মুহাম্মাদ আবদুল্লাহ::
ভূমিকা: মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীনের অসংখ্য
অনুগ্রহরাজীর অন্যতম একটি অনুগ্রহ হল, নবী-রাসুলগণের ধারা সমাপ্তির পর যুগে
যুগে এমন কিছু ব্যক্তিসত্ত্বার আবির্ভাব তিনি ঘটিয়েছেন যারা দেশ, জাতি ও
পৃথিবীর কল্যাণে নিজেদেরকে ব্যাপৃত রেখেছেন সর্বোপরী “ওরাছাতুল আম্বিয়া” এর
উত্তম নমূনা হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। ফলে সচেতন উত্তরসূরীদের
স্নায়ুতে, স্মৃতিতে, চেতনায় ও ধারণায় তারা বিরাজ করেন নি:শব্দে।তাঁদের একজন
হলেন-আমাদের উস্তাদে মুহতারাম সিলেটের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনী বিদ্যানিকেতন
জামেয়া তাওয়াক্কুলিয়া রেঙ্গা সিলেট এর স্বনামধন্য মুহাদ্দিস ও আমীনুত
তা'লীম উস্তাদুল মুহাদ্দিসীন হযরত মাওলানা শায়খ তালেব উদ্দীন শমশেরনগরী
হাফিযাহুল্লাহু তা'আলা।
এই নাম সুবিদিত।নামের মানুষটি হৃদয়গহনে হেরার সর্বশান্তির স্নিগ্ধময় সেই আলো পোষেন, যার গহিন আকুতি আমাদের স্পর্শ করে।তাঁর ছোঁয়ায় শাশ্বস সত্য আমরা খুঁজে পাই।চিন্তা, চেতনা, মেধা ও যোগ্যতার সুষম মিশ্রণ তাঁকে যেমন আরাধ্য করেছে তেমনি তাঁর মেজাজ, তবীয়ত ও সুজনতা তাঁর মাঝে তৈরি করেছে বাড়তি আকর্ষণ।পারিবারিক সূত্রে পাওয়া ঈমানী চেতনা, দ্বীনী জযবা সর্বদা হৃদয়ে লালন করেন। দ্বীনের যে কোন কাজে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে যান।ঈমান ও ইসলাম রক্ষায় সবাইকে পরামর্শ দিয়ে তিনি তাঁর সহযোগিতার হাত সর্বদা প্রসারিত রাখেন।তিনি দেশপ্রেমিক।অন্যয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী,মজলুম ও নির্যাতিতের পক্ষে জালিমের বিরুদ্ধে আপোসহীন। ইসলাম বিদ্বেষী আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে সাহসী সিপাহসালার। তাঁর বলিষ্ট লেখনী ও কন্ঠের সাহসী হুঙ্কারে জনসাধারণের মাঝে সংগ্রামী প্রেরণার সৃষ্টি করে। তিনি মুসলিম উম্মাহর যেকোন সংকটে কান্ডারির ভূমিকা পালন করেন।তিনি সর্বজনীন একজন আলিম।কর্ম তাঁর নিষ্ঠাপূর্ণ, সত্য প্রতিষ্টায় আপসহীন, বাতিলের বিরুদ্ধে বজ্রকঠোর, পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে উদার।সাহাবায়ে কেরামের বাস্তব নমুনা।জাতিসত্ত্বা নির্মাণের অন্যতম কান্ডারি।যিনি একাধারে বহুগুণে গুণান্বিত। জ্ঞান-গরিমা, আমল-আখলাক, সমসাময়িক চিন্তন, সুদূরপ্রসারী বুদ্ধির প্রখরতা এবং আকাশসম উদারতার মূর্তপ্রতীক।
তাদরিসের শান্ত ময়দানে যেমন স্বভাবসুলভ সহাস্যমুখের আদর্শিক পুরোধা, তেমনি অগ্নিঝরা রণাঙ্গনের অকুতোভয় এই লড়াকু সাহসী যোদ্ধার বেশে সালাহুদ্দীন আইয়ুবীর প্রতিচ্ছবি। হৃদয় গভীরে জমে থাকা বিষাদসিন্ধু তার দরদমাখা স্পর্শে বিন্দুসদৃশ গড়িয়ে পড়ে কলকলিয়ে। অশান্ত মন সান্ত্বনার পরশ খুঁজে পায় প্রশান্তির অমোঘ দ্যোতনায়।
বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, সর্বরুপি বাতিলের আতংক, পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ, ন্যায়ের পক্ষে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষহীন কন্ঠ, খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ, আদর্শ মানুষ গড়ার নিখুঁত কারিগর,আমাদের প্রিয় উস্তাযে মুহতারাম তালেব উদ্দীন দাঃবাঃ
আসলে তিনি আমাদের রাহবার। অগ্রপথিক। কাণ্ডারি। শক্তহাতে কাড়ালি-ধরা সুদক্ষ মাঝি। তিনি পথহারা বিভ্রান্ত জাতিকে পথ দেখাবার বিশ্বস্ত ঠিকানা।
পথহারা মুসলিম উম্মাহর এক নির্লোভ
সিপাহসালার তিনি। আমাদের আলোর সুউচ্চ মিনার তিনি । যেন কুতুব মিনার ।সময়ের সকল ফেৎনা সম্পর্কে তিনি সজাগ, সচেতন এবং আপন কওমকে সর্বদা সর্তক করতে তিনি সদা প্রস্তুত।তিনি রুহবানুললাইল-ফুরসানুন নাহার। তিনি বিজ্ঞ একজন লেখক।তাঁর লেখাগুলো ঢেউ তোলে মনোসৈকতে। অযুত উদ্যমে জাগায় আমাদের ভেতর মানুষ। । বাক্যের মিছিলে আদর্শের স্লোগান ওঠে তাঁর কলমে। মগজে এঁকে দেন সোনালী ইতিহাসের দৃশ্যকল্প। প্রত্যয়ের সাহসোদয়ে চেতনায় করাঘাত করে তাঁর বক্তব্য। জীবনের স্বপ্নমাঠে হেসে ওঠে প্রদীপ্ত ঈমান।
দূরদৃষ্টিসম্পন্ন বিচক্ষণ একজন মানুষ তিনি। তিনি একজন ঐতিহাসিক। তিনি কিতাবের পোকা।ইলমের অথৈ সমুদ্রে সদা সন্তরণরত বিমগ্ন সাধক। তিনি সৎসাহসী। প্রচণ্ড আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন। তিনি ইসলামের জন্যনিবেদিতপ্রাণ। তিনি বিস্ময়কর প্রতিভা ও ধী-শক্তির অধিকারী।
তাঁর দীপ্ত চরিত্রের প্রচন্ড মোহময়তার চৌম্বক শক্তি যে কোন মানুষকে কাছে টানে, আপন করে নেয়। তাঁর শান্ত, সৌম্য ও নিষ্কলুষ অবয়ব মুহূর্তেই যে কোন সাক্ষাতপ্রার্থীর হৃদয়ে শ্রদ্ধার উদ্রেক করে। সমুদ্রসম ইলম, প্রজ্ঞা ও সজ্ঞার ধারক হওয়া সত্ত্বেও সহজাত বিনয়, নিরহংকার আচরণ, মার্জিত ব্যবহার, শালীন বাকরীতি হযরত শায়খ তালেব উদ্দীন সাহেবের কীর্তি ও খ্যাতির মুকুটে যোগ করেছে কনকশোভা। অক্লান্ত চেষ্টা, প্রাণান্তকর অধ্যবসায়, সময়ের কদর ও উস্তাদের সাথে মধুর সম্পর্ক একজন মানুষকে সফলতায় ভরে দিতে পারে তার প্রকৃষ্ট নজির শায়খ তালেব উদ্দীন দা.বা.।
ইলমে ওহীর রূপরেখা ও সারমর্মের আবেদন ও পয়গামের বাস্তব প্রক্ষিত ও মূর্তপ্রতিক তিনি।ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে, সমাজ ও প্রাতিষ্ঠানিক জীবনে অনন্য-অসাধারণ চিন্তাধারার বাহক ও বাস্তবায়ক তিনি।স্বল্পভাষী চিন্তাশীল একজন প্রখর ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন নীতিবান মানুষ তিনি।আখলাক ও তাহযীব, রিয়াযত ও সাধনা,দ্বীনদারী ও তাকওয়া,সততা ও বিশ্বস্ততা,পরেহজগারি ও স্বচ্ছতা, ইখলাস ও লিল্লাহিয়্যাত, দীনতা ও নম্রতা, দৃঢ়তা ও গাম্ভীর্যতা,মার্যাদাবোধ ও আত্মসচতনা, সহনাভূতি ও সময়ানুবর্তিতা, হেকমত ও কর্মকৌশল, তাওয়াক্কুল ও আত্মসমর্পন, অমায়িক, সদাচারী,স্পষ্টভাষী,উদার, নির্মোহ,নিষ্ঠাবান, আত্মত্যাগী,উস্তাদ ও শায়খদের পূর্ণ অানুগত্যকারী,মুরব্বী ও মুহসিনদের ব্যাপারে পুরোপুরি অাত্মসমর্পণকারী,জীবনব্রতের ব্যাপারে তাওয়াক্কুল ও তুষ্টিসম্পন্ন,ত্যাগ ও কুরবানী, মেহনত ও মুতাআলার কামালিয়ত অর্জনের ব্যাপারে পূর্ণ মনোযোগী,সহপাঠীদের সাথে আচার -ব্যবহারে বিনয়তোয়াযী,বিবিধ মতাদর্শের লোকজন ও দল উপদলের ব্যাপারে সুধারণাপোষণকারী,দেশ ও জাতির কল্যাণকামনায় নিবেদিতপ্রাণ ও সৎসাহসী ইত্যাদি গুণাবলীর মূৃর্তপ্রতিক তিনি।
আমাদের উস্তাদে মুহতারাম শব্দ চিত্রের সকল ক্ষুদ্রতা
ও সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে আপন মহিমায় তিনি মহিমান্বিত
আপন জ্যোতির্লোকে উদ্ভাসিত তিনি।
যাঁরা নীরবে নিরালায় সবার অজান্তে মানুষের জন্য, সমাজের কল্যাণে, দেশের হিতে এবং বিশ্ব মানবতার সেবায় তিলতিল করে আপন অস্তিত্ব বিকিয়ে দিয়ে চলেছেন। জীবনের উষালগ্ন থেকে যারা ব্রতী হয়েছেন উন্নত ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে, আদর্শ জাতি গঠনে এবং বিশ্ব সংসারের কুশল কামনায়। সাফল্য ও কর্মবৈচিত্রের এই পড়ন্ত বেলায়ও যারা নিরন্তর সাধনা করে চলছেন তিনি তাঁদেরও একজন।
যে সকল প্রাতঃস্মরণীয় দ্বীনের কান্ডারী তাঁদের প্রতিভাদীপ্ত জীবন ও অবিস্মরণীয় অসামান্য অবদানের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহের দিক-নির্দেশক জ্যোতিষ্কের ন্যায় অনুকরণীয় তাঁদেরও একজন তিনি।
হিদায়াতের
জ্যোতির্ময় তারকা যারা, তাঁদের
আকাশেও জ্বলজ্বল করে জ্বলছেন তিনি।
ইলম ও জ্ঞানের শীর্ষ
চূড়ায় যাঁরা
অধিষ্ঠিত- সগৌরবে...
সমিমায়,সেখানেও তাঁকে চোখে
পড়ে - হাজার মাইলের দূরত্ব থেকে।
হিদায়াতের জ্যোতির্ময় তারকা যাঁরা, তাঁদের আকাশেও জ্বলজ্বল করে জ্বলছেন তিনি।যাঁদের কথা মানলে আল্লাহর পথের
ঠিকানা মিলে। যাঁদের চরিত্র সুষমা ও
বর্ণিল আচার-
আচরণ মানুষকে দুনিয়ার মোহময়
ইন্দ্রজাল ছিন্ন করে আখেরাতের
দিকে ধাবিত করে তাঁদের ও একজন
তিনি, যাঁরা মানুষকে ইলম শিক্ষা
দেন,দীন শিক্ষা দেন।যাঁদের জন্য
আসমানের ফেরেশতারাও দু'আ করে
আর জমিনে দু'আ করে- কুল মাখলুকাত
গর্তের ঐ পিপীলিকা ওসমুদ্রের
পানিতে ছুটে চলা ঐ মৎসও তিনি তাঁদের ও একজন।দাওয়াতি ময়দানের বিশিষ্ট ইমাম ও
দিক দিশারী যাঁরা,তিনি তাদেরই একজন
গর্বিত সদস্য।ইসলাহ ও সংস্কারের
ময়দানের যাঁরা এঁকে দিয়েছেন
অমরত্বের চিহ্ন,সে পুণ্য কাফেলারও
তিনি এক নন্দিত সদস্য।
ইলম ও জ্ঞানের শীর্ষ চূড়ায় যাঁরা অধিষ্ঠিত স্বগৌরবে -সেখানেও তাঁকে চোখে পড়ে হাজার মাইলের দূরত্ব থেকে। ইসলাহ ও সংস্কারের
ময়দানের যাঁরা এঁকে দিয়েছেন অমরত্বের চিহ্ন,সে পুণ্য কাফেলারও গর্বিত মেম্বার তিনি।যাঁরা পথভোলা মানুষকে পথের সন্ধান দেন, বিপথগামী মানুষকে সঠিক পথে আনার চেষ্টা করেন , মানুষকে সুপরামর্শ দেন, চরিত্রবান ও সৎ সাহসী করে গড়ে তুলেন , অভাবগ্রস্ত, বিপদগ্রস্ত, দুস্থ, এতিম, অসহায়ের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন , মহৎ কর্মের উপমা সৃষ্টি করেন , ভালো কাজে উৎসাহী করেন , মন্দ থেকে বিরত রাখেনন, কর্মচঞ্চল করেন, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেন , এক কথায় ইহকাল ও পরকালের শান্তির জন্য মানুষকে সত্য ও সরল পথে চলার প্রতি সর্বদা আহবান করেন -তাঁদেরও কাফেলার অন্যতম তিনি।যাঁদের হাত ধরে রচিত হয় ইতিহাস। কর্ম ও সাধনায় এক সুন্দুর পৃথিবী গড়ে ওঠে তাঁদের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় সে সব মহামনীষীদের মধ্যে তাঁকেও চোখে পড়ে শত মাইল দুরত্ব থেকে।
জন্ম ও বংশ পরিচয়:
মৌলভীবাজার জেলার অন্তর্গত কমলগন্জ থানাধীন বহু ঐতিহ্যে লালিত পতনউষার ইউনিয়নের শ্রীসুর্য মৌজার কবিরাজী গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে এই প্রাজ্ঞ জ্ঞানতাপস ৪ ডিসেম্বর ১৯৭৮ ইংরেজী সনে জনাব আরপান আলী ও হালিমা বেগম দম্পত্তির ঘর আলোকিত করে জন্মগ্রহন করেন।তাঁর পিতা-মাতা ও পিতামহ সকলেই ছিলেন দ্বীনদার, পরহেজগার, দানবীর, চরিত্রবান ও মহৎপ্রাণ ব্যক্তিবর্গ।পিতা -মাতা ও পিতামহের মহৎগুণাবলীসমূহ উত্তরাধীকার হিসাবে স্থানান্তরিত হয় তাঁর পূর্ণময় জীবনে। পবিত্র কুরআনা মাজিদের সূরা আরাফের ৫৮ আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন "ওয়াল বালাদুত তায়্যিবু ইয়াখরুজু নাবা-তুহু বি ইযনি রাব্বিহ "উৎকৃষ্ট জমিন থেকে তার ফসল উৎপন্ন হয় তার প্রতিপালকের নির্দেশে "। হাদীসে আছে "আল ওলাদু সিররুন লি আবীহি"সন্তান তার পিতার রহস্যে ঘেরা থাকে। কারণ, ব্যক্তি গঠনে পরিবারের ভূমিকাই মূখ্য থাকে।ভালো পরিবার থেকে থেকেই জন্ম নেয় ভালো মানুষ। আদর্শ পরিবার থেকেই জন্ম নেয় আদর্শ মানুষ। পরিবারে যদি থাকে সুশাসন ও সুনিয়ন্ত্রণ, ইলম ও জ্ঞানেরর আবহ, দ্বীনী পরিবেশ তাহলে এমন পরিবার থেকে সৃষ্টি হবে উন্নত চরিত্রের আদর্শ মানুষ।তাইতো এই পরিবারে জন্ম নিয়েছেন প্রতিভার পর প্রতিভা। জন্ম নিয়েছেন প্রতিভাবান আলিম।জন্ম নিয়েছেন সময়ের সর্বজন স্বীকৃত ওয়ায়েজ ও শায়খুল হাদীস মাও.মুশাহিদ ক্বাসেমী দা.বা.।
শিক্ষা জীবন:
সম্ভ্রান্ত শিক্ষিত পরিবারে জন্মগ্রহনের সুবাধে অতি অল্প বয়সেই তাঁর মধ্যে শিক্ষার প্রতি অনুরাগ পরিলক্ষিত হয়।তাঁর সম্মানিতা মাতা একজন আবিদা, সালিহা মহিলা এবং তাঁর সম্মানিত পিতাও মাসলাকে দেওবন্দী, ধার্মিক ও পরেহযগার। সেকারণে
মাতা-পিতার তত্ত্বাবধানে
মহল্লার সবাহী মক্তবে শিক্ষা জীবনের সূচনা হয়।
জন্মগতভাবেই তিনি প্রখর মেধার অধিকারী। শৈশবেই তাঁর মেধার বিভা ফুঁটে উঠে।
এজন্যই অল্প দিনেই তিনি ইসলামের বুনিয়াদী শিক্ষা তথা কালেমা, নামায, জরুরী মাসাইল ও মাসনূন দোয়াসহ পবিত্র কুরআন মাজিদের তেলাওয়াত শিক্ষা লাভ করেন। অপরুপ নিসর্গশোভা মায়াবী পরিবেশে শৈশবের সোনাঝরা দিনগুলো তিনি অতিক্রম করেন। মুক্ত আবহাওয়ায় বেড়ে উঠেছেন বলে শিশুকাল থেকেই তাঁর চিন্তা চেতনা এক অসম ব্যাপ্তি লাভ করে। পিতা- মাতার স্নেহছায়ায় থেকে সত্য, ন্যায় ও ইনসাফের কঠিন পাঠগুলো সহজেই আত্মস্থ করে নেন। শিশুকাল থেকেই তাঁর সত্তায় লুকিয়ে ছিলো দ্বীনে ইলাহীর তীব্র তৃষ্ণা।
আল্লাহ তাঁকে দান করেছেন বুদ্ধিস্নাত প্রতিভা। সূর্যদীপ্ত যোগ্যতা। শৈশব থেকেই যার বিচ্ছুরণ ঘটতে শুরু করেছিলো। হ্যাঁ .. শৈশব থেকেই। বিস্ময়বোধের কিছুই নেই! সকালের সূর্যটাই-না বলে দেয়― দিবসের আকাশটা মেঘলা থাকবে না-কি― সুনীল-স্বচ্ছ! কবির ভাষায়―
ﻭﺇﺫﺍ ﺭﺃﻳﺖ ﻣـﻦ ﺍﻟﻬﻼﻝ ﻧﻤﻮﻩ + ﺃﻳﻘﻨﺖَ ﺃﻥ ﺳــﻴﺼﻴﺮ ﺑﺪﺭﺍ ﻛﺎﻣﻼ
‘নয়া চাঁদের ক্রমবৃদ্ধি দেখে বুঝতে পারো না―
এ-ই হতে যাচ্ছে সুনিশ্চিত ষোলটা তিথির সমষ্টি―পূর্ণিমা?!’
তাইতো শৈশবে থাকাবস্থায়-ই তিনি অত্যন্ত শান্ত,সভ্য ও ভদ্র ছিলেন।খুববেশী লাজুক প্রকৃতির ছিলেন।ছোট বেলা থেকেই তিনি সহজ সরল প্রকৃতির এবং উত্তম চরিত্র মাধুর্যের অধিকারী ছিলেন।
অতঃপর প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী দ্বীনী শিক্ষাগার কটারকোনা ইসলামিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে
ইবতেদায়ী থেকে সরফ পর্যন্ত লেখা -পড়া করে আরবী,ফার্সী,উর্দূ,বাংলা এবংনাহু, সরফ, মানতিক,ইনশা, ইত্যাদি শাস্ত্রে অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে যোগ্যতা অর্জন করেন।
অতঃপর ১৯৯৪ইংরেজীতে উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য চলে যান সিলেটের জামেয়া তাওয়াক্কুলিয়া রেঙ্গা মাদ্রাসায় সেখানে
নাহবেমির থেকে কওমী শিক্ষার সর্বোচ্চ ক্লাস দাওরা তথা মাস্টার্স পর্যন্ত লেখাপড়া করে যুগ শ্রেষ্ঠ মনীষীদের তত্ত্বাবধানে হাদীস, ফেকাহ,তাফসীর, আকায়েদ,উসূল, ফরাইজ ইত্যাদি বিষয়ে অগাধ জ্ঞানার্জন করেন। শিক্ষা জীবনের সকল পরিক্ষায় প্রতিটি কিতাবে সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে প্রতি জামাতে ১ম স্থান অর্জন করা ছিল তাঁর বৈশিষ্ট। ঠিক তেমনিভাবে বোর্ড পরিক্ষায় মেধা তালিকায় মুখতাসার জামাতে ৩য়, ফযিলত তথা মিশকাত জামাতে মেধা তালিকায় ১ম, দাওরা তাথা মাস্টার্স পরিক্ষায় মেধা তালিকায় ২য় হয়ে উস্তাদগণ ও মা -বাবার মুখ উজ্জল করে শিক্ষা জীবনের ইতি টানেন।
শিক্ষকতা জীবন ও দারস ও তাদরিস:
মৌলভীবাজার জেলার ঐতিহ্যবাহী দ্বীনী দরসগাহ জামেয়া হুসাইনিয়া সোনারগাঁও,
বলরামপুর কমলগন্জ মাদ্রাসায় ২০০১ সালে কর্ম জীবনের জয়যাত্রা সূচনা করেন । এখানে তিনি সিহাহ সিত্তার মুসলিম শরীফ, আবু দাউদ শরীফ, এবং দারসে নেজামির অন্যান্য কিতাবাদি খুব দক্ষতার সাথে তিন বৎসর পড়ান। অতঃপর সেখান থেকে চলে আসেন সিলেটের মুরাদগঞ্জ মাদ্রাসায় -এখানেও অত্যান্ত দক্ষতার সাথে সিহাহ সিত্তার মুসলিম শরিফ সহ দরসে নেজামির অন্যান্য কিতাবাদি ৭ বৎসর পড়ান। অতঃপর আসাতেযায়ে কেরামের নির্দেশে তিনি চলে আসেন মাদারে ইলমী জামেয়া তাওয়াক্কুলিয়া রেঙ্গা মাদ্রাসায়। আট বৎসর থেকে এখানে পড়াচ্ছেন। মধ্যখানে একবছর দারুল কুরআন সিলেটের শায়খুল হাদীস ছিলেন।
তিনি একজন আদর্শ শিক্ষক। তিনি আদর্শ ছাত্র গড়ার স্বপ্নে বিভোর ও আত্মনিবেদিত একজন সফল উস্তাদ।
ছাত্রদের যোগ্য করে গড়ে তোলার ব্যাপারে সদা নিবেদিতপ্রাণ। কোন মেধাবী ছাত্র পেলে তার মেধা কিভাবে কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে তিনি সর্বদা থাকেন চিন্তিত। তাঁর চব্বিশ ঘণ্টার সাধনা থাকে তাঁর ছাত্ররা যেন লেখাপড়ায় ও জ্ঞানে-গুণে বড় হয়, সমাজে সগৌরবে চলতে পারে, সর্বোপরি যুগের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হয়।
তাঁর পাঠদান খুবই মনোমুগ্ধকর। উপস্থাপনাশৈলী খুবই চমৎকার। তত্ত্ব ও তথ্য নির্ভর তার প্রতিটা আলোচনা।নিজের চিন্তা -চেতনা, আবেগ অনুভূতির সেথে মিশে যেতে ছাত্রদের বাধ্য করতেন -তাঁর অদ্ভুত বিস্ময়কর যোগ্যতার ক্ষমতাবলে। যে কিতাবই তিনি পড়ান -তা পড়াতে গিয়ে ছাত্রদের মন -মানসের গভীরে মিশে যেতেন একেবারে রক্ত -মাংসের ন্যায়।কিতাবের প্রতিটি বর্ণ, ছত্র সর্বোপরি তার মর্মের গভীরে চলে যান তিনি।ফলে কিতাবের বিষয়বস্তু ও মর্ম এবং কিতাব লেখার লক্ষ-উদ্দেশ্য -সবই ছাত্রদের সামনে পরিষ্কার হয়ে যায়। পঠদানের ফাঁকে ফাঁকে আলোচ্য বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন শিক্ষনীয় রসগল্প উপস্থাপন করে নাইমীন হযরাতদের তন্দ্রাচ্ছন্নভাব দূর করার চেষ্টা করেন।
তাঁর সান্নিধ্য পরশে সোনা হয়েছে কতো ছাত্র! তাঁর ইলমী গভীরতার বিশালতায় বসে কতোজন নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন দেখেছেন এক জায়গায় কেমন করে জমা হয়েছে অ- নে-ক জায়গার সুষমা।
তাঁর মধ্যে আমি সত্য সুন্দরের পরম প্রকাশকে খুঁজে পেয়েছি। স্নেহ-সহানুভূতি
তে তিনি আমাদের হৃদয়ের অত্যন্ত সন্নিকটে, কিন্তু তাঁর বিরাট ব্যক্তিত্ব আমাদের বুদ্ধি এবং নাগালের বাইরে। তিনি আমাদের আদর্শ উস্তাদে মুহতারাম ও রাহবার। তিনি আমাদের শিক্ষাজীবনের অপরিসীম প্রেরণার উৎস।
তাঁর দীক্ষার গন্ডী বিস্তৃত ঘরের চার দেয়াল থেকে শুরু করে মাদরাসা, পাঠশালা, রচনা ও সংকলনের প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত।মসজিদের নিরিবিলি শান্ত পরিমন্ডল থেকে সংগ্রামের কোলাহলপূর্ণ প্লাটফর্ম পর্যন্ত।
পারিবারিক জীবন:
জীবিত সাত ভাইয়ের মধ্যে তিনি চতুর্থ। তাঁর দুইজন সম্মানিতা বোনও রয়েছেন।পরিবারের সদস্য ও শিশুদের প্রতি তাঁর স্নেহ-মমতা সীমাহীন।তাঁর কাছে পরিবারের সব সদস্যই অতি আদরের।স্নেহ, মমতা আর ভালোবাসার চাদরে পরিবারের সদস্যদের সর্বদা আচ্ছাদিত করে রাখেন।বিশেষত শিশুদের প্রতি তাঁর আন্তরিকতা চোখে পড়ার মতো।আপন চাচা,ফুফু, খালা ও ভাই বিরাদরগনের খবরা খবর নেন। নিজ বোনদের খোজ -খবর, আনা নেয়া,তাদের বাড়ীতে যাওয়া -আসার নির্ধারিত রুটিন রয়েছে।
দাম্পত্যজীবন:
তিনি যেমন পরহেজগার ও সম্ভ্রান্ত খান্দানের মানসপুত্র তেমনি তিনি তাঁর জীবনসঙ্গিনী হিসেবে বেছে নিয়েছেন উসমানিনগর উপজেলার শাদিপুর ইউপির তাজপুর গ্রামের -আরেক পূতঃপবিত্র দ্বীনদার, মুত্তাকী খান্দানের এক ভাগ্যবতি রমণীকে।তিনি বড়ো আদর্শবতী ও পূণ্যবতি। তিনি ত্যাগ নিষ্ঠায়-ভালোবাসায় খিদমত করছেন আমাদের শায়খের। তাঁর সম্মানিত শশুর শায়খুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদানী রহ.এর শিষ্য মাও. শাহ আবদুল কারীম দা.বা.।তিনিও দ্বীনদার, মুত্ত্বাকী ও পরহেজগার এক আল্লার কামেল বান্দা।
হযরতের চারজন কন্যা রয়েছেন। বর্তমানে সকলেই লেখা -পড়া করছে।
আতিথেয়তা:
বাড়ীতে যে কোন মেহমান আসলে তাদের আতিথেয়তা ও অপ্যায়ন খুব যত্নের সাথে করেন।ভালোবাসা ও মেহমানদারীর সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করেন।
রাজনৈতিক অবস্থান:
রাজনীতির ময়দানে তিনি ভীষণ দূরদর্শী। কুশলী। দিক-নির্দেশক। জমিয়তের রাজনীতি করেন কিন্তু নিজেকে কখনো নিদৃষ্ট দলের গণ্ডিতে-ই কেবল সীমাবদ্ধ করে রাখেন না। তার চিন্তাজুড়ে জাতীয় ঐক্য ও নিখাদ দেশপ্রেমের বৃহত্তর চিন্তা।সর্বোপরি তার রাজৈনতিক চিন্তাধারা ও দর্শন যুগোপযোগী উম্মাহর কল্যানকামি, শান্তি, সমৃদ্ধি,মানবিক বোধ, মানসিক ওআত্মিক উন্নায়নে সমৃদ্ধিশীল। নির্মোহ ও নিসংকোচ উদার রাজনৈতিক চর্চার পুরোধা ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মনীষা। রাজনৈতিক কোন সংকীর্ণ চাদরে বাঁধা নয় তার চেতনার শেকড়। সবাইকে নিয়ে,সবার সাথে মিলে দেশ, জাতি ও ইসলামের জন্য তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি অন্যান্য জনীতিবীদদের মত গতানুগতিক নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য রাজনীতি করেননা- বরং তাঁর রাজনীতি ইসলামি তাহজিব তামাদ্দুন ও দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ত রক্ষার পাশাপাশি দেশের জনগণকে ইসলামি চেতনায় উদ্ধুদ্ধ করে আদর্শ রাষ্ট্র বিনির্মাণে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করা।
সামাজিক কর্মকান্ড:
জনদরদী নেতা তিনি। অসহায় মানুষের জন্য নিবেদিত প্রাণ তিনি। আমাদের দেশের বিভিন্ন দুর্যোগের সময় তাঁকে দেখা যায় প্রথম সারিতে। মানব সেবায় নিজের সবটুকু ব্যয় করে দেন তিনি।
ফেরক্বায়ে বাতেলা ও এনজিও মিশনারির আগ্রাসী অপশক্তির মোকাবেলায় আলেম সমাজ ও আম জনতাকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য এবং অসহায়, অনাথ -ইয়াতিম, বিধবা ও দূর্গত মানুষের সেবার জন্য তিনি গঠন করেন
"উলামা পরিষদ শরিষতলা"জনসাধারণ্যে ঐক্য ও একতার সুদৃঢ় বন্ধন স্থাপন করা এবংতাদেরকে ইসলামের সামগ্রিক অবকাঠামো ও মূলনীতীর দিকে আহবান করাটাই এই সংঘঠনের মূল লক্ষ্য।তাদেরকে ইসলামের আদব -আখলাক ও উন্নত চরিত্র -মাধুরি এবং বিশেষ তারবিয়াতি প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত করে তোলা।
তাঁর আদর্শের ছায়ায় থাকতে চাই আজীবন, অনন্তকাল।.আমি তাঁকে হাজার বছর দেখতে চাই আমাদের মাঝে।
আল্লাহ তাঁকে বাঁচিয়ে রাখুন, আমার জীবনের কিছু অংশ নিয়ে হলেও। কর্মক্ষেত্রে রাখুন, জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত । তাঁর আলো ছড়িয়ে পড়ুক,পৃথিবীর প্রতিটি ছায়ায়।.
আপনার কাছে সবিনয়ে ক্ষমাপার্থী হযরত।আমার ক্ষমতা নেই আপনার সম্পর্কে লেখার। আমার অনেক কিছুই জানা নেই। আমার কলমের সামর্থ্য নেই আপনার সোনালি জীবন ফুঁটিয়ে তোলার।
প্রিয়জনের কথা লিখতে ভালো লাগে, মন শান্তি পায়, আনন্দ উপভোগ করে। তাই লিখা।
এই নাম সুবিদিত।নামের মানুষটি হৃদয়গহনে হেরার সর্বশান্তির স্নিগ্ধময় সেই আলো পোষেন, যার গহিন আকুতি আমাদের স্পর্শ করে।তাঁর ছোঁয়ায় শাশ্বস সত্য আমরা খুঁজে পাই।চিন্তা, চেতনা, মেধা ও যোগ্যতার সুষম মিশ্রণ তাঁকে যেমন আরাধ্য করেছে তেমনি তাঁর মেজাজ, তবীয়ত ও সুজনতা তাঁর মাঝে তৈরি করেছে বাড়তি আকর্ষণ।পারিবারিক সূত্রে পাওয়া ঈমানী চেতনা, দ্বীনী জযবা সর্বদা হৃদয়ে লালন করেন। দ্বীনের যে কোন কাজে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে যান।ঈমান ও ইসলাম রক্ষায় সবাইকে পরামর্শ দিয়ে তিনি তাঁর সহযোগিতার হাত সর্বদা প্রসারিত রাখেন।তিনি দেশপ্রেমিক।অন্যয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী,মজলুম ও নির্যাতিতের পক্ষে জালিমের বিরুদ্ধে আপোসহীন। ইসলাম বিদ্বেষী আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে সাহসী সিপাহসালার। তাঁর বলিষ্ট লেখনী ও কন্ঠের সাহসী হুঙ্কারে জনসাধারণের মাঝে সংগ্রামী প্রেরণার সৃষ্টি করে। তিনি মুসলিম উম্মাহর যেকোন সংকটে কান্ডারির ভূমিকা পালন করেন।তিনি সর্বজনীন একজন আলিম।কর্ম তাঁর নিষ্ঠাপূর্ণ, সত্য প্রতিষ্টায় আপসহীন, বাতিলের বিরুদ্ধে বজ্রকঠোর, পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে উদার।সাহাবায়ে কেরামের বাস্তব নমুনা।জাতিসত্ত্বা নির্মাণের অন্যতম কান্ডারি।যিনি একাধারে বহুগুণে গুণান্বিত। জ্ঞান-গরিমা, আমল-আখলাক, সমসাময়িক চিন্তন, সুদূরপ্রসারী বুদ্ধির প্রখরতা এবং আকাশসম উদারতার মূর্তপ্রতীক।
তাদরিসের শান্ত ময়দানে যেমন স্বভাবসুলভ সহাস্যমুখের আদর্শিক পুরোধা, তেমনি অগ্নিঝরা রণাঙ্গনের অকুতোভয় এই লড়াকু সাহসী যোদ্ধার বেশে সালাহুদ্দীন আইয়ুবীর প্রতিচ্ছবি। হৃদয় গভীরে জমে থাকা বিষাদসিন্ধু তার দরদমাখা স্পর্শে বিন্দুসদৃশ গড়িয়ে পড়ে কলকলিয়ে। অশান্ত মন সান্ত্বনার পরশ খুঁজে পায় প্রশান্তির অমোঘ দ্যোতনায়।
বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, সর্বরুপি বাতিলের আতংক, পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ, ন্যায়ের পক্ষে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষহীন কন্ঠ, খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ, আদর্শ মানুষ গড়ার নিখুঁত কারিগর,আমাদের প্রিয় উস্তাযে মুহতারাম তালেব উদ্দীন দাঃবাঃ
আসলে তিনি আমাদের রাহবার। অগ্রপথিক। কাণ্ডারি। শক্তহাতে কাড়ালি-ধরা সুদক্ষ মাঝি। তিনি পথহারা বিভ্রান্ত জাতিকে পথ দেখাবার বিশ্বস্ত ঠিকানা।
পথহারা মুসলিম উম্মাহর এক নির্লোভ
সিপাহসালার তিনি। আমাদের আলোর সুউচ্চ মিনার তিনি । যেন কুতুব মিনার ।সময়ের সকল ফেৎনা সম্পর্কে তিনি সজাগ, সচেতন এবং আপন কওমকে সর্বদা সর্তক করতে তিনি সদা প্রস্তুত।তিনি রুহবানুললাইল-ফুরসানুন নাহার। তিনি বিজ্ঞ একজন লেখক।তাঁর লেখাগুলো ঢেউ তোলে মনোসৈকতে। অযুত উদ্যমে জাগায় আমাদের ভেতর মানুষ। । বাক্যের মিছিলে আদর্শের স্লোগান ওঠে তাঁর কলমে। মগজে এঁকে দেন সোনালী ইতিহাসের দৃশ্যকল্প। প্রত্যয়ের সাহসোদয়ে চেতনায় করাঘাত করে তাঁর বক্তব্য। জীবনের স্বপ্নমাঠে হেসে ওঠে প্রদীপ্ত ঈমান।
দূরদৃষ্টিসম্পন্ন বিচক্ষণ একজন মানুষ তিনি। তিনি একজন ঐতিহাসিক। তিনি কিতাবের পোকা।ইলমের অথৈ সমুদ্রে সদা সন্তরণরত বিমগ্ন সাধক। তিনি সৎসাহসী। প্রচণ্ড আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন। তিনি ইসলামের জন্যনিবেদিতপ্রাণ। তিনি বিস্ময়কর প্রতিভা ও ধী-শক্তির অধিকারী।
তাঁর দীপ্ত চরিত্রের প্রচন্ড মোহময়তার চৌম্বক শক্তি যে কোন মানুষকে কাছে টানে, আপন করে নেয়। তাঁর শান্ত, সৌম্য ও নিষ্কলুষ অবয়ব মুহূর্তেই যে কোন সাক্ষাতপ্রার্থীর হৃদয়ে শ্রদ্ধার উদ্রেক করে। সমুদ্রসম ইলম, প্রজ্ঞা ও সজ্ঞার ধারক হওয়া সত্ত্বেও সহজাত বিনয়, নিরহংকার আচরণ, মার্জিত ব্যবহার, শালীন বাকরীতি হযরত শায়খ তালেব উদ্দীন সাহেবের কীর্তি ও খ্যাতির মুকুটে যোগ করেছে কনকশোভা। অক্লান্ত চেষ্টা, প্রাণান্তকর অধ্যবসায়, সময়ের কদর ও উস্তাদের সাথে মধুর সম্পর্ক একজন মানুষকে সফলতায় ভরে দিতে পারে তার প্রকৃষ্ট নজির শায়খ তালেব উদ্দীন দা.বা.।
ইলমে ওহীর রূপরেখা ও সারমর্মের আবেদন ও পয়গামের বাস্তব প্রক্ষিত ও মূর্তপ্রতিক তিনি।ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে, সমাজ ও প্রাতিষ্ঠানিক জীবনে অনন্য-অসাধারণ চিন্তাধারার বাহক ও বাস্তবায়ক তিনি।স্বল্পভাষী চিন্তাশীল একজন প্রখর ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন নীতিবান মানুষ তিনি।আখলাক ও তাহযীব, রিয়াযত ও সাধনা,দ্বীনদারী ও তাকওয়া,সততা ও বিশ্বস্ততা,পরেহজগারি ও স্বচ্ছতা, ইখলাস ও লিল্লাহিয়্যাত, দীনতা ও নম্রতা, দৃঢ়তা ও গাম্ভীর্যতা,মার্যাদাবোধ ও আত্মসচতনা, সহনাভূতি ও সময়ানুবর্তিতা, হেকমত ও কর্মকৌশল, তাওয়াক্কুল ও আত্মসমর্পন, অমায়িক, সদাচারী,স্পষ্টভাষী,উদার, নির্মোহ,নিষ্ঠাবান, আত্মত্যাগী,উস্তাদ ও শায়খদের পূর্ণ অানুগত্যকারী,মুরব্বী ও মুহসিনদের ব্যাপারে পুরোপুরি অাত্মসমর্পণকারী,জীবনব্রতের ব্যাপারে তাওয়াক্কুল ও তুষ্টিসম্পন্ন,ত্যাগ ও কুরবানী, মেহনত ও মুতাআলার কামালিয়ত অর্জনের ব্যাপারে পূর্ণ মনোযোগী,সহপাঠীদের সাথে আচার -ব্যবহারে বিনয়তোয়াযী,বিবিধ মতাদর্শের লোকজন ও দল উপদলের ব্যাপারে সুধারণাপোষণকারী,দেশ ও জাতির কল্যাণকামনায় নিবেদিতপ্রাণ ও সৎসাহসী ইত্যাদি গুণাবলীর মূৃর্তপ্রতিক তিনি।
আমাদের উস্তাদে মুহতারাম শব্দ চিত্রের সকল ক্ষুদ্রতা
ও সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে আপন মহিমায় তিনি মহিমান্বিত
আপন জ্যোতির্লোকে উদ্ভাসিত তিনি।
যাঁরা নীরবে নিরালায় সবার অজান্তে মানুষের জন্য, সমাজের কল্যাণে, দেশের হিতে এবং বিশ্ব মানবতার সেবায় তিলতিল করে আপন অস্তিত্ব বিকিয়ে দিয়ে চলেছেন। জীবনের উষালগ্ন থেকে যারা ব্রতী হয়েছেন উন্নত ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে, আদর্শ জাতি গঠনে এবং বিশ্ব সংসারের কুশল কামনায়। সাফল্য ও কর্মবৈচিত্রের এই পড়ন্ত বেলায়ও যারা নিরন্তর সাধনা করে চলছেন তিনি তাঁদেরও একজন।
যে সকল প্রাতঃস্মরণীয় দ্বীনের কান্ডারী তাঁদের প্রতিভাদীপ্ত জীবন ও অবিস্মরণীয় অসামান্য অবদানের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহের দিক-নির্দেশক জ্যোতিষ্কের ন্যায় অনুকরণীয় তাঁদেরও একজন তিনি।
হিদায়াতের
জ্যোতির্ময় তারকা যারা, তাঁদের
আকাশেও জ্বলজ্বল করে জ্বলছেন তিনি।
ইলম ও জ্ঞানের শীর্ষ
চূড়ায় যাঁরা
অধিষ্ঠিত- সগৌরবে...
সমিমায়,সেখানেও তাঁকে চোখে
পড়ে - হাজার মাইলের দূরত্ব থেকে।
হিদায়াতের জ্যোতির্ময় তারকা যাঁরা, তাঁদের আকাশেও জ্বলজ্বল করে জ্বলছেন তিনি।যাঁদের কথা মানলে আল্লাহর পথের
ঠিকানা মিলে। যাঁদের চরিত্র সুষমা ও
বর্ণিল আচার-
আচরণ মানুষকে দুনিয়ার মোহময়
ইন্দ্রজাল ছিন্ন করে আখেরাতের
দিকে ধাবিত করে তাঁদের ও একজন
তিনি, যাঁরা মানুষকে ইলম শিক্ষা
দেন,দীন শিক্ষা দেন।যাঁদের জন্য
আসমানের ফেরেশতারাও দু'আ করে
আর জমিনে দু'আ করে- কুল মাখলুকাত
গর্তের ঐ পিপীলিকা ওসমুদ্রের
পানিতে ছুটে চলা ঐ মৎসও তিনি তাঁদের ও একজন।দাওয়াতি ময়দানের বিশিষ্ট ইমাম ও
দিক দিশারী যাঁরা,তিনি তাদেরই একজন
গর্বিত সদস্য।ইসলাহ ও সংস্কারের
ময়দানের যাঁরা এঁকে দিয়েছেন
অমরত্বের চিহ্ন,সে পুণ্য কাফেলারও
তিনি এক নন্দিত সদস্য।
ইলম ও জ্ঞানের শীর্ষ চূড়ায় যাঁরা অধিষ্ঠিত স্বগৌরবে -সেখানেও তাঁকে চোখে পড়ে হাজার মাইলের দূরত্ব থেকে। ইসলাহ ও সংস্কারের
ময়দানের যাঁরা এঁকে দিয়েছেন অমরত্বের চিহ্ন,সে পুণ্য কাফেলারও গর্বিত মেম্বার তিনি।যাঁরা পথভোলা মানুষকে পথের সন্ধান দেন, বিপথগামী মানুষকে সঠিক পথে আনার চেষ্টা করেন , মানুষকে সুপরামর্শ দেন, চরিত্রবান ও সৎ সাহসী করে গড়ে তুলেন , অভাবগ্রস্ত, বিপদগ্রস্ত, দুস্থ, এতিম, অসহায়ের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন , মহৎ কর্মের উপমা সৃষ্টি করেন , ভালো কাজে উৎসাহী করেন , মন্দ থেকে বিরত রাখেনন, কর্মচঞ্চল করেন, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেন , এক কথায় ইহকাল ও পরকালের শান্তির জন্য মানুষকে সত্য ও সরল পথে চলার প্রতি সর্বদা আহবান করেন -তাঁদেরও কাফেলার অন্যতম তিনি।যাঁদের হাত ধরে রচিত হয় ইতিহাস। কর্ম ও সাধনায় এক সুন্দুর পৃথিবী গড়ে ওঠে তাঁদের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় সে সব মহামনীষীদের মধ্যে তাঁকেও চোখে পড়ে শত মাইল দুরত্ব থেকে।
জন্ম ও বংশ পরিচয়:
মৌলভীবাজার জেলার অন্তর্গত কমলগন্জ থানাধীন বহু ঐতিহ্যে লালিত পতনউষার ইউনিয়নের শ্রীসুর্য মৌজার কবিরাজী গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে এই প্রাজ্ঞ জ্ঞানতাপস ৪ ডিসেম্বর ১৯৭৮ ইংরেজী সনে জনাব আরপান আলী ও হালিমা বেগম দম্পত্তির ঘর আলোকিত করে জন্মগ্রহন করেন।তাঁর পিতা-মাতা ও পিতামহ সকলেই ছিলেন দ্বীনদার, পরহেজগার, দানবীর, চরিত্রবান ও মহৎপ্রাণ ব্যক্তিবর্গ।পিতা -মাতা ও পিতামহের মহৎগুণাবলীসমূহ উত্তরাধীকার হিসাবে স্থানান্তরিত হয় তাঁর পূর্ণময় জীবনে। পবিত্র কুরআনা মাজিদের সূরা আরাফের ৫৮ আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন "ওয়াল বালাদুত তায়্যিবু ইয়াখরুজু নাবা-তুহু বি ইযনি রাব্বিহ "উৎকৃষ্ট জমিন থেকে তার ফসল উৎপন্ন হয় তার প্রতিপালকের নির্দেশে "। হাদীসে আছে "আল ওলাদু সিররুন লি আবীহি"সন্তান তার পিতার রহস্যে ঘেরা থাকে। কারণ, ব্যক্তি গঠনে পরিবারের ভূমিকাই মূখ্য থাকে।ভালো পরিবার থেকে থেকেই জন্ম নেয় ভালো মানুষ। আদর্শ পরিবার থেকেই জন্ম নেয় আদর্শ মানুষ। পরিবারে যদি থাকে সুশাসন ও সুনিয়ন্ত্রণ, ইলম ও জ্ঞানেরর আবহ, দ্বীনী পরিবেশ তাহলে এমন পরিবার থেকে সৃষ্টি হবে উন্নত চরিত্রের আদর্শ মানুষ।তাইতো এই পরিবারে জন্ম নিয়েছেন প্রতিভার পর প্রতিভা। জন্ম নিয়েছেন প্রতিভাবান আলিম।জন্ম নিয়েছেন সময়ের সর্বজন স্বীকৃত ওয়ায়েজ ও শায়খুল হাদীস মাও.মুশাহিদ ক্বাসেমী দা.বা.।
শিক্ষা জীবন:
সম্ভ্রান্ত শিক্ষিত পরিবারে জন্মগ্রহনের সুবাধে অতি অল্প বয়সেই তাঁর মধ্যে শিক্ষার প্রতি অনুরাগ পরিলক্ষিত হয়।তাঁর সম্মানিতা মাতা একজন আবিদা, সালিহা মহিলা এবং তাঁর সম্মানিত পিতাও মাসলাকে দেওবন্দী, ধার্মিক ও পরেহযগার। সেকারণে
মাতা-পিতার তত্ত্বাবধানে
মহল্লার সবাহী মক্তবে শিক্ষা জীবনের সূচনা হয়।
জন্মগতভাবেই তিনি প্রখর মেধার অধিকারী। শৈশবেই তাঁর মেধার বিভা ফুঁটে উঠে।
এজন্যই অল্প দিনেই তিনি ইসলামের বুনিয়াদী শিক্ষা তথা কালেমা, নামায, জরুরী মাসাইল ও মাসনূন দোয়াসহ পবিত্র কুরআন মাজিদের তেলাওয়াত শিক্ষা লাভ করেন। অপরুপ নিসর্গশোভা মায়াবী পরিবেশে শৈশবের সোনাঝরা দিনগুলো তিনি অতিক্রম করেন। মুক্ত আবহাওয়ায় বেড়ে উঠেছেন বলে শিশুকাল থেকেই তাঁর চিন্তা চেতনা এক অসম ব্যাপ্তি লাভ করে। পিতা- মাতার স্নেহছায়ায় থেকে সত্য, ন্যায় ও ইনসাফের কঠিন পাঠগুলো সহজেই আত্মস্থ করে নেন। শিশুকাল থেকেই তাঁর সত্তায় লুকিয়ে ছিলো দ্বীনে ইলাহীর তীব্র তৃষ্ণা।
আল্লাহ তাঁকে দান করেছেন বুদ্ধিস্নাত প্রতিভা। সূর্যদীপ্ত যোগ্যতা। শৈশব থেকেই যার বিচ্ছুরণ ঘটতে শুরু করেছিলো। হ্যাঁ .. শৈশব থেকেই। বিস্ময়বোধের কিছুই নেই! সকালের সূর্যটাই-না বলে দেয়― দিবসের আকাশটা মেঘলা থাকবে না-কি― সুনীল-স্বচ্ছ! কবির ভাষায়―
ﻭﺇﺫﺍ ﺭﺃﻳﺖ ﻣـﻦ ﺍﻟﻬﻼﻝ ﻧﻤﻮﻩ + ﺃﻳﻘﻨﺖَ ﺃﻥ ﺳــﻴﺼﻴﺮ ﺑﺪﺭﺍ ﻛﺎﻣﻼ
‘নয়া চাঁদের ক্রমবৃদ্ধি দেখে বুঝতে পারো না―
এ-ই হতে যাচ্ছে সুনিশ্চিত ষোলটা তিথির সমষ্টি―পূর্ণিমা?!’
তাইতো শৈশবে থাকাবস্থায়-ই তিনি অত্যন্ত শান্ত,সভ্য ও ভদ্র ছিলেন।খুববেশী লাজুক প্রকৃতির ছিলেন।ছোট বেলা থেকেই তিনি সহজ সরল প্রকৃতির এবং উত্তম চরিত্র মাধুর্যের অধিকারী ছিলেন।
অতঃপর প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী দ্বীনী শিক্ষাগার কটারকোনা ইসলামিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে
ইবতেদায়ী থেকে সরফ পর্যন্ত লেখা -পড়া করে আরবী,ফার্সী,উর্দূ,বাংলা এবংনাহু, সরফ, মানতিক,ইনশা, ইত্যাদি শাস্ত্রে অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে যোগ্যতা অর্জন করেন।
অতঃপর ১৯৯৪ইংরেজীতে উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য চলে যান সিলেটের জামেয়া তাওয়াক্কুলিয়া রেঙ্গা মাদ্রাসায় সেখানে
নাহবেমির থেকে কওমী শিক্ষার সর্বোচ্চ ক্লাস দাওরা তথা মাস্টার্স পর্যন্ত লেখাপড়া করে যুগ শ্রেষ্ঠ মনীষীদের তত্ত্বাবধানে হাদীস, ফেকাহ,তাফসীর, আকায়েদ,উসূল, ফরাইজ ইত্যাদি বিষয়ে অগাধ জ্ঞানার্জন করেন। শিক্ষা জীবনের সকল পরিক্ষায় প্রতিটি কিতাবে সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে প্রতি জামাতে ১ম স্থান অর্জন করা ছিল তাঁর বৈশিষ্ট। ঠিক তেমনিভাবে বোর্ড পরিক্ষায় মেধা তালিকায় মুখতাসার জামাতে ৩য়, ফযিলত তথা মিশকাত জামাতে মেধা তালিকায় ১ম, দাওরা তাথা মাস্টার্স পরিক্ষায় মেধা তালিকায় ২য় হয়ে উস্তাদগণ ও মা -বাবার মুখ উজ্জল করে শিক্ষা জীবনের ইতি টানেন।
শিক্ষকতা জীবন ও দারস ও তাদরিস:
মৌলভীবাজার জেলার ঐতিহ্যবাহী দ্বীনী দরসগাহ জামেয়া হুসাইনিয়া সোনারগাঁও,
বলরামপুর কমলগন্জ মাদ্রাসায় ২০০১ সালে কর্ম জীবনের জয়যাত্রা সূচনা করেন । এখানে তিনি সিহাহ সিত্তার মুসলিম শরীফ, আবু দাউদ শরীফ, এবং দারসে নেজামির অন্যান্য কিতাবাদি খুব দক্ষতার সাথে তিন বৎসর পড়ান। অতঃপর সেখান থেকে চলে আসেন সিলেটের মুরাদগঞ্জ মাদ্রাসায় -এখানেও অত্যান্ত দক্ষতার সাথে সিহাহ সিত্তার মুসলিম শরিফ সহ দরসে নেজামির অন্যান্য কিতাবাদি ৭ বৎসর পড়ান। অতঃপর আসাতেযায়ে কেরামের নির্দেশে তিনি চলে আসেন মাদারে ইলমী জামেয়া তাওয়াক্কুলিয়া রেঙ্গা মাদ্রাসায়। আট বৎসর থেকে এখানে পড়াচ্ছেন। মধ্যখানে একবছর দারুল কুরআন সিলেটের শায়খুল হাদীস ছিলেন।
তিনি একজন আদর্শ শিক্ষক। তিনি আদর্শ ছাত্র গড়ার স্বপ্নে বিভোর ও আত্মনিবেদিত একজন সফল উস্তাদ।
ছাত্রদের যোগ্য করে গড়ে তোলার ব্যাপারে সদা নিবেদিতপ্রাণ। কোন মেধাবী ছাত্র পেলে তার মেধা কিভাবে কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে তিনি সর্বদা থাকেন চিন্তিত। তাঁর চব্বিশ ঘণ্টার সাধনা থাকে তাঁর ছাত্ররা যেন লেখাপড়ায় ও জ্ঞানে-গুণে বড় হয়, সমাজে সগৌরবে চলতে পারে, সর্বোপরি যুগের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হয়।
তাঁর পাঠদান খুবই মনোমুগ্ধকর। উপস্থাপনাশৈলী খুবই চমৎকার। তত্ত্ব ও তথ্য নির্ভর তার প্রতিটা আলোচনা।নিজের চিন্তা -চেতনা, আবেগ অনুভূতির সেথে মিশে যেতে ছাত্রদের বাধ্য করতেন -তাঁর অদ্ভুত বিস্ময়কর যোগ্যতার ক্ষমতাবলে। যে কিতাবই তিনি পড়ান -তা পড়াতে গিয়ে ছাত্রদের মন -মানসের গভীরে মিশে যেতেন একেবারে রক্ত -মাংসের ন্যায়।কিতাবের প্রতিটি বর্ণ, ছত্র সর্বোপরি তার মর্মের গভীরে চলে যান তিনি।ফলে কিতাবের বিষয়বস্তু ও মর্ম এবং কিতাব লেখার লক্ষ-উদ্দেশ্য -সবই ছাত্রদের সামনে পরিষ্কার হয়ে যায়। পঠদানের ফাঁকে ফাঁকে আলোচ্য বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন শিক্ষনীয় রসগল্প উপস্থাপন করে নাইমীন হযরাতদের তন্দ্রাচ্ছন্নভাব দূর করার চেষ্টা করেন।
তাঁর সান্নিধ্য পরশে সোনা হয়েছে কতো ছাত্র! তাঁর ইলমী গভীরতার বিশালতায় বসে কতোজন নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন দেখেছেন এক জায়গায় কেমন করে জমা হয়েছে অ- নে-ক জায়গার সুষমা।
তাঁর মধ্যে আমি সত্য সুন্দরের পরম প্রকাশকে খুঁজে পেয়েছি। স্নেহ-সহানুভূতি
তে তিনি আমাদের হৃদয়ের অত্যন্ত সন্নিকটে, কিন্তু তাঁর বিরাট ব্যক্তিত্ব আমাদের বুদ্ধি এবং নাগালের বাইরে। তিনি আমাদের আদর্শ উস্তাদে মুহতারাম ও রাহবার। তিনি আমাদের শিক্ষাজীবনের অপরিসীম প্রেরণার উৎস।
তাঁর দীক্ষার গন্ডী বিস্তৃত ঘরের চার দেয়াল থেকে শুরু করে মাদরাসা, পাঠশালা, রচনা ও সংকলনের প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত।মসজিদের নিরিবিলি শান্ত পরিমন্ডল থেকে সংগ্রামের কোলাহলপূর্ণ প্লাটফর্ম পর্যন্ত।
পারিবারিক জীবন:
জীবিত সাত ভাইয়ের মধ্যে তিনি চতুর্থ। তাঁর দুইজন সম্মানিতা বোনও রয়েছেন।পরিবারের সদস্য ও শিশুদের প্রতি তাঁর স্নেহ-মমতা সীমাহীন।তাঁর কাছে পরিবারের সব সদস্যই অতি আদরের।স্নেহ, মমতা আর ভালোবাসার চাদরে পরিবারের সদস্যদের সর্বদা আচ্ছাদিত করে রাখেন।বিশেষত শিশুদের প্রতি তাঁর আন্তরিকতা চোখে পড়ার মতো।আপন চাচা,ফুফু, খালা ও ভাই বিরাদরগনের খবরা খবর নেন। নিজ বোনদের খোজ -খবর, আনা নেয়া,তাদের বাড়ীতে যাওয়া -আসার নির্ধারিত রুটিন রয়েছে।
দাম্পত্যজীবন:
তিনি যেমন পরহেজগার ও সম্ভ্রান্ত খান্দানের মানসপুত্র তেমনি তিনি তাঁর জীবনসঙ্গিনী হিসেবে বেছে নিয়েছেন উসমানিনগর উপজেলার শাদিপুর ইউপির তাজপুর গ্রামের -আরেক পূতঃপবিত্র দ্বীনদার, মুত্তাকী খান্দানের এক ভাগ্যবতি রমণীকে।তিনি বড়ো আদর্শবতী ও পূণ্যবতি। তিনি ত্যাগ নিষ্ঠায়-ভালোবাসায় খিদমত করছেন আমাদের শায়খের। তাঁর সম্মানিত শশুর শায়খুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদানী রহ.এর শিষ্য মাও. শাহ আবদুল কারীম দা.বা.।তিনিও দ্বীনদার, মুত্ত্বাকী ও পরহেজগার এক আল্লার কামেল বান্দা।
হযরতের চারজন কন্যা রয়েছেন। বর্তমানে সকলেই লেখা -পড়া করছে।
আতিথেয়তা:
বাড়ীতে যে কোন মেহমান আসলে তাদের আতিথেয়তা ও অপ্যায়ন খুব যত্নের সাথে করেন।ভালোবাসা ও মেহমানদারীর সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করেন।
রাজনৈতিক অবস্থান:
রাজনীতির ময়দানে তিনি ভীষণ দূরদর্শী। কুশলী। দিক-নির্দেশক। জমিয়তের রাজনীতি করেন কিন্তু নিজেকে কখনো নিদৃষ্ট দলের গণ্ডিতে-ই কেবল সীমাবদ্ধ করে রাখেন না। তার চিন্তাজুড়ে জাতীয় ঐক্য ও নিখাদ দেশপ্রেমের বৃহত্তর চিন্তা।সর্বোপরি তার রাজৈনতিক চিন্তাধারা ও দর্শন যুগোপযোগী উম্মাহর কল্যানকামি, শান্তি, সমৃদ্ধি,মানবিক বোধ, মানসিক ওআত্মিক উন্নায়নে সমৃদ্ধিশীল। নির্মোহ ও নিসংকোচ উদার রাজনৈতিক চর্চার পুরোধা ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মনীষা। রাজনৈতিক কোন সংকীর্ণ চাদরে বাঁধা নয় তার চেতনার শেকড়। সবাইকে নিয়ে,সবার সাথে মিলে দেশ, জাতি ও ইসলামের জন্য তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি অন্যান্য জনীতিবীদদের মত গতানুগতিক নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য রাজনীতি করেননা- বরং তাঁর রাজনীতি ইসলামি তাহজিব তামাদ্দুন ও দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ত রক্ষার পাশাপাশি দেশের জনগণকে ইসলামি চেতনায় উদ্ধুদ্ধ করে আদর্শ রাষ্ট্র বিনির্মাণে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করা।
সামাজিক কর্মকান্ড:
জনদরদী নেতা তিনি। অসহায় মানুষের জন্য নিবেদিত প্রাণ তিনি। আমাদের দেশের বিভিন্ন দুর্যোগের সময় তাঁকে দেখা যায় প্রথম সারিতে। মানব সেবায় নিজের সবটুকু ব্যয় করে দেন তিনি।
ফেরক্বায়ে বাতেলা ও এনজিও মিশনারির আগ্রাসী অপশক্তির মোকাবেলায় আলেম সমাজ ও আম জনতাকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য এবং অসহায়, অনাথ -ইয়াতিম, বিধবা ও দূর্গত মানুষের সেবার জন্য তিনি গঠন করেন
"উলামা পরিষদ শরিষতলা"জনসাধারণ্যে ঐক্য ও একতার সুদৃঢ় বন্ধন স্থাপন করা এবংতাদেরকে ইসলামের সামগ্রিক অবকাঠামো ও মূলনীতীর দিকে আহবান করাটাই এই সংঘঠনের মূল লক্ষ্য।তাদেরকে ইসলামের আদব -আখলাক ও উন্নত চরিত্র -মাধুরি এবং বিশেষ তারবিয়াতি প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত করে তোলা।
তাঁর আদর্শের ছায়ায় থাকতে চাই আজীবন, অনন্তকাল।.আমি তাঁকে হাজার বছর দেখতে চাই আমাদের মাঝে।
আল্লাহ তাঁকে বাঁচিয়ে রাখুন, আমার জীবনের কিছু অংশ নিয়ে হলেও। কর্মক্ষেত্রে রাখুন, জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত । তাঁর আলো ছড়িয়ে পড়ুক,পৃথিবীর প্রতিটি ছায়ায়।.
আপনার কাছে সবিনয়ে ক্ষমাপার্থী হযরত।আমার ক্ষমতা নেই আপনার সম্পর্কে লেখার। আমার অনেক কিছুই জানা নেই। আমার কলমের সামর্থ্য নেই আপনার সোনালি জীবন ফুঁটিয়ে তোলার।
প্রিয়জনের কথা লিখতে ভালো লাগে, মন শান্তি পায়, আনন্দ উপভোগ করে। তাই লিখা।
খবর বিভাগঃ
মতামত
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়