নিজস্ব প্রতিবেদক:
কানাইঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী লোভাছড়া
পাথর কোয়ারিতে বর্তমানে অচলাবস্থা বিরাজ করায় সার্বিক অবস্থা মনিটরিং
করছেন, সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের
কর্মকর্তারা।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত
কোয়ারি এলাকা পরিদর্শন করেন, সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক এমরান হোসাইন
ও সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের (এডিসি) রেবিনিউ আসলাম উদ্দিন। এ সময়
তাদের সাথে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বারিউল করিম খান, জেলা
প্রশাসক কার্যালয়ের অতিরিক্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মেজবাহ উদ্দিন,
কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ শামসুদ্দোহা পিপিএম।
এ সময় তারা গত ২ দিন থেকে পরিবেশ
অধিদপ্তরের উদ্যোগে এবং জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহযোগিতায় গত শুকনো মৌসুমে
কোয়ারি থেকে উত্তোলনকৃত মজুদকৃত পাথরের স্তুপ মাপজোকসহ সার্বিক বিষয়
মনিটরিং করেন।
পরিদর্শনকালে স্থানীয় সাংবাদিকদের বিভিন্ন
প্রশ্নের জবাবে পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের পরিচালক এমরান হোসাইন ও রেভিন্যু
কর্মকর্তা আসলাম উদ্দিন বলেন, প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রধানমন্ত্রীর
কার্যালয়ের নির্দেশে দেশের সমস্ত পাথর কোয়ারিগুলো থেকে পাথর উত্তোলন,
পরিবহন ও বিপননসহ ইজারা প্রক্রিয়া একেবারে বন্ধ রয়েছে। ভবিষ্যতেও কোন পাথর
মহাল ইজারা দেওয়া হবে না মর্মে সরকারের সিদ্ধান্ত রয়েছে। লোভাছড়া পাথর
কোয়ারি এলাকা আমরা পরিদর্শন করে সেখানে কি ধরনের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে
এবং কোয়ারির নির্দিষ্ট এলাকাসহ আশপাশ এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশ কেমন রয়েছে
তা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। কোয়ারিতে বর্তমানে কতটুকু মজুদকৃত পাথর রয়েছে তা
মাপজোক করা হয়েছে। সরকারের নির্দেশ ও উচ্চ আদালতের নির্দেশনার আলোকে
কয়েকদিনের মধ্যে কোয়ারিতে কি ধরনের কার্যক্রম করা যায় তা আপনারা জানবেন।
তবে সাধারণ খেটে খাওয়া শ্রমিকরা যাতে করে
কর্মহীন হয়ে না পড়েন এজন্য কোয়ারিতে যারা কাজ করে থাকেন তাদের বিকল্প
কর্মসংস্থানেরও চিন্তাভাবনা সরকারের রয়েছে বলেও তিনি আরো জানান।
এদিকে কোয়ারির সাবেক ইজারাদার মস্তাক আহমদ
পলাশ জানিয়েছেন, শুকনো মৌসুমে কোয়ারি থেকে উত্তোলনকৃত বেশির ভাগ পাথর তিনি
ব্যবসায়ীদের কাছে রশিদ মূলে বিক্রি করেছেন। করোনা পরিস্থিতি বিরাজ থাকায়
উত্তোলনকৃত মজুদকৃত পাথর নৌ-পথে পরিবহন ও বিপননে অচলাবস্থা দেখা দেয়। যার
কারণে অনেক পাথর কোয়ারির নির্দিষ্ট ইজারার মেয়াদকালীন সময়ে বিক্রি করতে
পারেননি। এ নিয়ে তিনি উচ্চ আদালতে মজুদকৃত পাথর পরিবহনের জন্য সময় চেয়ে
রীটপিটিশন মামলা দায়ের করলে বিজ্ঞ বিচারপতি তাকে ১৫ দিনের সময় দেন।
রীটপিটিশন উচ্চ আদালতে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানী থাকাকালীন অবস্থায় কোয়ারিতে
মজুদকৃত পাথরের ব্যাপারে প্রশাসনের কোন কার্যক্রম সমীচীন নয় বলে মনে করেন
তিনি এবং কোয়ারিতে কোন কার্যক্রম না করার জন্য অনুরোধ জানান।
এ সংক্রান্তে একটি লিখিত অভিযোগ বৃহস্পতিবার তিনি সিলেটের জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালককে দিয়েছেন।
এছাড়া পলাশ আরো বলেন, উচ্চ আদালতের
নির্দেশনা থাকার পরও কোয়ারি থেকে যারা মজুদকৃত পাথর পরিবহন করছেন তাদের
বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য ইতিমধ্যে উপজেলা নির্বাহী
কর্মকর্তার বরাবরে লিখিত আবেদন করেছেন এবং তদন্তক্রমে দায়ীদের বিরুদ্ধে
ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অনুরোধ জানান।
কোয়ারির অনেক পাথর ব্যবসায়ী জানিয়েছেন
কোয়ারিতে অচলাবস্থা বিরাজ করায় তারা গত শুকনো মৌসুমে কোয়ারির সাবেক
ইজারাদার মস্তাক আহমদ পলাশের কাছ থেকে বৈধ রশিদে পাথর ক্রয় করে বর্তমানে
তাদের মজুদকৃত পাথর বিক্রির জন্য নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এতে করে
তারা বড়ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
এদিকে উচ্চ আদালতের নির্দেশে পাথর কোয়ারি থেকে সব ধরনের পাথর পরিবহন ও বিপননের নিষেধাজ্ঞা জারী থাকায় এ ব্যাপারে
পরবর্তীতে কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন প্রয়োজন এ নিয়ে গত ৯ জুলাই উপজেলা
নির্বাহী কর্মকর্তা বারিউল করিম খান খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো (বিএমডি)’র
মহাপরিচালক বরাবরে একটি প্রতিবেদন পাঠান। খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর
মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. জাফর উল্লাহ লোভাছড়া পাথর কোয়ারির সাবেক
ইজাদার কর্তৃক হাইকোর্ট ডিভিশনের রীট পিটিশন নং-১২/২০২০ তারিখ-০৩-০৬-২০২০ইং
জারীকৃত আদেশ কি অবস্থায় রয়েছে তার আইনগত দিক অবহিতকরনের জন্য গত ১৫ জুলাই
সলিসিটর (যুগ্ম সচিব), সলিসিটর অনুবিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগকে একটি চিঠি
দিয়েছেন।
এছাড়া চিঠির অনুলিপির কপি এ্যাটর্নি
জেনারেলের কার্যালয়, হাইকোর্ট বিভাগ, সিনিয়র সচিব জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ
বিভাগ সচিবালয়, সচিব ভারপ্রাপ্ত আইন ও বিচার বিভাগ এবং বিভাগীয় কমিশনার
সিলেটকে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
কানাইঘাট নিউজ ডটকম/১৬ জুলাই ২০২০
খবর বিভাগঃ
প্রতিদিনের কানাইঘাট
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়