রমজান শব্দটি আরবি রমজ ধাতু থেকে এসেছে। যার অর্থ পুড়িয়ে ফেলা, দহন করা,
জ্বালিয়ে দেয়া। সারা বছর আমাদের শরীর এবং মনের ওপর যে আবর্জনার আস্তর জমে
তা পুড়িয়ে ফেলে সুস্থতা আর শুদ্ধতার সন্ধান দেয় রমজান। প্রত্যেক সুস্থ ও
সক্ষম মুসলমানের জন্যে এ মাসে রোজা রাখা ফরজ।
রোজা হচ্ছে দ্বিমুখী- দেহশুদ্ধি এবং অন্তরশুদ্ধি। না খেয়ে থাকাটা রোজার
একটা অংশ। রোজার আরেকটি অংশ হলো- গীবত, রাগ, ক্ষোভ, ঘৃণা, ঈর্ষা অর্থাৎ যে
অন্যায় মানুষের মনকে কলুষিত করে তা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা। পানাহার
বর্জনের পাশাপাশি এ মাসে আমরা যখন আমাদের আচরণে, কথায় ও কাজে সংযমের পরিচয়
দেই তখন প্রকারান্তরে বাকি ১১ মাস আমরা সংযমী থাকার, ভালো থাকার
প্রস্তুতিটাই সেরে নেই।
রোজার শারীরিক উপকারিতা-
রসুলুল্লাহ (স) বলেছেন, ‘তোমরা রোজা রাখো যেন সুস্থ থাকতে পারো।’
রসুলুল্লাহ (স) বলেছেন, ‘তোমরা রোজা রাখো যেন সুস্থ থাকতে পারো।’
অনেকের ধারণা রোজা শরীরকে দুর্বল করে দেয়। অথচ গবেষণায় উঠে এসেছে রোজা
রাখলে শারীরিকভাবে অনেক উপকার পাওয়া সম্ভব। এ নিয়ে চমকপ্রদ সব তথ্য
বিজ্ঞানেও উঠে আসছে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত জাপানের অটোফেজি গবেষক
ইয়োশিনোরি ওহশোমি। তিনি জানান, রোজা বা উপবাসে সাময়িক খাদ্য সংকটকালে
দেহকোষের অভ্যন্তরে সৃষ্ট টক্সিনগুলোর বিনাশ ঘটে। এই প্রক্রিয়ার বৈজ্ঞানিক
নাম অটোফেজি।
জাপানের চিকিৎসাবিজ্ঞানী ইয়োশিনোরি ওহশোমির গবেষণা অনুসারে জানা যায়,
যখন দেহ ১২-১৬ ঘণ্টা না খেয়ে থাকে তখন অটোফেজি চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকে।
অপরদিকে গ্রীষ্মকালের দীর্ঘ সময়ের রোজা বেশি উপকারি। রোজা রাখলে যার
দেহে রক্তের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল রয়েছে তা কমে যায়। আলঝেইমার হান্টিংটন
পার্কিংসন্স এবং মস্তিষ্কের বয়সজনিত রোগগুলোর ঝুঁকিও কমে যায়। ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রণে থাকে। উচ্চ রক্তচাপ হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি এবং আলসারের সমস্যাও
কমে যায়। ওজন কমাতে চাইলে ডায়েটিং-এর চেয়ে রোজা বা উপবাস বেশি কার্যকরী।
এছাড়া রমজান মাস দুহাত ভরে পাওয়ার মাস। নবীজী (স) বলেছেন, ‘যে জীবনে
রমজান মাস পেল কিন্তু তার ভুল-ত্রুটি অন্যায় পাপাচার থেকে বেরিয়ে আসতে পারল
না, সে নিশ্চয়ই হতভাগা।’
রমজান মাসে মহান প্রভু তার বিশেষ অনুগ্রহে প্রত্যেকটি ভালো কাজের সওয়াব
বা বরকত ৭০ গুণ বা তার বেশি পরিমাণ দিয়ে থাকেন। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এ
মাস খাদ্য সংযমের মাস, পরিমিতিবোধের মাস, আত্ম উপলব্ধির মাস। কিন্তু
বেনিয়াদী পুঁজিবাদীদের দিয়ে প্রভাবিত হয়ে আমরা অনেকে ভোগের উৎসবে মেতে উঠি।
সংযমী হয়ে নিজেকে পরিশুদ্ধির চেয়ে খাবারে, কেনাকাটায় বা আচরণে অসংযম,
আসক্তি বা অস্থিরতা এখন দৃশ্যমান।
কিছু ভ্রান্ত ধারণা অনেকের মধ্যেই ছিল বা এখনও আছে। যেমন-
১. রমজানে খাবারের কোনও হিসাব দিতে হয় না।
২. সারাদিন কিছু খাব না তাই ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত যত পারো গলধঃকরণ করো।
৩. রোজা শরীরকে দুর্বল করে দেয় ইত্যাদি।
১. রমজানে খাবারের কোনও হিসাব দিতে হয় না।
২. সারাদিন কিছু খাব না তাই ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত যত পারো গলধঃকরণ করো।
৩. রোজা শরীরকে দুর্বল করে দেয় ইত্যাদি।
আসলে এই সব ভ্রান্ত ধারণাগুলোর জের ধরেই রমজানকে ভোজন উৎসবের মাসে পরিণত
করেছে এক শ্রেণির মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ী। রোজাদারেরাও সারাদিন খায়নি
ভেবে দেদারসে কিনে নেয় এই সব খাবারের নামে আবর্জনাকে, যা মূলত স্বাস্থ্যের
জন্যে ভয়ানক ক্ষতিকর এবং রমজানের শিক্ষার পরিপন্থী। বিশেষ করে খালি পেটে এ
সব ভাজাপোড়া একেবারেই স্বাস্থ্যকর বা সহনীয় নয় শরীরের জন্যে।
হযরত আনাস ইবনে মালিকের (রা) বর্ণনা থেকে জানা যায়, নবীজী ইফতার করতেন
তাজা খেজুর দিয়ে, যদি তাজা খেজুর না পাওয়া যেত তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে আর
যদি তা-ও না পাওয়া যেত তাহলে কয়েক ঢোক পানি পান করে। (আবু দাউদ) এরপর তিনি
মাগরিবের নামাজ পড়ে নিতেন।
প্রতিটি কাজে স্রষ্টার বিধান খেয়াল রাখা মানেই আল্লাহ-সচেতনতা। কোরআন
চর্চা এ সচেতনতা বাড়ায়। ফজরের নামাজের পর বা সারাদিনে অন্তত ৩০ মিনিট পড়ুন
আল কোরআন ও বাংলা মর্মবাণী। আল্লাহর মহিমা ও গুণাবলি নিয়ে ভাবুন। সময় পেলেই
কোরআনের অডিওগুলো শুনুন। জীবনকে সুন্দর অর্থবহ পরিতৃপ্তিময় ও বিকশিত করার
জন্যে কোরআনের জ্ঞানের কোনও বিকল্প নাই। একজন মানুষের জন্যে সবচেয়ে
প্রয়োজনীয়, উপকারি ও কল্যাণকর কাজ হচ্ছে কোরআনের জ্ঞান অর্জন করা।
এছাড়া যাকাতদাতা হওয়া অত্যন্ত সৌভাগ্যের ব্যাপার। রূপার বর্তমান বাজারদর
হিসেবে আপনার কাছে যদি ৪৫ হাজার টাকা একবছর সঞ্চয় থাকে তাহলে আপনি
সৌভাগ্যবান যাকাতদাতা। আসলে যাকাত দিলে সম্পদ বাড়ে।
আসলে রমজান হলো ইবাদতের মৌসুম। হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রমজান
মাস এসেছে কি না তা আমরা রসুলুল্লাহকে (স) দেখে বুঝতে পারতাম। অর্থাৎ অন্য
সময়ের তুলনায় এ মাসে তার ইবাদত বন্দেগি বেড়ে যেত। যার ফলে অন্যরা তাকে
দেখে বুঝতেন যে, এখন রমজান চলছে। রমজান অত্যন্ত বরকত নিয়ে আসে। তাই রমজানের
প্রথম ১০ দিন রহমত/ দয়া কামনা করে, দ্বিতীয় ১০ দিন মাগফেরাত/ ক্ষমা চেয়ে
এবং তৃতীয় ১০ দিন নাজাত/ পরিত্রাণের জন্যে দোয়া করুন।
সুতারাং রমজান পালনের জন্য আমরা এখনই প্রস্তুতি নেই। যেন সঠিক ভাবে
রমজানের সকল ইবাদত পালন করে, নতুন এক আলোকিত মানুষে রূপান্তরিত হতে পারি।
এই প্রার্থণা করুণাময়ের দরবারে।
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়