Sunday, October 27

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী

ফিচার ডেস্ক 

বাংলার ইতিহাসে প্রথম মহিলা কলেজ হচ্ছে ‘বেথুন কলেজ’। সেই প্রতিষ্ঠান থেকে বিএ পরীক্ষা দিয়ে প্রথম হয়ে পেয়েছিলেন ‘পদ্মাবতী স্বর্ণ পদক’। তারপর ইংরেজিতে এমএ পড়তে ভর্তি হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়টিতে তখন ছেলের সঙ্গে মেয়েদের পড়ার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। কিন্তু তার মেধার কথা বিবেচনা করে তৎকালীন উপাচার্য ড. হার্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার বিশেষ অনুমতি দিয়েছিলেন তাকে।

বলছিলাম লীলা রায়ের কথা। তিনি একজন বাঙালি সাংবাদিক, জনহিতৈষী এবং রাজনৈতিক আন্দোলনে সক্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। তবে তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিচয় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী। ১৯২৩ সালে এমএ পাশ করেছিলেন তিনি। ছাত্রাবস্থায় বিপ্লবী কর্মকাণ্ড এবং নারী আন্দোলনে যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন। নারীশিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্যে ১৯২৩ সালে গড়ে তুলেছিলেন দীপালি সংঘ। এই সংগঠনের উদ্যোগে বেশ কিছু মেয়েদের স্কুল গড়ে ওঠে। মুসলিম নারীদের শিক্ষাতেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।
নারী আত্মরক্ষা ফান্ড গঠন করেন লীলা রায়। সেখানে মেয়েদের মার্শাল আর্ট এবং শরীরচর্চার প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। তার পরিকল্পনায় ‘ছাত্রীভবন’ নামে একটি ছাত্রী-আবাসিক চালু হয় কলকাতায়। লবণ সত্যাগ্রহের সময়ে গড়ে তোলেন ঢাকা মহিলা সত্যাগ্রহ কমিটি। ঢাকা শহর এবং জেলায় জেলায় ঘুরে তিনি লবণ আইন ভঙ্গ করেন। তার সম্পাদিত ‘জয়শ্রী’ পত্রিকা হয়ে উঠেছিল নারী আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ মুখপত্র।
লীলা রায় ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসুর সহযোগী
লীলা রায় ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসুর সহযোগী
১৯০০ খ্রিষ্টাব্দের ২১ অক্টোবর আসামের গোয়ালপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন লীলা রায়। খুব ছোটোবেলায় তিনি বাড়িতে দেখেছেন, বিলিতি কাপড় বর্জন করে বঙ্গলক্ষ্মীর মোটা কাপড় পড়ছে তার পরিবার। বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর ফাঁসি হলে তাদের বাড়িতে পালিত হয়েছিল অরন্ধন। এভাবেই তার মনে ছোটোবেলাতেই দেশপ্রেমের আগুন জ্বলে উঠেছিল। তিনি শ্রীসংঘ নামের এক বিপ্লবী দলের সদস্য হয়েছিলেন অল্প বয়সেই। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়ে বহুবার তিনি কারাবরণ করেছেন।
বিপ্লবী অনিল রায়কে ১৯৩৯ সালে লীলা বিয়ে করেছিলেন; তখন থেকে তার নামের সঙ্গে যুক্ত হয় ‘রায়’। ফরোয়ার্ড ব্লক গঠনে অনিল রায় এবং লীলা রায় ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসুর সহযোগী। সেই দলের সাপ্তাহিক মুখপত্র ‘ফরোয়ার্ড ব্লক’-এর সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেছিলেন লীলা। কলকাতা ও নোয়াখালীর দাঙ্গায় তিনি ত্রাণকার্যে অংশ নিয়েছিলেন। দাঙ্গার সময়ে নোয়াখালীতে তিনি গান্ধিজির সঙ্গে দেখা করেন। লীলা রায় ভালো গান গাইতেন, ছবি আঁকতেন, সেতার বাজাতেন। 
১৯৪৬ সালে বাংলা থেকে ভারতীয় গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন লীলা রায়। ভারতীয় সংবিধানের খসড়া তৈরিতে অবদান রেখেছিলেন তিনি। দেশভাগের পর তিনি পশ্চিমবঙ্গে চলে গিয়েছিলেন। তার রাজনৈতিক ও সামাজিক কাজকর্ম এক নতুন গতি পেয়েছিল ভারতে। ১৯৭০ সালের ১১জুন না ফেরার দেশে চলে যান তিনি।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়