সেনা অভিযানের পরও মিয়ানমারের রাখাইনে থেকে যাওয়া রোহিঙ্গারা ভয়াবহ গণহত্যার হুমকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
সোমবার জাতিসংঘের একটি ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন’ বা তথ্যানুসন্ধান দল
তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে আবারও মিয়ানমারের
সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাংসহ শীর্ষ কয়েকজন জেনারেলকে বিচারের আওতায় আনার
আহ্বান জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাখাইন রাজ্যে রয়ে যাওয়া প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গা
মুলসমানরা এখনো অবিরাম নিপীড়নের শিকার হচ্ছে এবং তারা গণহত্যার ঝুঁকি নিয়েই
সেখানে বাস করছে। তারা ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে রয়েছে। তাদের চলাফেরার উপর এত
বেশি কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে যে তার প্রভাব তাদের মৌলিক মানবিক চাহিদার উপরও
পড়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার মানবাধিকার আইনজীবী এবং জাতিসংঘ প্যানেলের সদস্য
ক্রিস্টোফার সিডটি এক বিবৃতিতে বলেন, “এসব কারণে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা
শরণার্থী, যাদের বেশিরভাগই বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে তাদের রাখাইনে ফেরা
অসম্ভব হয়ে উঠেছে। এছাড়া রাখাইনে রয়ে যাওয়া রোহিঙ্গারাও এখনো গণহত্যার
শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।”
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর
পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।
হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে
পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় সাত লাখের মতো মানুষ।
সহিংসতা কবলিত রাখাইনের পরিস্থিতি অনুসন্ধানে ওই বছরের মার্চে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন গঠন করে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল।
গত বছর ওই মিশনের প্রতিবেদনে ২০১৭ সালেরআগস্ট পরবর্তী সময়ে রাখাইনে
মিয়ানমারের সেনা অভিযানকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দেয়া হয়। প্রতিবেদনটিতে এজন্য
মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তাদের বিচারের মুখোমুখি করা উচিত বলেও পরামর্শ দেয়া
হয়। কিন্তু মিয়ানমার গতবছরের ওই প্রতিবেদনে উল্লিখিত বেশির ভাগ অভিযোগই
অস্বীকার করেছে।
এদিকে সোমবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের সেনা বাহিনী ও অন্য
সরকারি কর্তৃপক্ষের হাতে হত্যা, ধর্ষণ, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, নির্যাতন,
বাস্তুচ্যুতি ও অন্যান্য মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য যেসব অনুষঙ্গ
কাজ করেছিল সেগুলো এখনও বহাল রয়েছে।
এছাড়া মিয়ানমারের উত্তরের দুই প্রদেশ শান ও কোচিনে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে
অভিযানের নামে সেনাবাহিনী একই ধরনের ‘অত্যাচার ও নিপীড়ন’ চালাচ্ছে বলে
জানানো হয়েছে।
বলা হয়েছে, ওই দুই রাজ্যেও মিয়ানমার সেনাবাহিনী নিপীড়নের প্রধান অস্ত্র হিসেবে ধর্ষণ এবং যৌন নিপীড়নকে ব্যবহার করছে।
ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন রোহিঙ্গা গণহত্যার দায়ে মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক
অপরাধ আদালতে (আইসিসি) প্রেরণ বা যুগোস্লাভিয়া ও রুয়ান্ডার মতো
ট্রাইব্যুনাল গঠনের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছে। এছাড়া জাতিসংঘ তদন্তকারীদের
প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশের সরকার ও কোম্পানিগুলোকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর
সঙ্গে সম্পর্ক সীমিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন প্রকাশের পর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের পক্ষ থেকে
টেলিফোনে মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জ হতাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা
করা হলেও তাতে সাড়া মেলেনি।
টেলিফোনে সেনাবাহিনীর দুই মুখপাত্রের কাছে এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে তারাও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জাতিসংঘ প্যানেলের সদস্য ক্রিস্টোফার সিডটি বলেন, “রোহিঙ্গাদের নিপীড়নের
বিষয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গন যেভাবে নিষ্ক্রিয় থেকেছে তা হতাশজনক, এর অবসান
ঘটাতে হবে।”
“যদি জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবারও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তবে দুঃখজনক এ ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটতেই থাকবে।”
খবর বিভাগঃ
দেশের বাইরে
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়