Saturday, September 14

পবিত্র কোরআনের সংক্ষিপ্ত তথ্য কণিকা

গাজী মো. রুম্মান ওয়াহেদ  ::

পবিত্র কোরআন বিশ্বের বিস্ময়কর গ্রন্থ। এটি সর্বাধিক প্রশংসিত মহা প্রজ্ঞাময় রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর ওপর দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে প্রয়োজনের তাগিদে নাজিল হয়েছে।

কোরআনুল কারিমের তথ্য জানা প্রতিটি মুসলিমের ঈমানি দায়িত্ব। কোরআনের সংক্ষিপ্ত তথ্য কণিকা তুলে ধরা হলো-
> প্রঃ পবিত্র কোরআনে মোট সূরা কতটি?
উঃ১১৪ টি।
প্রঃ পবিত্র কোরআনেরর প্রথম সূরার নাম কী?
উঃ সূরা ফাতিহা।
প্রঃ পবিত্র কোরআনে সবচেয়ে বড় সূরা কোনটি?
উঃ সূরা বাকারা।
প্রঃ পবিত্র কোরআনে সবচেয়ে ছোট সূরা কোনটি?
উঃ সূরা কাওছার।
প্রঃ পবিত্র কোরআনের মধ্যে সবচেয়ে বড় আয়াত কোনটি এবং কোন সূরায়?
উঃ সূরা বাকারার ২৮২নম্বর আয়াত।
প্রঃ পবিত্র কোরআনেরর মধ্যে সবচেয়ে ফজিলত পূর্ণ আয়াত কোনটি?
উঃ আয়াতুল কুরশী।
প্রঃফরজ নামাজের পর কোন আয়াতটি পাঠ করলে, মৃত্যু ছাড়া জান্নাতে যেতে কোকো বাধা থাকে না?
উঃ আয়াতুল কুরশী।
প্রঃ পবিত্র কোরআনের কোন সূরাটি পাঠ করলে, কবরের আযাব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়?
উঃ সূরা মূলক।
প্রঃ পবিত্র কোরআনের কোন সূরাটি কোরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান?
উঃ সূরা ইখলাস।
প্রঃ পবিত্র কোরআনের কোন সূরার প্রতি ভালবাসা থাকলে, মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে?
উঃ সূরা ইখলাস।
প্রঃ পবিত্র কোরআনের কোন সূরাটি কোরআনের চতুর্থাংশের সমপরিমাণ?
উঃ সূরা কাফিরূন।
প্রঃ পবিত্র কোরআনের কোন সূরাটি জুমার দিন বিশেষ ভাবে পাঠ করা মুস্তাহাব?
উঃ সূরা কাহাফ।
প্রঃ পবিত্র কোরআনের কোন সূরার প্রথমাংশ তেলাওয়াত কারীকে দাজ্জালের ফেতনা থেকে রক্ষা করবে?
উঃ সূরা কাহাফের প্রথম দশটি আয়াত।
প্রঃ পবিত্র কোরআনের কোন দু'টি সূরা জুমার দিন ফজরের নামাজে তেলাওয়াত করা সুন্নত?
উঃ সূরা সাজদা ও দাহর।
প্রঃ পবিত্র কোরআনের কোন দু'টি সূরা জুমার নামাজে তেলাওয়াত করা সুন্নত?
উঃ সূরা আ'লা ও গাশিয়া।
প্রঃ পবিত্র কোরআন কত বছরে নাজিল হয়?
উঃ তেইশ বছরে। 
প্রঃ ‘মুহাম্মাদ’ (সা.) এর নামটি পবিত্র কোরআনে কত স্থানে উল্লেখ হয়েছে?
উঃ চার স্থানে। ১/সূরা আলে ইমরান। (১১৪নম্বর আয়াত) ২/সূরা আহযাব।(৪০নম্বর আয়াত) ৩/সূরা মুহাম্মাদ। ২নম্বর আয়াত) ৪/ সূরা ফাতাহ্। (২৯নম্বর আয়াত)।
প্রঃ পবিত্র কোরআনের সর্বপ্রথম কোন আয়াত নাজিল হয়?
উঃ সূরা আলাকের প্রথম পাঁচটি আয়াত।
প্রঃ পবিত্র কোরআনের কোন আয়াতটি সর্বশেষ নাজিল হয়?
উঃ আল্লাহ তায়ালা বলেন- ﻭﺍﺗﻘﻮﺍ ﻳﻮﻣﺎً ﺗﺮﺟﻌﻮﻥ ﻓﻴﻪ ﺇ ﻟﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺛﻢ ﺗﻮﻓﻲ ﻛﻞ ﻧﻔﺲ ﻣﺎﻛﺴﺒﺖ ﻭﻫﻢ ﻻ ﻳﻄﻠﻤﻮﻥ সূরা বাকারার ২৮১ নম্বর আয়াত। ইবনু আবী হাতেম সাঈদ বিন জুবাইর (রা.) থেকে বণর্না করেন যে, এই আয়াত নাজিল হওয়ার পর নবী করিমম (সা.) নয় দিন জীবিত ছিলেন। (আল ইতক্বান ফি উলূমিল কোরআন)।
প্রঃ পবিত্র কোরআনের সর্বপ্রথম কোন সূরাটি পূর্ণরূপে নাজিল হয়?
উঃ সূরা ফাতিহা।
প্রঃ পবিত্র কোরআন প্রথম যুগে কী ভাবে সংরক্ষিত ছিল?
উঃ রাসূল (সা.)-এর যুগে কোরআন সংরক্ষণ:
যেহেতু পূর্ণ কোরআন একসঙ্গে নাজিল হয়নি; বরং কোরআনের বিভিন্ন আয়াত বিশেষ প্রয়োজনীয়তা ও অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অবতীর্ণ হয়েছে; তাই রাসূল (সা.) এর যুগে শুরু থেকেই বই আকারে একে সংরক্ষণ করা সম্ভব ছিল না। আসমানি গ্রন্থগুলোর মধ্যে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনকে এ বিশেষত্ব দান করেছেন যে কলম-কাগজের চেয়েও একে অগণিতসংখ্যক হাফেজের স্মৃতিপটে সংরক্ষণ করেছেন। 
মুসলিম শরিফে এসেছে, মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় হাবিব রাসূল (সা.)-কে বলেছেন, ‘আমি আপনার ওপর এমন কিতাব অবতীর্ণ করব, যাকে পানি ধুয়ে নিতে পারবে না।’ অর্থাৎ দুনিয়ার সাধারণ গ্রন্থগুলোর অবস্থা এই যে পার্থিব বিপর্যয়ের কারণে সেগুলো ধ্বংস হয়ে যায়; কিন্তু কোরআনকে মানুষের অন্তরে অন্তরে এভাবে সংরক্ষণ করা হবে যে তা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কোনো আশঙ্কাই থাকবে না। তাই প্রথম দিকে লেখার চেয়েও কোরআন মুখস্থ করার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ফলে রাসূল (সা.)-এর জীবদ্দশায়ই সাহাবায়ে কেরামের একটি বড় অংশ হাফেজে কোরআন হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন-হজরত আবু বকর, ওমর, ওসমান, আলী, তালহা, সাআদ, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, হুজায়ফা বিন ইয়ামান, হজরত সালেম, আবু হুরায়রা, ইবনে ওমর, ইবনে আব্বাস, আমর ইবনুল আস, আবদুল্লাহ বিন আমর, মুয়াবিয়া, ইবনে জুবাইর, আবদুল্লাহ বিন আস্ সায়েব, আয়েশা, হাফসা, উম্মে সালমা, উম্মে ওয়ারাকা, উবাই ইবনে কাআব, মাআজ ইবনে জাবাল, আবু হুলাইমা মাআজ, জায়েদ ইবনে সাবেত, আবুদ্ দারদা, মুজাম্মা বিন জারিয়া, মাসলামা বিন মুখাল্লিদ, আনাস ইবনে মালেক, উকবা বিন আমের, তামিম দারেমি, আবু মুসা আশআরি এবং হজরত আবু জায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহুম প্রমুখ অন্যতম হাফেজ সাহাবি ছিলেন। (আল-ইত্বকান, খ. ১, পৃ. ৭৩-৭৪) 
মূলত উল্লিখিত নামগুলো সেসব সাহাবির, যাদের নাম হাফেজে কোরআন হিসেবে ইতিহাসের পাতায় স্থান পেয়েছে। অন্যথায় আরো অগণিত সাহাবির গোটা কোরআন মুখস্থ ছিল। কেননা বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) কখনো কখনো একেক গোত্রে সত্তরজন করে কোরআনের শিক্ষক পাঠাতেন। বিরে মউনার যুদ্ধে সত্তরজন কারি সাহাবি শহীদ হওয়ার কথা বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে। হাফেজ সাহাবির সংখ্যা এতই বেশি যে ইমামার যুদ্ধে প্রায় সমসংখ্যক হাফেজ, আরেক বর্ণনা মতে, পাঁচ শ (ইবনে কাছির, খ. ১, পৃ. ২৬), অন্য বর্ণনা মতে, সাত শ কারি/হাফেজ সাহাবি শহীদ হয়েছেন। (উলুমুল কোরআন, পৃ. ১৭৬)

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়