কোভিড-১৯ এর মহামারি ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত কানাইঘাট উপজেলার ২০ থেকে ২৫ হাজার রেমিটেন্স যোদ্ধা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলো, আমেরিকা, কানাডা, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশে করোনা মহামারি হিসেবে ছড়িয়ে পড়ায় এসব দেশে গত কয়েক মাস থেকে লকডাউন ও সাটডাউন থাকায় একেবারে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন কানাইঘাটের প্রবাসীরা।
ইউরোপের ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, স্পেন, জার্মানি, ইতালি, পর্তুগাল, সুইডেন ও আমেরিকা, কানাডা, ব্রাজিল এবং মধ্যপ্রাচ্যের সৌদিআরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, বাহরাইন, লিবিয়া, মসকট, লেবানন, ওমান, কাতার, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুর, আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণ আফ্রিকাসহ অন্যান্য দেশগুলোতে কানাইঘাট উপজেলার প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার প্রবাসী রয়েছেন। কোন কোন দেশে ৩ থেকে ৪ মাস ধরে করোনার কারণে লকডাউন থাকায় এসব দেশের দৈনন্দিন কার্যক্রম এবং কর্মস্থল, শপিং মল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মিল-কারখানা, প্রাইভেট যানবাহন, কন্ট্রাশন ও ইমারতের যাবতীয় কার্যক্রম একেবারে বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন এসব প্রবাসীরা।
অনেক প্রবাসী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপে জানিয়েছেন, তারা ঘরবন্দী হয়ে অত্যন্ত দুর্ভোগের মধ্যে সময় পার করছেন। ঘর থেকে বের হলেই তাদেরকে মোটা অংকের জরিমানা দিতে হয়। যার জন্য শত শত প্রবাসী খাদ্য সংকটেও ভোগছেন। কয়েক মাস থেকে কোন ধরনের বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না তারা। কর্মস্থলের মালিক পক্ষ তাদের খোঁজখবর নিচ্ছেন না অনেক ক্ষেত্রে। অসংখ্য প্রবাসীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য কাজকর্ম বন্ধ থাকায় তারা বড় ধরনের লোকসানের শিকার হচ্ছেন।
ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর মিছিল চলছে। সৌদিআরব, কুয়েত, কাতার, আরব-আমিরাতে বসবাসরত প্রবাসীরা জানিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে করোনা ভয়াল রূপ নিচ্ছে। এসব দেশে প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছেন হাজার হাজার লোকজন। অনেক বাংলাদেশি প্রবাসী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এবং শতশত আক্রান্তও হয়েছেন। তারমধ্যে কানাইঘাটেরও কয়েকজন রয়েছেন। কানাইঘাটের একজন ইতোমধ্যে করোনায় মারা গেছেন। ভয়ের মধ্যে ঘরবন্দী হয়ে প্রবাসীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বেতন-ভাতা বন্ধ থাকায় তারা বাড়িতে স্বজনদের কাছে টাকা পাঠাতে পারছেন না ও স্বজনদের অনেক ক্ষেত্রে খোঁজও নিতে পারছেন না।
এরমধ্যেও অনেক রেমিটেন্স যোদ্ধা দেশের এই দুর্যোগ মুহূর্তে প্রবাস থেকে টাকা পাঠিয়ে অসহায় পরিবারগুলোর পাশে খাদ্য নিয়ে দাঁড়িয়েছেন। বর্তমানে এলাকায় অবস্থানরত অনেক প্রবাসী ব্যক্তি উদ্যোগে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাজার হাজার প্রবাসীর বেতন-ভাতা একেবারে বন্ধ থাকায় বাড়িতে টাকা পাঠাতে না পারায় শতশত প্রবাসী পরিবার এই দুর্যোগে চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন। কারণ, অসংখ্য পরিবারের চাকা চলে একমাত্র প্রবাসীদের উপার্জিত অর্থে। অনেকে দৈনন্দিন খাবারসহ জিনিসপত্র কিনতে পারছেন না। কিন্তু তাদের চরম দুর্ভোগের কথাও সামাজিক লাজ-লজ্জার কারণে কারো কাছে বলতে পারছেন না। অপরদিকে প্রবাসী পরিবারের সদস্য ও তাদের স্বজনরা সব-সময় উৎকন্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
করোনার এই মহামারি দুর্যোগের মুহুর্তে প্রবাসীদের পরিবারে খোঁজখবর নিচ্ছেন গণমাধ্যম কর্মীরা। তাদের কাছে প্রবাসী পরিবারের সদস্যরা তাদের দুর্ভোগের কথা বলেছেন। বর্তমানে ছুটিতে থাকা এলাকায় অবস্থানরত অসংখ্য প্রবাসী পুনরায় তাদের কর্মস্থলে প্রবাসে যেতে পারবেন কি না এ নিয়েও চিন্তিত রয়েছেন। অনেকেরই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এখন তাদের হাতে কোন ধরনের টাকা পয়সা না থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
এই মুহুর্তে আর্থিক সংকটে প্রবাসী পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ছুটিতে থাকা সৌদিআরব প্রবাসী নুরুল ইসলাম, বশির আহমদ, আরব আমিরাত প্রবাসী রুবেল আহমদ, নজমুল আহমদসহ কানাইঘাটের সচেতন মহল ও প্রবাসী সংগঠনগুলো।
ফ্রান্স প্রবাসী হাফিজ মঈন উদ্দিন, যুক্তরাজ্য প্রবাসী ফখরুদ্দিন, কানাডা প্রবাসী সাবেক সংবাদকর্মী জামাল উদ্দিন, সৌদিআরব প্রবাসী আলিম উদ্দিন রফিকসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত অসংখ্য প্রবাসীরা জানিয়েছেন, তারা প্রবাসে করোনার কারণে আতংকের মধ্যে দিনযাপন করছেন। তারপরও তারা নিজ মাতৃভূমির জন্য এই সংকট মুহূর্তে সবাইকে সচেতন থাকার পাশাপাশি অসহায় পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকার তথা বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
কানাইঘাট নিউজ ডটকম /২২ এপ্রিল ২০২০
খবর বিভাগঃ
প্রতিদিনের কানাইঘাট
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়