Saturday, August 29

লোভাছড়া কোয়ারি থেকে পাথর পরিবহনে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা

নিজস্ব প্রতিবেদক:   
উচ্চ আদালতের অনুমতি থাকার পরও সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লোভাছড়া পাথর কোয়ারি থেকে পাথর পরিবহনে প্রশাসন বাধা প্রদান করে আসছে- এমন অভিযোগ এনে পাথর ব্যবাসায়ী ও শ্রমিকরা সভা, সমাবেশ, মানববন্ধন, অবস্থান ধর্মঘটসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন। এর ধারাবাহিকতায় পাথর পরিবহনের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য সরকারের উচ্চমহলসহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করে আজ শনিবার (২৯ আগস্ট) বেলা ৩টায় কানাইঘাট প্রেসক্লাব কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠকালে পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি আব্দুল হেকিম শামীম বলেন, লোভাছড়া পাথর মহাল দেশের একটি প্রাচীণতম কোয়ারি। যুগ যুগ ধরে এখান থেকে পাথর ব্যবসায়ীরা প্রতিবছর শুকনো মৌসুমে কোয়ারির ইজারাদারের কাছ থেকে পাথর ক্রয় করে লোভা নদীর দুই তীরে বিভিন্ন ব্যক্তির মালিকানাধীন জমিতে স্তুপ করে রাখেন এবং বর্ষা মৌসুমে পাথর নদীপথে পরিবহন করে থাকেন। করোনা দুর্যোগকালীন সময়ে গত ১৩ এপ্রিল কোয়ারির লিজের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় শ্রমিক সংকট ও নৌযান চলাচলে সীমাবদ্ধতার কারণে লিজের মেয়াদকালীন সময়ে কোয়ারি থেকে নৌপথে তারা পাথর পরিবহন করতে পারেননি। এমতাবস্থায় গত ১৫ জুলাই পরিবেশ অধিদপ্তর বেআইনিভাবে লোভা নদীর দুই তীরের ব্যবসায়ীদের স্তুপকৃত ১ কোটি ঘনফুট পাথর জব্দ করে তিন দফা নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। কিন্তু সর্বশেষ গত ১২ আগস্ট শেষ দফায় নিলাম বিজ্ঞপ্তির নিলামের তারিখ ধার্য থাকার পরও এই ব্যাপারে কোনো সিন্ধান্ত হয়নি। ব্যবসায়ীদের ক্রয়কৃত পাথর পরিবেশ অধিদপ্তর জব্দ করায় কোয়ারির ৫ জন ব্যবসায়ী মহামান্য হাইকোর্টে ৫টি রিট মামলা করেন। এর মধ্যে ভিসি রিট পিটিশন নং- ১০৩১/২০, ১০৫০/২০, ১০৫৫/২০ মামলায় বিগত ২৮ জুলাই ৩০ দিনের মধ্যে পাথর সরিয়ে নেওয়ার অনুমতি দিলেও সিলেটের নির্বাহী প্রশাসন আমাদের কোনো পাথর সরাতে দিচ্ছেন না। এভাবে তামিল ছাড়াই তিন রিটের মেয়াদ শেষ হয়। এখন ভিসি রিট পিটিশন নং- ৫১/২০ ও ৮২/২০ মামলার আদেশের মেয়াদও শেষ হওয়ার পথে।

তিনি বলেন, এ অবস্থায় ব্যবসায়ীরা মামলার সার্টিফাই আদেশ ও মালিকানার কাগজসহ সিলেটের জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক ও কানাইঘাটের ইউএনও অফিসে বার বার ধর্না দিলেও তারা তা গ্রহণ করে কোনো সমাধান দিচ্ছেন না। প্রশাসন উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বার বার উপেক্ষা করায় শত শত ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা পাথর পরিবহনের সুযোগ দেওয়ার জন্য অদ্যাবধি পর্যন্ত সরকারের উচ্চমহলের সুদৃষ্টি কামনা করে নানা ধরণের কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন, যা আপনারা সংবাদ মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছেন। এ অবস্থায় সুরমা নদীতে আমাদের দুই শতাধিক পাথর বোঝাই নৌকা আটকা পড়ে আছে। ডুবে গেছে ১৪টি নৌকা। অন্য নৌকাগুলোও ডুবুডুবু। মাত্র ২০/২৫ দিন পর সুরমা ও লোভা নদীর পানি শুকিয়ে যাবে। তখন অনুমতি পেলেও পাথর পরিবহন সম্ভব হবে না। ফলে ব্যবসায়ীরা কোটি কোটি টাকা লোকসানের সম্মুখীন হবেন। তারা পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাবেন। অনেক ব্যবসায়ীর আত্মহত্যা ছাড়া আর কোনো পথ থাকবে না।

এ অবস্থায় সংবাদ সম্মেলনে পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা উচ্চ আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে তাদের পাথর দ্রুত নৌপথে পরিবহনের জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে পাথর ব্যবসায়ীরা বলেন, লোভাছড়া কোয়ারিতে লাখো মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। সিলেটে অবস্থানরত মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মোহাম্মদ কামাল হোসেন মহোদয় আগামীকাল রবিবার লোভাছড়া পাথর কোয়ারি পরিদর্শনে আসবেন। কোয়ারির কার্যক্রম যেন সচল থাকে, পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা যেন তাদের পাথর পরিবহন করতে পারেন, সেজন্য তার হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ব্যবসায়ীরা। 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, মুলাগুল আদর্শ পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন, সহ-সভাপতি ও জেলা পরিষদের সদস্য আলমাছ উদ্দিন, লোভাছড়া পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান পাথর ব্যবসায়ী শমসের আলম, সাবেক ইউপি সদস্য পাথর ব্যবসায়ী ফখরুদ্দিন চৌধুরী, পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সচিব খাজা শামীম আহমদ শাহীন, রিটকারী পাথর ব্যবসায়ী মঈনুল হক, বিলাল আহমদ, এনামুল হক, উপজেলা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক জুনেদ হাসান জীবনসহ অর্ধশতাধিক পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়