বিনোদন ডেস্ক:
মুম্বাইয়ের ধিরুভাই আম্বানি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায়
বুধবার সকালে মারা যান বলিউডের প্রভাবশালী অভিনেতা ইরফান খান। ২০১৮ সাল
থেকে তিনি নিউরোএন্ডোক্রাইন টিউমারে ভুগছিলেন। লন্ডনে এক বছর চিকিৎসা নিয়ে
বেশ সুস্থও হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি তার কোলনে সংক্রমণ শুরু হলে তিনি
আবারও হাসপাতালে ভর্তি হন। বুধবার সেখান থেকে বের হন লাশ হয়ে।
অতিমারী করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বের বহু দেশের মতো ভারতেও লকডাউন চলায়
মুম্বাইয়েই সমাহিত করা হয় ইরফান খানকে। সেখানকার ভারসোভা কবরস্থানে দাফন
করা হয় বলিউডের এই মুসলিম অভিনেতাকে। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন শুধু তার
পরিবারের সদস্য ও কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু। খ্যাতিমান এই অভিনেতার জীবনের এমন
কিছু বিষয় আছে, যা হয়তো অনেকেরই অজানা। যেমন-
এক. ইরফান খানের আসল নাম সাহাবজাদে ইরফান আলি খান।
অভিনেতা নিজের লম্বা নামটি শুনতে ভালোবাসতেন না। সে কারণে নামটি ছোট করে
ইরফান করে নেন। ২০১২ সালে নামের মধ্যে তিনি একটি অতিরিক্ত ‘R’ যোগ করেন।
কারণ তার এই শব্দটি শুনতে ভালো লাগত।
দুই. ইরফান খান দুর্দান্ত ক্রিকেটার ছিলেন। স্বপ্ন
ছিলেন বড় ক্রিকেটার হবেন। ভারতের জাতীয় স্তরের ক্রিকেটের ভিত্তি হিসেবে
পরিচিত সি কে নায়ুডু টুনার্মেন্টে খেলার জন্য নির্বাচিতও হয়েছিলেন। কিন্তু
প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে তিনি ওই টুর্নামেন্টে খেলতে পারেননি। এর পরই
ঘটানক্রমে তিনি হয়ে যান অভিনেতা।
তিন. ইরফান খান এম এ পড়তে পড়তেই ন্যাশনাল স্কুল অফ
ড্রামায় পড়ার জন্য একটি স্কলারশিপ পান। ভর্তির সময়ে তিনি নাকি তার
থিয়েটারের অভিজ্ঞতা নিয়ে মিথ্যে বলেছিলেন। ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামাতেই
তিনি দেখা পান তার স্ত্রী সুতপা শিকদারের।
চার. মুম্বাইতে যাওয়ার পর ইরফানের প্রথম চাকরি হয় একজন
এসি মেকানিকের। একটি কথা প্রচলিত আছে, চাকরির প্রথম দিকে তিনি নাকি তখনকার
সুপারস্টার রাজেশ খান্নার বাড়িতে এসি মেরামত করতে গিয়েছিলেন।
পাঁচ. বলিউড অভিনেতা হিসেবে পরিচিত হলেও ইরফান খান তার
অভিনয়ের কেরিয়ার শুরু করেছিলেন টেলিভিশনে। ‘চানক্য’, ‘ভারত এক খোঁজ’,
‘সারা জাহাঁ হামারা’, ‘বানেগি আপনি বাত’, ‘চন্দ্রকান্তা’ এবং ‘স্টার বেস্ট
সেলার্সে’র মতো ধারাবাহিকে তিনি অভিনয় করেন।
ছয়. হলিউডের কোনও ছবির প্রস্তাব বলিউডের অভিনেতারা
সাধারণত ফিরিয়ে দেন না। কিন্তু ক্রিস্টোফার নোলানের মতো নামকরা পরিচালককে
ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ইরফান। এই পরিচালকের ‘ইন্টারস্টেলার’ ছবিটিতে একটি
মোটামুটি চরিত্র ইরফান ফিরিয়েছিলেন, কারণ সে সময়ে তার ‘লাঞ্চ বক্স’ এবং ‘ডি
ডে’ ছবি দুটি হাতে ছিল।
সাত. আমেরিকার লস এঞ্জেলেস এয়ারপোর্টে ইরফানকে দুইবার আটকানো হয়েছিল। কারণ তার নামের সঙ্গে একজন আতঙ্কবাদীর নামের মিল ছিল।
আট. স্ত্রী সুতপা শিকদার একবার বলেছিলেন, ইরফানকে
সন্তুষ্ট করতে তাকে একটি চিত্রনাট্য ১১ বার লিখতে হয়েছিল। ইরফান তখন
‘বানেগি আপনি বাত’ ধারাবাহিকটির কয়েকটি পর্ব পরিচালনা করছিলেন। সুতপা ছিলেন
সেই ধারাবাহিকের চিত্রনাট্যকার।
নয়. ইরফানের অভিনয়ে আপ্লুত হয়েছিলেন জুলিয়া রবার্টসের
মতো হলিউড অভিনেত্রীও। অস্কার পুরস্কারের অনুষ্ঠান চলাকালীন জুলিয়া আলাদা
করে ডেকে নিয়ে মীরা নায়ার পরিচালিত ‘নেমসেকে’ ছবিতে ইরফানের অভিনয়ের
সুখ্যাতি করেছিলেন।
দশ. ইরফানের একটা অদ্ভুত স্বপ্ন ছিল। তিনি মাকে
স্যুটকেস ভর্তি টাকা দেবেন। ঠিক যেমন হিন্দি সিনেমায় দেখা যায়। ক্রিকেটার
হওয়ার স্বপ্ন পূরণ না হলেও অভিনেতা হয়ে এই স্বপ্নটা ঠিকই পূরণ করেছিলেন
ইরফান।
এগারো. ইরফান খানই একমাত্র বলিউড অভিনেতা, যার অভিনীত
দুটি ছবি অস্কার পুরস্কার জিতেছে। একটি ২০০৮ সালের ‘স্লামডগ মিলিওনেয়ার’,
অন্যটি ২০১২ সালের ‘লাইফ অফ পাই’।
খবর বিভাগঃ
বিনোদন
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়