সামছুল হক এলাকায় চাউর করেন ভাতিজা রুহুল আমিনকে খোঁজে পাচ্ছেন না তিনি। একপর্যায়ে সকাল ১০টার দিকে স্থানীয় লোকজন খোঁজাখুঁজি করে শারীরিক প্রতিবন্ধী রুহুল আমিনের ঘাড় কাটা রক্তাক্ত লাশ টিলার একপাশে পড়ে থাকতে দেখেন। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হলে নিহতের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় রুহুল আমিনের বড় বোন কুলসুমা বেগম তার আপন চাচা সামছুল হক ও তার পুত্র ইমরান আহমদের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
অবৈধ বিদ্যুতের তার ছিড়ে প্রাণ গেলো কিশোরের :
অবৈধ বিদ্যুতের তার ছিড়ে নিচে পড়ে গিয়ে রাজু আহমদ (১১) নামের এক কিশোরের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। গত ২৩ জুন বুধবার উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের বড়খেওড় গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত রাজু বড়খেওড় গ্রামের দরিদ্র আব্দুল জলিলের ছেলে ।
স্থানীয়রা জানান, বড়খেওড় গ্রামের আলমগীর হোসেন তার বাড়ির পাশের মসজিদ থেকে অবৈধভাবে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুতের তার টেনে বাড়ীতে অবস্থিত একটি দোকান ঘরসহ করাতকলে সংযোগ দিয়ে ব্যবহার করে আসছিলেন।
গত ২৩ জুন ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুতের লাইন মাটিতে ছিড়ে পড়লে বিকেলের দিকে রাজু তার একটি গরু আনতে গেলে বিদ্যুতের ছেড়া লাইনে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যায়।
দা হাতে যুবতী দেশজুড়ে ভাইরাল :
গত ৯ জুলাই শুক্রবার জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে বসতবাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় দা হাতে ভাইরাল হন কানাইঘাটের দুই তরুণী। প্রতিপক্ষের ঘরে হামলা-ভাঙচুর চালানোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়। ঘটনাটি কানাইঘাটের লক্ষীপ্রসাদ পূর্র্ব ইউনিয়নের কাড়াবাল্লা গ্রামের।
জানা যায়, কাড়াবাল্লা গ্রামের মইন উদ্দিন লুকু ও সালেহা বেগম সম্পর্কে তারা চাচাতো ভাই-বোন। দীর্ঘদিন থেকে তাদের মধ্যে জায়গা-সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। বিরোধপূর্ণ জায়গায় একটি টিনের ঘর নির্মাণ করছিলেন মইন উদ্দিন লুকু। প্রতিপক্ষ সালেহা বেগম ও সন্তানেরা মিলে দা, বাঁশ দিয়ে লুকুর টিনের ঘরে হামলা করে ভাঙচুর করেন। এসময় ওই জায়গার বিভিন্ন ধরনের গাছ-পালাও কেটে ফেলেন তারা। এ ঘটনায় মইন উদ্দিন বাদি হয়ে থানায় মামলা করলে পুলিশ ৫ জন তখন কে গ্রেফতার করে।
প্রতিবন্ধী মেয়েকে ধর্ষণ ঃঃ
গত ১৫ জুলাই বৃহস্পতিবার বিকেল ২ টার দিকে টিউশনি করে বাড়ি ফেরার পথে এক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ধর্ষিত হয়। জানা যায়, সদর ইউনিয়নের জন্তিপুর গ্রামের মৃত মুরাকিব আলীর পুত্র রিয়াজ উদ্দিন একই গ্রামের মৃত কবির উদ্দিনের পুত্র সুহেল আহমদ (২৫) ও রাধানগর গ্রামের ইয়ারীছ আলীর পুত্র ফয়ছল আহমদ (২০) ও সিদ্দিক আলীর পুত্র গিয়াস আহমদ (২৭), জন্তিপুর গ্রামের মিনহাজ উদ্দিনের বাড়িতে বসবাসরত তার ভাগ্না সুহেল উদ্দিন বসত ঘরে প্রবেশ করে শারীরিক প্রতিবন্ধী মেয়েটিকে জোর পূর্বক ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় পুলিশ রাতেই এলাকায় অভিযান চালিয়ে সুহেল আহমদ ও ফয়ছল আহমদকে গ্রেফতার করে।
বীমা কর্মীকে চলন্ত সিএনজিতে ধর্ষণ চেষ্টা::
গত ১৮ জুলাই রবিবার এক বীমা নারীকর্মীকে জোরপূর্বক ভাবে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে দুই অটোরিকশা চালককে আটক করে জনতা। আটককৃতরা কানাইঘাট উপজেলার ঝিঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের বাখাইরপাড় গ্রামের রিয়াজ উদ্দিনের পুত্র অটোরিকশা চালক দুদু মিয়া (২৫) ও একই গ্রামের মৃত আব্দুর রহিমের পুত্র সিএনজি চালক বশর (২১)। পরে জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর বাজার থেকে জনতার হাতে আটক অবস্থায় র্যাব-৯ গ্রেফতার করে তাদের কার্যালয়ে নিয়ে যায়। এবং ধর্ষনের হাত থেকে রক্ষা পেতে সিএনজি থেকে লাফ দিয়ে পড়ে গুরুতর আহত মেয়েটিকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
খাল থেকে মহিলার লাশ উদ্ধার ::
গত ২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার কানাইঘাটের আমরি নামক খাল থেকে সিমন বালা দাস (৪৫) নামে মহিলার লাশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। সিমন বালা দাস কানাইঘাট লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়নের দক্ষিণ লক্ষীপ্রসাদ গ্রামের নিপু রাম দাসের স্ত্রী। স্থানীয়রা জানান, কানাইঘাট লক্ষীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়নের দক্ষিণ লক্ষীপ্রসাদ গ্রামের নিপু রাম দাসের স্ত্রীর সিমন বালা দাস (৪৫) গত ১ সেপ্টেম্বর নিখোঁজ হন। একপর্যায়ে সন্ধ্যা ৭টার দিকে সিমন বালা দাসের পুত্র দিপক রাম দাস স্থানীয় আমরি খালের মধুখাল নামক স্থানে তার মায়ের পোষাক, জুতা, ছাতা পড়া অবস্থায় দেখতে পেয়ে থানা পুলিশকে অবহিত করেন। পরে আমরি খালে ব্যাপক তল্লাশী চালিয়ে সিমন বালা দাসের লাশ ডুবন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
মাছ ধরা নিয়ে হামলায় বৃদ্ধ নিহত::
গত ৫ সেপ্টেম্বর রবিবার খাল থেকে মাছ ধরা নিয়ে প্রতিপক্ষের হামলায় আলকাছ পীর (৫০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। জানা যায়, উপজেলার ৭নং দক্ষিণ বানীগ্রাম ইউনিয়নের লামা দলইকান্দি গ্রামের মৃত আবু বক্করের ছেলে আলকাছ পীর তার বাড়ীর উত্তর পাশে অবস্থিত খাল থেকে মাছ ধরতে গেলে একই গ্রামের ফয়জুল হকের ছেলে নাঈম ও তার চাচাতো ভাই রেজাউল বাধা প্রদান করলে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে নাঈম রাস্তার বেড়া থেকে একটি বাঁশের খুটি নিয়ে আলকাছ পীরের মাথায় আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
তিন মাসে একাধিক আত্মহত্যা:
গত সেপ্টেম্বর,অক্টোবর এবং নভেম্বর মাসে কানাইঘাটে একাধিক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। ১২ বছরের কিশোরসহ সব বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যা বেড়ে যাওয়ায় উপজেলার সাধারণ মানুষের মাঝে উদ্বেগ দেখা দিয়েছিল। আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে তরুণ-তরুণীদের সংখ্যা বেশি ছিল ।
প্রবাসীর মাকে যৌন হেনস্তা করে ভিডিও ইন্টারনেটে::
প্রবাসী দুই সন্তানের কাছে চাঁদা দাবি করে না পেয়ে তাদের মাকে যৌন হেনস্তার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। ঘটনাটি পুরো সিলেটজুড়ে ছিল বেশ আলোচিত।
গত ২৩ আগস্ট সোমবার মধ্যরাতে উপজেলার আগতালুক গ্রামে নিজগৃহে হেনস্থার শিকার হন ওই নারী। ৬ মিনিট ১ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে ওই নারীকে যুবকের হাতে ধরে কাকুতি-মিনতি করতে দেখা যায়।
জানা যায় ঘটনাটি গত ২৩ আগস্ট ঘটলেও তার এলাকার পঞ্চায়েত নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে সালিশে সমাধানের চেষ্টা করেন। তবে সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ফেসবুকে ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে তা পুলিশের নজরে আসে। রাতে ওই নারীকে থানায় নিয়ে এসে মামলা করানো হয়। পরে পুলিশ এ ঘটনায় অভিযুক্ত কানাইঘাট উপজেলার আগতালুক গ্রামের বরকত উল্লাহর ছেলে আব্দুল্লাহ ও একই গ্রামের রফিক আহমদের ছেলে সায়েদ উল্লাহ ও আব্দুল জব্বার(২৭) কে গ্রেফতার করে।
বিদ্যুৎপৃষ্টে দাদা নাতির মৃত্যু::
গত ৪ অক্টোবর সোমবার উপজেলার সদর ইউনিয়নের নিজ চাউরা পূর্ব গ্রামে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে হয়ে দাদা ও নাতির মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। মৃতরা হলেন- নিজ চাউরা গ্রামের মাওলানা ফখরউদ্দিন (৭০) ও তার নাতি আরিফুল ইসলাম (৮)। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছিল। জানা যায়,মাওলানা ফখর উদ্দিনের বাড়ির পাশে পল্লী বিদ্যুতের একটি লাইন ছিঁড়ে মাটিতে পড়ে যায়। এলাকাবাসী ও মাওলানা ফখরউদ্দিন নিজে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের কাছে ফোন করে তার ছিঁড়ার বিষয়টি জানান। এরপরও টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের। মাওলানা ফখর উদ্দিনের নাতি স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র আরিফুল ইসলাম বাড়ি ফেরার পথে বিদ্যুতের ওই ছেঁড়া তারে জড়িয়ে পড়ে। নাতিকে এ অবস্থায় দেখে ফখর উদ্দিন বাঁচাতে গেলে উভয়ই বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মারা যান।
সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত::
সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার ভারত সীমান্তে দুই বাংলাদেশী নিহতের ঘটনায় সীমান্তে উত্তেজনা দেখা দেয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত দুই বাংলাদেশির লাশ দুই দিন পড়ে থাকার পর ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করেন।
গত ৩ নভেম্বর বুধবার বেলা ১১টার দিকে কানাইঘাটের ডোনা সীমান্তের ভারত সীমান্ত অংশে অবস্থানকালে বিএসএফের গুলিতে মারা যান কানাইঘাটের লক্ষীপ্রসাদ এরালিগুল গ্রামের আসকর আলী ওরফে আছই (২৫) ও আরিফ মিয়া (২২)। নিহত দুজনের লাশ সীমান্তের ১৩৩১ নম্বর মেইন পিলারের পাশে একটি নালার পাশে পড়ে ছিল।
নিহত দুজনের লাশ উদ্ধার করতে বিজিবি ও বিএসএফ সদস্যদের মধ্যে কয়েক দফা পতাকা বৈঠক হয়। পতাকা বৈঠকে বিএসএফ হত্যার দায় স্বীকার না করায় বিষয়টি অমীমাংসিত ছিল। পরে দু’দিন পর দুই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অধিনায়ক পর্যায়ে পতাকা বৈঠকে শেষে লাশ দুটি বিজিবির পক্ষ থেকে বুঝে নেওয়া হয়।
ফারুক হত্যাকান্ডের আসামির মৃত্যুদন্ড::
কানাইঘাটে আলোচিত ফারুক আহমদ হত্যা মামলায় ফখরুল ইসলাম (৪৮) নামে এক আসামির মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। গত ১৭ নভেম্বর বুধবার সিলেট জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতের বিচারক মো.ইব্রাহিম মিয়া এ রায় ঘোষণা করেন। আসামিকে মৃত্যুদন্ডের পাশাপাশি আরও এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ৩ মাসের বিনাশ্রম কারদন্ড দেওয়া হয়েছে। তবে এ মামলায় জামিনে থাকা আরেক আসামি আব্দুস সাত্তারকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ফখরুল ইসলাম সিলেটের কানাইঘাট আগফৌদ পূর্ব গ্রামের মৃত জুয়াহির আলীর ছেলে। এছাড়া খালাস পাওয়া আব্দুস সাত্তার একই গ্রামের মোবারক আলীর ছেলে।
২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৮টায় ভ‚মির নিষ্পত্তি করতে আসামিদের বাড়ির পাশে সুরই নদীর ডাইকে সালিশে যান ফারুক আহমদ। সালিশ চলাকালে সাক্ষী ফরিদ আহমদের ওপর হামলার চেষ্টা করেন প্রতিপক্ষের লোকজন। এ সময় ফখরুল কোমর থেকে ছুরি বের করে ফরিদকে আঘাত করার চেষ্টা করেন। তাকে আটকাতে চেষ্টা করেন ফারুক আহমদ। কিন্তু ফখরুল উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সালিশ ব্যক্তিত্ব ফারুক আহমদের গলায় উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে তাকে হত্যা করেন।
উপস্থিত লোকজন ঘাতক ফখরুলকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করলেও অপর আসামিরা পালিয়ে যান। এ ঘটনায় নিহতের ভাই মুহিবুর রহমান বাদী হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় ২/৩ জনকে আসামি করে কানাইঘাট থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কানাইঘাট থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) স্বপন চন্দ্র ওই বছরের ২১ অক্টোবর ২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (নং ১৫৬) দাখিল করেন আদালতে। মামলাটি আদালতে বিচারের জন্য পাঠালে দায়রা-৯৫৫/১৯ মূলে রেকর্ডের পর চার্জ গঠন করে বিচার প্রক্রিয়ায় ২১ সাক্ষীর মধ্যে ১৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে বিচারক এ রায় দেন।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ ও অ্যাডভোকেট রণজিৎ সরকার এবং বাদী পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আব্দুর রহিম।
প্রেমিককে হত্যা, দুজনের মৃত্যুদন্ড::
কানাইঘাটের বহুল আলোচিত ইমরান হোসেন (২৫) নামের এক যুবককে হত্যার দায়ে দুজনের মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন বছরের বিনাশ্রম কারদন্ড প্রদান করা হয়। অভিযোগ সন্দেহাতিতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় এই মামলার দুই আসামিকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন বিচারক। গত ২৪ নভেম্বর বুধবার বিকেলে সিলেট জেলার অতিরিক্ত দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মো. ইব্রাহম মিয়া এ রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তরা হলেন- কানাইঘাট উপজেলার দুর্গাপুর দক্ষিণ নয়াগ্রামের সৌদিপ্রবাসী বদরুল ইসলামের স্ত্রী সুহাদা বেগম (২৫) ও সুহাদার প্রতিবেশী ও নিকটাত্মীয় জাহাঙ্গীর আলম (২৬)। এছাড়া অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছেন ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত সুহাদার ভাই ইমরান আহমদ (৩৩) ও দেবর মাসুম আহমদ (৩৫)।
জানা যায়, ২০১৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর নিখোঁজ হন কানাইঘাট পৌর শহরে দর্জি ইমরান আহমদ। পৌর শহরের সোনাপুর এলাকার বাসিন্দা ইমরানকে কথিত প্রেমিকা সুহাদার শ্বশুরবাড়িতে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকে নিখোঁজ হন ইমরান আহমদ। নিখোঁজের দুই দিন পরও তার কোনো সন্ধান না পেয়ে ইমরান আহমদের বাবা আবু বক্কর কানাইঘাট থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
নিখোঁজের চারদিন পর আবু বক্কর ২৩ সেপ্টেম্বর কানাইঘাট থানায় সুহাদা বেগম ও তার ভাই ইমরান আহমদ, দেবর মাসুম আহমদ ও লক্ষীপ্রসাদ গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলার পরই পুলিশ সুহাদা বেগম ও জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেফতার করে। পরবর্তী সময়ে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরদিন ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে সুহাদার শ্বশুরবাড়ির পুকুর থেকে ইমরান হোসেনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে ২৫ সেপ্টেম্বর হত্যাকান্ডের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন কথিত প্রেমিকা সুহাদা।
বিয়ের সেন্টারে জোড়া লাশ ::
বছরের শেষে ডিসেম্বর মাসের শুরতেই বিয়ের সেন্টার থেকে জোড়া লাশ উদ্ধারের ঘটনা পুরো সিলেটজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। গত ১ ডিসেম্বর বুধবার সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দক্ষিণ বাণীগ্রাম ইউনিয়নের গাছবাড়ী বাজারস্থ আনন্দ কমিউনিটি সেন্টারের একটি কক্ষ থেকে এক মহিলা ও এক পুরুষ বাবুর্চির লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত বাবুর্চিরা হলেন- কানাইঘাট উপজেলার নয়াগ্রামের মৃত রহমত উল্লাহ’র ছেলে সুহেল আহমদ (২৮) ও ওসমানীনগর উপজেলার তাহিরপুর গ্রামের মৃত আক্কাছ আলীর মেয়ে সালমা বেগম (৪০) এবং অসুস্থ বাবুর্চি হলেন কানাইঘাট উপজেলার ব্রাহ্মণগ্রামের নাজিম উদ্দিন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাতে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে রান্না শেষে রাত ৩টার দিকে তারা কমিউনিটি সেন্টারের ২য় তলার একটি ছোট কক্ষে শুয়ে পড়েন। পরদিন সকাল ৭টার দিকে ঘুম থেকে এ ৩জন না উঠলে বিয়ের আয়োজনকারী জসিম উদ্দিন তাদের ডাকতে গিয়ে দেখতে পান- বাবুর্চি সুহেল আহমদ, নাজমা বেগম ও নাজিম এলোমেলো অবস্থায় পড়ে রয়েছেন এবং কক্ষের ভেতর ধোয়ায় আচ্ছন্ন। এসময় এ তিনজনকে উদ্ধার করে উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসকগণ সুহেল ও সালমা বেগমকে মৃত ঘোষণা করেন এবং আশঙ্কাজনক অবস্থায় নাজিম উদ্দিনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
একসঙ্গে এই দুজনের মৃত্যুর ঘটনায় নানা কথা উঠলেও পুলিশের ধারণা ছোট বদ্ধ কক্ষে প্রচুর ধোয়ায় অক্সিজেনের অভাবে দুজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়াও বছরের শেষের দিকে ডিসেম্বর মাসে পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পুরো উপজেলা এখন নির্বাচনের আলাপ-আলোচনায় মুখরিত।
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়