করোনাভাইরাসের আতংকের মধ্যে ভিন্ন এক পরিবেশে এবার এলো মাহে রমজান।
এবার হবে না ইফতার পার্টি, ইফতারের সময়েও থাকবে না খুব একটা উৎসবমুখর পরিবেশ। তারপরও সেহরী হবে, ইফতার হবে। সবকিছুর পরেও এই পবিত্র মাসের সবচেয়ে সুন্দর, আনন্দঘন এবং উৎসবমুখর সময় হল ইফতারের মুহুর্ত। রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনগুলোর ইফতার পার্টি আয়োজনের সংবাদ থাকবে না এবার; থাকবে না আত্মীয়-স্বজন আর বন্ধু-বান্ধবদের উপস্থিতিতে ইফতারের আয়োজন। তবুও ইফতারের সময় ঘরে ঘরে বিরাজ করবে এক উৎসবমুখর পরিবেশ।
ঢাকায় বাস বহু বছর যাবত। ঢাকা প্রতিনিধিত্ব করে দেশের। সে হিসেবে বলি, ঢাকার বা আমাদের দেশে ইফতারের মূল বা অপরিহার্য আইটেম বুট-মুড়ি বা ছোলা-মুড়ি। এছাড়া পরিচিত অন্যান্য ইফতার আইটেমগুলোর মধ্যে পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চাপ ইত্যাদি। বলা চলে ভাজা-পোড়া এবং মুখরোচক খাবারই ইফতার আইটেম।
ইফতারের অপরিহার্য আইটেম 'ছোলা-মুড়ি' সিলেটে প্রায় অচল ও অপরিচিত। সিলেটের ইফতার আইটেম সাপোর্ট করি। কারণ, ভাজা-পোড়া খাবার কোনভাবেই স্বাস্থ্যকর নয়। সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজন স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের। অথচ আমরা আস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করছি সারাদিন রোজা রাখার পর।
সিলেট অঞ্চলের ইফতার আইটেমকে তুলনামূলক স্বাস্থ্যকর বলা যেতে পারে। অবশ্য, ভাজা-পোড়া বা মুখরোচক খাবার যে সিলেট অঞ্চলের ইফতারীতে একেবারেই নেই- বিষয়টি কিন্তু এমন নয়। তবে মূল আইটেম হিসেবে নয়। পুরো সিলেট জুড়ে ইফতারের মূল আইটেম হচ্ছে ঘরোয়া পরিবেশে তৈরী সিলেটি খিচুড়ি বা পাতলা খিচুড়ি এবং আখনি। এর যে কোন একটি না হলে চলেই না।
অবশ্য, সাম্প্রতিক সময়ে পোলাও যোগ হয়েছে অনেকের ইফতারের আইটেমে। যাহোক, সিলেটি খিচুড়ি ও আখনি- এই দুই পদই ইফতারে সিলেটিদের সবচেয়ে প্রিয়। এর বাইরে খেজুর, শরবত, ফল-মূল, জিলাপি, ছোলা-পেঁয়াজু, পাকুড়া, চপ ইত্যাদি আইটেম তো আছেই। আইটেম যতই থাকুক না কেন, আখনি-খিচুড়ি সিলেটের স্থানীয় ঐতিহ্য।
ফলে দেখা যায়, ঢাকার যেসব এলাকার আবাসিক হোটেলে সাধারণত সিলেটিরা বেশি উঠে থাকেন, এই যেমন ফকিরাপুল, ইত্যাদি এলাকার কিছু কিছু খাবার হোটেলে ইফতারী হিসেবে পাতলা খিচুড়িরও আয়োজন থাকে।
খিচুড়ি তো দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও আছে; বৃষ্টিভেজা দিনে অনেকেই খিচুড়ি খায়। তারপরও কেন বলছি 'সিলেটি খিচুড়ি'। কারণ তো আছে। সিলেটি খিচুড়ি হচ্ছে এক প্রকার নরম খিচুড়ি; সেরকম করে খিচুড়ি রান্না করা হয় না অন্যান্য অঞ্চলে। অন্যান্য অঞ্চলের খিচুড়িকে ভুনা খিচুড়ি বলা যায়। সিলেটি রন্ধনশৈলীতে পাতলা খিচুড়ি একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার হিসেবে বিবেচিত।
রান্নার আগে চাল ও ডাল ভালভাবে ধুয়ে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হয়। বেশি পানির সাথে চাল, ডাল, পিঁয়াজকুঁচি ইত্যাদি উপকরণযোগে খিচুড়ি বানানো হয়। চুলার উপর থাকাবস্থায় যত বেশি নাড়াচাড়া করা হবে, চাল ততো বেশি ভেঙে যাবে; খিচুড়ি আরো মাজাদার হয়ে উঠবে।
পাতলা খিচুড়ি তথা সিলেটি খিচুড়ি ইফতার আইটেম হিসেবে খুবই উপকারী।
রোজা রাখার পর শরীর অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ে। সারাদিন অভুক্ত থেকে ভাজা-পোড়া খাবার খেলে পেটে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। ইফতারে নরম খিচুড়ি তাই খুবই স্বাস্থ্যসম্মত। এ্রই নরম বা পাতলা খিচুড়িতে মশলা দেওয়া লাগেনা। রমজান মাসে মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা ভালো বলে পুষ্টিবিদরা বলে থাকেন।
অন্যদিকে, আখনিও সিলেট অঞ্চলেে একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার হিসেবে বিবেচিত। অবশ্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে আখনির প্রচলন আছে; তবে একটু ভিন্নতা আছে। এই আখনি তৈরিতে সাধারণত সুগন্ধি চাল ব্যবহৃত হয়। তাছাড়াও কালিজিরা ও চিনিগুড়া চাল দিয়েও আখনি তৈরি করা হয়। সোজা কথায়, পোলাও রান্নার চাল দিয়ে তৈরি হয় আখনি। সাথে মশলা হিসেবে থাকে পিঁয়াজ, রসুন, আদা, কাঁচামরিচ, ডালচিনি, এলাচ ইত্যাদি। গরু, খাসি কিংবা মুরগির মাংসের মিশ্রণে আখনি তৈরী করা হয়। ছোলাও দিয়ে থাকেন কেউ কেউ। পোলাও, বিরিয়ানি কিংবা তেহারী রান্নার প্রণালির সঙ্গে আখনির অনেকটা মিল থাকলেও আখনি কিন্তু পোলাও-বিরিয়ানি-তেহারী থেকে ভিন্ন একটা আইটেম। অনেকটা বিরিয়ানির মতো হলেও আখনি কিন্তু মশলাবহুল খাবার। এটা খেতে কিছুটা ঝাঁঝালোও বটে। আখনি বেশ সমৃদ্ধ একটা খাবার।
খবর বিভাগঃ
ফিচার
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়