Saturday, October 19

সকালের নাস্তার জন্য বিখ্যাত যে শহর

ফিচার ডেস্ক  ::

সকালের নাস্তা নিয়ে অনেকেরই কোনো মাথাব্যথা নেই। কিন্তু একটি দেশ বিখ্যাত হয়ে উঠেছে শুধুমাত্র সকালের নাস্তার জন্যই! তৃপ্তিসহ রাতের উপবাস ভাঙতে চাইলে আপনাকে যেতে হবে তুরস্কের ছোট্ট শহর 'ভ্যান'-এ। শহরটির রেস্টুরেন্টগুলো অসংখ্য পদের পুষ্টিকর খাবার দিয়ে আপনাকে নিয়মিত ব্রেকফাস্ট করার জন্য উৎসাহিত করবে। শুধু এই শহরেই নয়, সমগ্র তুরস্কের জনগণের মধ্যেই সকালের খাবার নিয়ে ভোজনবিলাসী ভাব ও আকর্ষণের কোনো অভাব নেই।

বহু বছরের প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে মুখরোচক খাদ্য তৈরির জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শহরটিতে প্রতিদিন সকালে পরিবেশন করা হয় প্রায় দেড়'শ পদের খাবার। ভ্যান শহরে সকালের খাবারের জন্য আপনাকে খরচ করতে হবে বাংলাদেশি মুদ্রায় মাত্র ৩৭০ টাকা! কিছু কিছু খাবারের দাম এর চেয়ে খানিকটা বেশি বা কম হতে পারে। এই পরিমাণ টাকায় আপনি কী কী খাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন তা সম্পর্কে জেনে নিন!
ভ্যান শহরে আপনি যখন সকালের নাস্তা করতে যাবেন সর্বপ্রথম আপনার থালায় দেয়া হবে- পনির, জলপাই, ডিম, সসেজ ও জেলি। যার পরিমাণ এতো বেশি থাকে যে, একজনের খাবার দুজন মানুষ অনায়াসে খেতে পারবে। এরপরই দেয়া হবে কয়েক রকমের চা। আপনি যদি চা অপছন্দ করেন তাহলেও কোনো চিন্তা নেই, থাকছে ব্ল্যাক কফি। বলে রাখা ভালো, তুরস্কের ব্ল্যাক কফি সারা বিশ্বে বিখ্যাত। এর নেপথ্য কারণ, তাদের কফি বানানোর পদ্ধতি।
শুধুমাত্র নাস্তা করার জন্যই অনেকে এই শহরে আসেন
শুধুমাত্র নাস্তা করার জন্যই অনেকে এই শহরে আসেন
ভ্যানের সকালের খাবার বা ‘কাহভাল্টি’ তাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও রন্ধনশিল্পের বর্ণনা দেয়। কাহভাল্টি একটি তুর্কি শব্দ। যার মানে সকালের চা পান করার আগে খাবার খাওয়া। কাহভাল্টির শুরুটা হয় কিছু হালকা ও টাটকা ফুড আইটেম দিয়ে। এর জন্য প্রথমে আপনার সামনে পরিবেশন করা হবে শসা ও টমেটোর সালাদ, জলপাই, ফলের জ্যাম এবং আরো কিছু ফল ও সবজি।
কাহভাল্টির পর আপনাকে দেয়া হবে পনিরের তৈরি একটি বিশেষ থালা। যেটা ‘বেয়াজ পেয়নির' নামে পরিচিত। এই থালা পুরো দেশের মধ্যে জনপ্রিয়। কথিত আছে, তুরস্কের মানুষের দিন শুরু হয় এই থালা দেখেই! ভেড়ার দুধের তৈরি পনিরের স্বাদ এতটাই অসাধারণ, একবার মুখে নিলে বার বার খেতে চাইবেন।  এছাড়া এই থালায় পুদিনা পাতা, থাইম, গার্লিক শুটস, বন্য ফেনেল ও এধরনের মোট ২০টি বন্য ঔষধি গাছের বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করা হয়। পনির ও ঔষধি গাছের সমন্বয়ে তৈরি এই খাদ্য একজন ব্যক্তির পাঁচন শক্তি বৃদ্ধিতে ও তার রক্তকে জীবাণুমুক্ত করে পরিশুদ্ধ করতে সহায়তা করে। এর সঙ্গে থাকে ‘বাল কায়মাক', যা আসলে মধু ও ক্রিমের মিশ্রণ।
এছাড়া ‘কাসেরি’ ও ‘আইওর’ তো রয়েছেই। কাসেরি হলো ভেড়ার দুধের তৈরি শক্ত পনির এবং আইওর ছাগলের দুধ দিয়ে বানানো কটেজ পনির। এছাড়া ‘মুর্চুগা’ নামক খাবারটির স্বাদের সঙ্গে প্যানকেকের কিছুটা মিল পাবেন। এর মূল উপাদান মাখন, আটা ও ডিম। আর মুর্চুগা পরিবেশন করা হয় মধু ও ফলের জ্যাম দিয়ে। দেখতে কোনো অংশেই প্যানকেকের মতো মনে না হলেও স্বাদে এর মিল আছে। ডিমের দুটি থালাও পাবেন ব্রেকফাস্টে। একটি থালায় ডিম ভাজার সঙ্গে সুজুক বা ক্যাভুরমা (অল্প আঁচে ভাজা ভেড়ার বা গরুর মাংস) এবং পনির দেয়া হয়। একে ‘সাকাকলু ইয়ামার্টা' বলা হয়। আরেকটি থালা হলো-‘মেনেমেন’। এটি ডিমের সঙ্গে টমেটো, পেঁয়াজ, ক্যাপসিকাম ও পনির মিশিয়ে তৈরি করা হয়। ভ্যান ব্রেকফাস্ট রেস্টুরেন্টগুলোতে একটি খাবারের জন্য প্রায়ই বিভিন্ন অফার দেয়া হয়, যার নাম ‘ক্যাভুট’। গমের আটা দিয়ে বানানো হয় এই ক্যাভুট। তুরস্কে এর চাহিদা অনেক।
এছাড়া নাম না থাকা অনেক খাবার রয়েছে যা সকালের খাবারের পাতে দেয়া হয়। সকালবেলায় এতো রকমের মুখরোচক খাবারের স্বাদ নিতে চাইলে আপনাকে এর মূল ঘাঁটি তথা ভ্যান শহরেই যেতে হবে!

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়