Monday, April 27

কোরআন হাদিসের আলোকে সেহরি খাওয়ার বিধান

গাজী মো. রুম্মান ওয়াহেদ::

রোজা রাখার উদ্দেশে মুসলিম উম্মাহ সুবহে সাদিকের আগে সেহরি খেয়ে থাকেন। রোজা পালনের জন্য সেহরি খাওয়া সুন্নত ও অধিক পুণ্যের কাজ।

ক্ষুধা না থাকলেও সামান্য একটু পানি পান করাকেও সেহরি হিসেবে গণ্য করা হয়। সেহরি খাওয়ার মধ্যে প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সুন্নাহর অনুসরণ করা হয়। অন্যদিকে সেহরি খাওয়ার মাধ্যমে রোজা রাখার শক্তি অর্জিত হয়।
সেহরি খেলে রোজাদার সহজে দুর্বল ও মনোবলহীন হয়ে পড়েন না, সারাদিন উপবাস বা অনাহারে থাকলেও কর্মঠ থাকার প্রাণশক্তি আসে এবং সিয়াম পালন সহ্যসীমার মধ্যে থাকে।
যতক্ষণ পর্যন্ত সুবহে সাদিক না হয় অর্থাৎ পূর্ব দিগন্তে সাদা বর্ণ না দেখা যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত সেহরি খাওয়ার অনুমতি আছে। সুবহে সাদিক হয়ে গেলে তারপর আর কিছু খাওয়া-দাওয়ার সুযোগ নেই। সেহরি খাওয়ার সময়সীমা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,
‘আর তোমরা পানাহার করো, যতক্ষণ না কালো রেখা থেকে ভোরের সাদা রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর রাত পর্যন্ত রোজা পূর্ণ করো।’ (সূরা : আল-বাকারা, আয়াত : ১৮৭)।
রাসূল (সা.) সেহরি খেতে আদেশ করেছেন। বুখারী ও মুসলিম শরিফে হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে- রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা সেহরি খাও, কারণ সেহরিতে বরকত রয়েছে।’ রাসূল (সা.) কখনো সেহরি থেকে বিরত থাকতেন না। সাহাবায়ে কেরামকেও সেহরির ব্যাপারে তাগিদ দিতেন এবং নিজের সঙ্গে শরিক করতেন।
রাসূল (সা.) এর কাছে একজন সাহাবি এলেন যখন তিনি সেহরি খাচ্ছিলেন। রাসূল (সা.) তাকে দেখে বললেন, এ খাবার বরকতের। আল্লাহ পাক বিশেষভাবে তোমাদের তা দান করেছেন। কাজেই তোমরা সেহরি খাওয়া ছেড়ে দিও না। (নাসাঈ)।
মুসলিম শরিফে হজরত আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, আমাদের এ সিয়াম ও আহলে কিতাবদের (ইহুদী ও খৃষ্টান) রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো সেহরি খাওয়া।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যেসব মুসলমান ভোর রাতের এ সময়ে জেগে আল্লাহ পাকের হুকুম মেনে সেহরি খেতে বসে, আল্লাহ পাক খুশি হয়ে তাদের জন্য বিশেষ রহমত অবতীর্ণ করেন এবং মহান আল্লাহর ফেরেশতারা সেহরি গ্রহণকারীদের জন্য বিশেষ দোয়া করতে থাকেন। (মুসনাদে আহমদ)।
দেশ ও অঞ্চলভেদে সেহরিতে খাবারের ধরন ভিন্ন হয়ে থাকে। তবুও রাসূল (সা.) সেহরির সময় খেজুরকে সর্বোত্তম খাদ্যদ্রব্য বলেছেন। আবু দেউদ শরিফে এক বর্ণনায়- খেজুরকে সর্বোত্তম সেহরি বলেছেন রাসূল (সা.)। এজন্য সেহরির সময় দু-একটি খেজুর খেলে এ সুন্নত আদায় হবে। এ ছাড়া আধুনিককালের স্বাস্থ্যবিজ্ঞান মতে, খেজুরের ভেতর যে শক্তি ও পুষ্টিগুণ রয়েছে তা রোজাদারের জন্য অনেক বেশি শক্তিদায়ক এবং বিশেষ উপকারী।
অনেকে তারাবির পর খানা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন, অলসতা করে সেহরি খাওয়ার জন্য পুনরায় জাগ্রত হওয়াকে বোঝা মনে করেন তাদের জেনে রাখা দরকার যে, এটা সুন্নতের পরিপন্থী কাজ। এতে সেহরির ফজিলত ও বরকত থেকে বঞ্চিত হওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়।
সেহরির সময় একটু আগেভাগে উঠে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় এবং কোরআন তেলাওয়াত করে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করা বড় সৌভাগ্যের বিষয়। সেহরি খাওয়ার পর রোজার নিয়ত অন্তরে করাই যথেষ্ট, মুখেও যদি বলে তাহলে ভালো ‘আমি আগামীকাল রমজান মাসের রোজা রাখার নিয়ত করলাম’। 
সেহরির মধ্যে বিলম্ব করা মুস্তাহাব। সেহরি খাওয়ার ক্ষেত্রে বিলম্ব করার অর্থ হলো, ততক্ষণ পর্যন্ত পানাহার করা বৈধ যতক্ষণ শুভ্র রেখা উদিত না হয়। যখন শুভ্র রেখা উদিত হয়ে যায় তখন পানাহার বর্জন করা চাই।
বর্তমানে আমাদের দেশের আবহাওয়া দফতর থেকে সেহরি ও ইফতারের সঠিক সময় আগেই ঘোষণা করা হয়ে থাকে এবং মসজিদের মুয়াজ্জিনরাও সেই সময়সূচি অনুসরণ করে আজান দিয়ে থাকেন। ওলামায়ে কেরামের পরামর্শ অনুযায়ী সতর্কতা হিসেবে প্রয়োজনের সামান্য আগ-পিছ করা হয়।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়