কানাইঘাট লোভাছড়া পাথর কোয়ারিতে আটকে পড়া বিভিন্ন জেলার প্রায় ৫ শতাধিক পাথর বোঝাই বলগেট, কার্গ, বাল্কহেড জাহাজের চালক ও শ্রমিকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার সামনে অবস্থান করে তাদের পাথর বোঝাই বাহনগুলো ছেড়ে দেওয়ার জন্য অবস্থান করেন।
মঙ্গলবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টার দিকে প্রথমে প্রায় ৩ শতাধিক পাথরবাহী নৌযানের চালক, চুকানিসহ শ্রমিকরা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করে তার সাথে দেখা করার জন্য চেষ্টা করলে ইউএনও বারিউল করিম খান অসুস্থ থাকায় তার সাথে দেখা করতে তারা পারেনি।
এ সময় কোয়ারিতে প্রশাসনের বাঁধায় আটকে পড়া নৌযান চালক ও শ্রমিকরা তাদের দুঃখ দুর্দশার কথা ইউএনও’র অধীনস্থ অফিসের কর্মকর্তাদের কাছে তুলে ধরেন। পরে তারা কানাইঘাট থানার মূল ফটকের সামনে প্রায় ১ ঘণ্টা অবস্থান করে থানার ওসি শামসুদ্দোহা পিপিএমের সাথে কয়েকজন নৌযান চালক মালিক ও শ্রমিকরা সাক্ষাত করেন।
অবস্থানকালে সুনামগঞ্জ জেলার নৌযান চালক মনির আহমদ, তাজিম উদ্দিন, বাছিত, কিশোরগঞ্জ জেলার জামাল উদ্দিন, বি-বাড়িয়া জেলার ইউসুফ, ছাতকের জুবায়ের, রেজাউল, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জুলহাস, সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জের আব্দুল গফফারসহ অর্ধ শতাধিক নৌযান চালক ও শ্রমিকরা বলেন, মঙ্গলবার থেকে অনুমান ১৫ দিন পূর্বে লোভাছড়া পাথর কোয়ারির ব্যবসায়ীরা কোয়ারি থেকে পাথর নৌপথে পরিবহনে কোন ধরনের বাঁধা নিষেধ নেই। উচ্চ আদালত পাথর পরিবহনের অনুমতি দিয়েছেন এমন আশ্বাস দিয়ে ৫ শতাধিক পাথরবাহী নৌযান লোভা কোয়ারিতে আমাদের নিয়ে আসেন। যথারীতি আমরা কোয়ারিতে পাথর বোঝাই করে নৌযানগুলো নৌপথে ছেড়ে দেয়ারকালে ১০/১২দিন পূর্বে উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ কানাইঘাটের বিভিন্ন এলাকার সুরমা নদীতে আমাদের পাথরবাহী নৌযানগুলো আটক করে রাখেন। আটককৃত নৌযানগুলিতে নি¤েœ ২ হাজার থেকে ঊর্ধ্বে ২৫ হাজার ঘনফুট পর্যন্ত পাথর রয়েছে বলে তারা জানান। যার কারণে আমরা নৌপথে পাথর নিয়ে যেতে পারছি না। অনেক পাথর বোঝাই নৌযান ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। প্রশাসন অভিযান চালিয়ে আমাদের অনেক নৌযানে ইঞ্জিন ভাংচুর করে ক্ষতিসাধন করে।
তারা বলেন, পাথর বোঝাই বাহনগুলোর প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা করে তারা ভাড়ায় নিয়ে লোভা কোয়ারিতে এসেছেন। নৌযানগুলো ১০/১২দিন থেকে আটকে থাকার কারণে তারা বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তাদের পরিবারের সদস্যরা অনাহারে অর্ধাহারে জীবন করছেন। যেসব পাথর ব্যবসায়ীরা তাদের কোয়ারিতে নিয়ে এসেছিলেন তারাও কোন ধরনের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন না। অনাহারে-অর্ধাহারে অর্থের অভাবে নৌযানগুলো কয়েক’শ চালক ও শ্রমিকরা অবস্থান করছেন। প্রতিদিন তাদের গড়ে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। অথচ আমাদের নৌযানগুলো আটক রাখা হলেও স্থানীয় পাথরবাহী নৌযানগুলো প্রশাসনের চোখের সামনে কোয়ারি থেকে প্রতিদিন পাথর লোড-আনলোড করে যাচ্ছে।
এমন অবস্থায় বাধ্য হয়ে আজ তাদের দুঃখ দুর্দশার কথা তোলে ধরার জন্য ইউএনও ও থানার ওসির সাথে সাক্ষাত করার জন্য এসেছিলেন। কিন্তু ইউএনওকে পাননি, ওসি শামসুদ্দোহার সাথে সাক্ষাত করলে তিনি নৌযান চালক ও শ্রমিকদের দুঃখ দুর্দশার কথা শুনে পাথরবাহী নৌযানগুলো ছেড়ে দেয়ার ক্ষমতা নেই বলে তাদের জানান। আপনাদের কথাগুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলবেন বলেও জানিয়েছেন।
পাথরবাহী নৌযান চালক ও শ্রমিকরা বলেন, তাদের একটাই দাবি আটককৃত পাথরবাহী নৌযানগুলোর পাথর রেখে দিয়ে তাদের নৌযানগুলো ছেড়ে দেয়া হউক নতুবা তাদের পাথর নিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হোক। আর কখনো তারা লোভাছড়া কোয়ারিতে আসবে না। এছাড়া সুরমা নদীর পানি কমে গেলে তাদের নৌযানগুলো তারা নিয়ে যেতে পারবেন না। তাদের এই করুন অবস্থা বিবেচনা করে নৌযানগুলো ছেড়ে দেয়ার জন্য সিলেটের ঊর্ধ্বতন প্রশাসনসহ সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
খবর বিভাগঃ
প্রতিদিনের কানাইঘাট
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়