চলতি বছরের আলোচিত ঘটনাগুলোর মধ্যে অন্যতম সোনাগাজীর মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা। গত ৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসায় আলিম পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে নুসরাতকে ডেকে নিয়ে হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়। চারদিন যন্ত্রণা সহ্য করার পর ১০ এপ্রিল নুসরাত মারা যান।
এই ঘটনায় হত্যা মামলা দায়েরর পর ১৬ জনকে
অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (পিবিআই)।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন
ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মামুনুর রশিদ এ মামলায় ১৬ আসামির সবাইকে ফাঁসির
আদেশ দেন।
নুসরাতের পরিবারের পক্ষে আদালতে লড়েছেন
বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট ও ফেনী জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহজাহান
সাজু। মামলাটির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, চলতি বছরের ২৭ মার্চ
মাদরাসার অদক্ষ সিরাজ উদদৌলার নেতৃত্বে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় ২৮ মার্চ মামলা
করেন নুসরাতের মা। ওই মামলাটির আইনজীবী ছিলাম। এরপর ১০ এপ্রিল থেকে নুসরাত
হত্যা মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছি।
অ্যাডভোকেট শাহজাহান সাজু বলেন, সম্পূর্ণ
বিনা পারিশ্রমিকে এ মামলাটি স্বপ্রণোদিত হয়ে লড়েছি, অনেক সময় নিজের পকেট
থেকে ব্যয় করেছি। নুসরাতের পরিবারকে এক টাকাও খরচ করতে হয়নি। একটা কাগজও
কিনতে হয়নি। তিনি বলেন, আমার নিজেরই তিনটা মেয়ে আছে, তারাও লেখাপড়া করে। আর
কোনো মেয়েকে যেন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে গিয়ে এমন নির্মমতার শিকার হতে না হয়।
সেজন্য সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে আসামিদের সর্বোচ্চ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি
নিশ্চিতের জন্য আইনি লড়াইয়ে লড়েছি। এতে পারিশ্রমিক নেয়ার প্রশ্নই আসে না।
এ মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত ১৬ আসামি হলেন-
সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসার বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ সিরাজ
উদদৌলা, রুহুল আমিন, সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম, মাদরাসার
শিক্ষক আবদুল কাদের, প্রভাষক আফসার উদ্দিন, মাদরাসার ছাত্র নুর উদ্দিন,
শাহাদাত হোসেন শামীম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ যোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে
সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা পপি ওরফে তুহিন,
আবদুর রহিম শরিফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন মামুন, মোহাম্মদ শামীম ও
মহি উদ্দিন শাকিল। এদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহজাহান সাজু এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ
করেছেন।
শাহজাহান সাজু বলেন, আমি এতটাই খুশি হয়ে, যা
বলে বোঝাতে পারবো না। এ মামলাটি পরিচালনা করতে গিয়ে অনেক অস্বস্তিকর
পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। আসামিপক্ষের আইনীজীবীরা অনেক সময় কোর্টের ভেতরে ও
বাইরে বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করেছেন। কিছু আইনজীবী অশোভন আচরণও করেছেন।
নিজের মেয়েদের মুখের দিকে তাকিয়ে নুসরাতের জন্য লড়ে গেছি, কোনো কিছুকেই
তোয়াক্কা করিনি।
সূত্র::
ডেইলি বাংলাদেশ
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়