Saturday, November 7

কানাইঘাটে একটি ধর্ষণ মামলা নিয়ে এলাকায় তোলপাড়

 


কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক  :: মামলা মোকদ্দমা ও জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে কানাইঘাট উপজেলার লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউপির বাখালছড়া গ্রামে নিজের নাবালিকা মেয়েকে অন্যের হাতে তুলে দিয়ে অপর পক্ষকে ফাঁসানোর জন্য ধর্ষণ মামলা দিয়ে হয়রানির ঘটনায় এলাকাজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাটি সঠিক তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এলাকাবাসী আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তা না হলে এ নিয়ে গ্রামে দু’পক্ষের মধ্যে বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে বলে সরজমিনে গত শুক্রবার বিকেল ২টায় বাখালছড়া গ্রামে গিয়ে এলাকার অসংখ্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সহ সর্বস্তরের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে।

স্থানীয়রা জানান, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বাখালছড়া গ্রামের মৃত ছিদ্দেক আলীর পুত্র আব্দুল হান্নান গংদের সাথে প্রতিবেশী একই গ্রামের রহিম উদ্দিন রমুর পুত্র আব্দুল জব্বার গংদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে বর্তমানে উভয় পক্ষের মধ্যে মারামারি সহ পাল্টাপাল্টি মামলা মোকদ্দমা চলছে। র্সবশেষ গত ১৮ অক্টোবর আব্দুল হান্নান গংদের লোকজন আব্দুল জব্বারের বসত বাড়িতে চড়াও হয়ে তার ভাই তৌহিদুর রহমান ও তার ৫ মাসের অন্তসত্বা স্ত্রী রোজিনা বেগমকে ২ দফা বেদড়ক মারপিট করে রক্তাক্ত আহত করলে কানাইঘাট থানায় আব্দুল হান্নান পক্ষের ৯ জনের বিরোদ্ধে আব্দুল জব্বার বাদী হয়ে দরখাস্ত মামলা দায়ের করলে পুলিশ সরজমিনে ঘটনাস্থল তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে ২৩ অক্টোবর অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে রেকর্ড করে।

স্থানীয়রা জানান, মারপিটের কারনে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় প্রচুর রক্তক্ষরণের কারনে রুজিনা বেগমের গর্ভের ৫ মাসের সন্তান নষ্ট হয়ে যায়। ২১ অক্টোবর চিকিৎসাধীন অবস্থায় গর্ভপাত হয়ে ৫ মাসের একটি মৃত পুত্র সন্তান প্রসব করেন রুজিনা বেগম। এ ঘটনায় রুজিনার স্বামী তৌহিদুর রহমান বাদী হয়ে তার স্ত্রীকে এলোপাতাড়ি ভাবে নির্যাতনের কারনে গর্ভের সন্তান নষ্ট হওয়ার কারনে আব্দুল হান্নান ও তার পুত্র আব্দুল কাদির, তাদের আত্মীয় সোনামিয়ার পুত্র সেলিম উদ্দিন (টাইগার সেলিম) ও তার ভাই ডালিম, করিম, নিজাম সহ ৬ জনের বিরুদ্ধে কানাইঘাট আমল গ্রহণকারী আদালতে গত ৪ নভেম্বর একটি দরখাস্ত মামলা দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালত দরখাস্ত মামলাটি এফআইআর হিসেবে গণ্য করে আসামীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কানাইঘাট থানা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। আব্দুল হান্নান গংদের বিরুদ্ধে দু’টি মামলা দায়েরের পর আব্দুল জব্বার ও তার মামলার সাক্ষী ও পরিবারের লোকজনকে ফাঁসানোর জন্য আব্দুল হান্নানের পরিবারের লোকজন নানা ধরনের ফন্দী আটেঁন। সরেজমিনে তদন্তকালে বাখালছড়া সহ আশপাশের গ্রামের কয়েকজন বীরমুক্তিযোদ্ধা সহ অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে কথা বললে তারা বলেন, আব্দুল জব্বার ও তার মামলার সাক্ষীদের ফাঁসানোর জন্য এলাকার কতিপয় ২/৩ জন প্রভাবশালী লোকজনদের কু-পরামের্শ আব্দুল হান্নান তার ১৬ বছরের অবিবাহিত কিশোরী মেয়েকে গত ৩১ অক্টোবর বিকেল ২টার দিকে পুকুরে গোসল করতে গেলে আব্দুল জব্বার ও তার মামলার সাক্ষী বাখালছড়া গ্রামের মৃত শফিকুল হকের পুত্র গ্রামের মসজিদের মুতওয়াল্লী আব্দুস সালাম (৫০) ও একই গ্রামের মৃত খলিল মিয়ার পুত্র হবিবুর রহমান (৭০) পুকুর থেকে তুলে নিয়ে পাশর্^বর্তী একটি জঙ্গলে নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে আব্দুস সালাম ও হাবিবুর রহমান পালাক্রমে ধর্ষণ করেছে মর্মে অভিযোগ এনে ভিকটিমকে ওসমানী হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করেন। পরে এ তিন জনের বিরুদ্ধে আব্দুল হান্নানের পুত্র আব্দুল কাদির (২৮) বাদী হয়ে সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুানাল আদালতে ৪ নভেম্বর নারী ও শিশু মোকদ্দমা নং- ৫৫৫ দায়ের করেন। আদালত বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কানাইঘাট থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন। দরখাস্তে আব্দুল কাদির উল্লেখ করেছেন তার বোনকে পালাক্রমে ধর্ষণের পর কানাইঘাট থানায় অভিযোগ করতে আসলে পুলিশ অভিযোগ নেয়নি।

কিন্তু দরখাস্ত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার এসআই স্বপন চন্দ্র সরকার জানিয়েছেন, থানায় এ ধরনের অভিযোগ নিয়ে ভিকটিমের পরিবারের কেউ আসেনি। এ ধরনের ধর্ষণের ঘটনা বাখালছড়া গ্রামে ঘটেনি বলে তারা তাৎক্ষণিক খোঁজখবর নিয়ে জানতে পেরেছেন। তার ধারনা মামলা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে আব্দুল জব্বার ও তার মামলার সাক্ষীদের ফাঁসানোর জন্য মূলত এ ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হতে পারে। ঘটনাটি গভীর ভাবে তদন্ত করে প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন এবং এর সাথে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে এস.আই স্বপন চন্দ্র সরকার জানান।

এ ধর্ষণ মামলার আসামী আব্দুল জব্বার কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, তার বসত বাড়িটি জোরপূর্বক ভাবে দখল করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে আব্দুল হান্নান গংরা পায়তারা চালিয়ে আসছেন, বিভিন্ন সময় তার পরিবারের সদস্যদের উপর হামলা করেছে। এসব হামলা এবং তার ভাইয়ের স্ত্রীর গর্ভের সন্তান আব্দুল হান্নান ও তার পরিবারের লোকজন বেদড়ক মারপিট করে নষ্ট করে দেয়ায় এবং মৃত সন্তান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রসব করার ঘটনায় তিনি কানাইঘাট থানা ও আদালতে পৃথক মামলা করেন। এসব মামলা দায়েরের পর থেকে আব্দুল হান্নানের পরিবারের লোকজন তাকে সহ তার মামলার সাক্ষীদের ধর্ষণ সহ নারী নির্যাতন মামলা দিয়ে হয়রানি করবে বলে হুমকি প্রদান করায় কয়েকদিন পূর্বে থানায় এ সংক্রান্ত জিডিও করেন। তার দাবী আব্দুল হান্নান তার মেয়েকে এলাকার কয়েকজনের হাতে তুলে দিয়ে ধর্ষণ করিয়ে এখন আমি সহ আমার মামলার দুইজন সাক্ষীর বিরুদ্ধে সেই ধর্ষণের মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। ঘটনার দিন তিনি সিলেট শহরে ছিলেন। জব্বারের মামলার সাক্ষী হবিবুর রহমান ও আব্দুস সালাম বলেন, তারা জব্বারের পক্ষে মামলার সাক্ষী দেয়ার কারনে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য আব্দুল হান্নান তার মেয়েকে দিয়ে ধর্ষণ মামলা দিয়ে তাদের হয়রানির চেষ্টা করছে। বিষয়টি তদন্ত করে ঘটনার সাথে তারা যদি জড়িত থাকেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক, নতুবা যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান তারা। এলাকার অনেকের সাথে কথা বললেও ধর্ষণের ঘটনা তারা জানেন না, এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে নিরীহ লোকজনদের হয়রানি করায় এলাকায় তোলপাড়ও চলছে বলে সবাই জানান। ভিকটিম ও মামলার বাদীকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে বলে অনেকে জানিয়েছেন।

ধর্ষণ মামলার বাদী আব্দুল কাদির ও তার মা আমিনা বেগমের সাথে কথা হলে মা আমিনা বেগম বলেন, তার মেয়েকে ধর্ষণ করে নিখোঁজ করেছে মামলার আসামীরা। বর্তমানে তার মেয়ে কোথায় রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেয়ের কোন সন্ধান পাচ্ছেন না তিনি। আব্দুল কাদির বলেন, তার বোন ওসমানী হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি রয়েছে, অনেক কথার সদোত্তর না দিয়ে বলেন মামলায় যাদের আসামী করা হয়েছে তারাই তার বোনকে ধর্ষণ করেছে। এলাকাবাসী বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ সহ এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে থানা পুলিশকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। থানার ওসি মোঃ শামসুদ্দোহা পিপিএম জানান ধর্ষনের মামলা নিয়ে কাউকে অযথা হয়রানী করার সুযোগ নেই। ঘটনাটি আমরা তদন্ত করে দেখছি কার এর সাথে জড়িত তাদের চিহ্নিত হলে ধর্ষনের ঘটনা সত্যি হলে সেই আলোকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়