Thursday, July 16

ইফজালের মৃত্যু রহস্য উদঘাটনের আশ্বাস

কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক :
সিলেট এমসি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র ইফজাল আহমদের হত্যারহস্য উদঘাটন ও বিচারের দাবি নিয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন ইফজালের মা আছারুন নেছা। 

আজ (১৬ জুলাই) দুপুরে এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। 

ছেলের হত্যারহস্য উদঘাটন এবং খুনীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনতে তিনি পুলিশ কমিশনারের কাছে অনুরোধ করেন। 

তিনি একটি লিখিত আবেদনও জমা দেন। 

এ সময় তাঁর সাথে উপস্থিত ছিলেন ইফজাল আহমদের চাচাতো চাই ব্যাংক কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দীন এবং তাদের ভাতিজা মাসুম আহমদ।

গিয়াস উদ্দীন বলেন, "সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার জনাব গোলাম কিবরিয়ার সাথে তাঁর অফিসে আমাদের সাক্ষাৎ হয় এবং অনেকক্ষণ কথা হয়। তিনি আমাদের কথা অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে শুনেছেন। এই সময় তিনি আমাদের কাছে বিভিন্ন বিষয়ও জানতে চান। আমাদেরকে আশ্বাস দিয়েছেন, ইফজালের মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে পুলিশ আন্তরিকতার সাথে কাজ করবে। পুলিশ কমিশনার হিসেবে এ বিষয়ে তিনি যথাযথ ভূমিকা রাখবেন বলেও আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।"

গিয়াস উদ্দীন আরো বলেন, তারা এই নিয়ে আদালতে মামলা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আইনজীবিদের পরামর্শে তারা পুলিশ কমিশনারের সাথে দেখা করে ইফজালের হত্যারহস্য উদঘাটন ও সুষ্ঠু তদন্তের জন্য আবেদন জমা দিয়েছেন। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন যে, পুলিশি তদন্তের মাধ্যমে অতি দ্রুত হত্যারহস্য উদঘাটিত হবে এবং খুনীরা চিহ্নিত হবে। তিনি যোগ করেন, যদি এই হত্যার কোন ক্লু তারা পান কিংবা সন্দেহভাজন কারো নাম তাদের অবগতিতে আসে, তাহলে তারা আদালতে মামলা করবেন। ইফজাল হত্যা রহস্য উদঘাটনে করণীয় সব কাজ তাদের পক্ষ থেকে করা হবে বলে তিনি জানান। 

গত ২৫ জুন ২০২০ ইং তারিখে সিলেট উপশহরের একটি ভবনের নীচ থেকে ইফজালের লাশ উদ্ধার করা হয়। ইফজাল ওই ভবনের তিন তলায় তার বোন নাসিমা বেগমের বাসায় থাকতেন। ২৬ জুন তারিখে শাহপরান থানায় এই নিয়ে নাসিমার ভাসুর আবুল হোসাইন একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন। গত ৮ জুলাই তারিখে ইফজালের মা সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, নাসিমার ভাসুর আবুলকে যেভাবে বলে পাঠানো হয়েছিল থানায়, অপমৃত্যু মামলার আবেদনে তাদের কথার কোন প্রতিফলন ছিলো না। সেই আবেদনে বলা হয়েছে, রাতের কোন এক সময়ে বাইরে সাড়াশব্দ পেয়ে বের হয়ে কোনভাবে পড়ে গিয়ে ইফজালের মৃত্যু হতে পারে; যে দাবী আছারুন নেছা প্রত্যাখান করেন। তাঁর ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে তিনি পিবিআই বা অন্য কোন বিশেষায়িত সংস্থা কর্তৃক তদন্তেরও দাবী জানিয়েছিলেন ওই সংবাদ সম্মেলনে।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আবুল হোসাইন বলেন, শাহপরান থানার ওসির পরামর্শক্রমে তারা অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছেন এবং আবেদন লিখেছেন। তিনি বলেন, ইফজালের মৃত্যুর বিষয়টি যাতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত হয়, এ নিয়ে তারা আন্তরিকভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পোস্ট-মর্টেম রিপোর্টও যাতে দ্রত আসে, সেজন্য তারা কাজ করছেন।  জানান, তিনি একাধিকবার সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে গিয়েছেন যাতে পোস্ট-মর্টেম রিপোর্ট দ্রত আসে এবং হত্যারহস্য দ্রুত উদঘাটিত হয়। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন যে, ঈদের আগেই হয়তো পোস্ট-মর্টেম রিপোর্ট হয়ে যাবে। 

ইফজাল আহমদের হত্যারহস্য উদঘাটন এবং খুনীদের চিহ্নিত করার দাবীতে সিলেট নগরী এবং কানাইঘাট উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় এ পর্যন্ত এক ডজনেরও বেশি প্রতিবাদ কর্মসূচী পালিত হয়েছে।  বিভিন্ন ব্যানারে জেলা, প্রশাসক ও পুলিশ কমিশনারকেও স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে। 

উল্লেখ্য, কানাইঘাট উপজেলার কাপ্তানপুর গ্রামের ইফজাল আহমদের হত্যাকান্ড বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নিতে ইফজালের পরিবারের প্রতি সাতদিনের আলটিমেটাম দিয়েছিলেন গবেষক ও সাংবাদিক এহসানুল হক জসীম। এ বিষয়ে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হলে, তিনি বলেন, "ইফজালের মা ও বাড়ির লোকজনের পক্ষ থেকে আইনগত পদক্ষেপ না নেওয়ায় আমরা ক্ষুব্ধ হয়েছিলাম। ইতোমধ্যে ইফজালের মা সংবাদ সম্মেলন করে সন্তানকে হত্যা করা হয়েছে দাবী করেছেন এবং বিচার চেয়েছেন। কোন হত্যাকান্ডের ক্লু কিংবা সন্দেহভাজন কারো নাম উল্লেখ করা না করলে আদালতে মামলা করার ক্ষেত্রে জটিলতা রয়েছে। যেহেতু জনাব গিয়াস উদ্দীন বলেছেন এই নিয়ে তারা আইনজীবিদের সাথে পরামর্শ করে পুলিশ কমিশনারের কাছে আবেদন জমা দিয়েছেন এবং সেথায় ইফজালকে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে সুষ্ঠু তদন্ত দাবী করেছেন, সেহেতু আমরা মনে করি পরিবারের পক্ষ থেকে এটা একটা আইনগত পদক্ষেপ। আমরা আশা করি, পুলিশ কমিশনারের হস্তক্ষেপে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে হত্যারহস্য বেরিয়ে আসবে। "

সিলেটের পুলিশ কমিশনারের সাথে দেখা করে আবেদন দাখিল করায় ইফজালের মা ও পরিবারকে অভিনন্দন জানান সাংবাদিক জসীম।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়