বর্তমান সময়ের অন্যতম ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ফুটবলার হিসেবে যতটা বড়, মানুষ হিসেবে তার থেকেও অনেক বড় রোনালদো। তার মানবিকতার গল্প সবারই জানা। তবে তার পরিবারের প্রতি তার কতটা মায়া তা দেখা গেল সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে। মৃত বাবার একটি ভিডিও ফুটেজ দেখে কেঁদে ফেলেন এ জুভেন্টাস তারকার। যেখানে ছেলের অর্জন নিয়ে বলেছিলেন রোনালদোর বাবা।
ভিডিওটি ২০০৪ সালে পর্তুগালে ইউরো
টুর্নামেন্ট শুরুর আগে করা। পরের বছরই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন রোনালদোর
বাবা হোসে দিনিস অ্যাভিইরো। হোসে ছিলেন মদ্যপ ও একজন সাবেক সৈনিক। যকৃতের
রোগে ৫২ বছর বয়সে মারা যান তিনি। তবে দু:খের বিষয় তিনি দেখে যেতে পারেননি
ছেলের এমন আকাশ ছোঁয়া সাফল্য।
সাক্ষাৎকারে কান্না ভেজা চোখে রোনালদো বলেন,
‘আমি কখনো এই ভিডিও দেখিনি। অবিশ্বাস্য।’ পরে এই ফরোয়ার্ড সম্প্রতি তার
ওপরে আসা ধর্ষণের অভিযোগের ব্যাপারেও কথা বলেন। ‘এ বিষয়টি নিয়ে আমি বিব্রত
ছিলাম’। যদিও মার্কিন মডেলের করা সেই মামলায় কোনো কিছু প্রমাণিত না হওয়ায়
অভিযোগ মুক্ত হন রোনালদো।
আগামীকাল ব্রিটেনের ফ্রি-টু-এয়ার চ্যানেলে
স্থানীয় সময় রাত ৯টায় পিয়ার্স মরগানের সঞ্চালনায় সাক্ষাৎকারটি আইটিভিতে
সম্প্রচার হবে। তবে গুড মর্নিং ব্রিটেন টুডে আজই সেখানকার আলোচনার কিছু অংশ
প্রকাশ করে। যেখানে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, ছেলের অর্জন নিয়ে বাবা
গর্বিত ব্যাপারটি কিভাবে দেখেন, ‘হ্যাঁ, এটা দারুণ।’
রোনালদো বলেন, ‘আমি মনে করেছিলাম এই
সাক্ষাৎকারটি মজার হবে। তবে আমি যে কাঁদবো সেটা আশা করিনি। আমি এই ছবিগুলো
আগে কখনো দেখিনি। আমি জানি না আপনারা ছবিগুলো কোথায় পেয়েছেন...এই ছবিগুলো
আমার পরিবারকে দেখাতে হবে।’
‘আমি সত্যি বলতে আমার বাবার সম্পর্কে শতভাগ
জানি না। সে একজন মদ্যপ ব্যক্তি ছিলেন। স্বাভাবিকভাবে আমি তার সঙ্গে সেভাবে
কখনো কথা হতো না। এটা কঠিন ছিল।’ রোনালদোর ২০ বছর বয়সের সময় তার বাবা মারা
যান। ফলে তার ক্যারিয়ারের বড় মুহূর্তগুলোই তিনি দেখে যেতে পারেননি।
এগুলোর মধ্যে ছিল সাবেক ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ
ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে পাঁচটি চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়। ব্যক্তিগত
অর্জনে পাঁচবারের বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার ব্যালন ডি’অর। এছাড়া
রোনালদোর চার সন্তানের কাউকেই দেখেননি হোসে।
মোজাম্বিক ও অ্যাঙ্গোলায় যুদ্ধে অংশ নিয়ে
আক্রান্ত হয়েছিলেন হোসে। রোনালদো যোগ করেন, ‘আমার শীর্ষে ওঠা সে দেখেনি এবং
আমার পুরস্কারপ্রাপ্তিও সে দেখে যেতে পারেনি। আমার পরিবার, মা, ভাই এমনকি
আমার বড় ছেলেও দেখেছে। তবে বাবা কিছুই দেখেনি। এটা ছিল সে খুব কম বয়সেই
মারা যান।’
আর্মিতে একসঙ্গে কাজ করা রোনালদোর বাবার
শৈশবের এক বন্ধু জানান, হোসে গর্ব করতে বলতেন তার ছেলে একদিন বিশ্বের সেরা
খেলোয়াড় হবে। ইএসপিএনে আরেক বন্ধু বলেন, ‘যুদ্ধ শেষে তিনি ও হোসে একেবারে
শেষ হয়ে গিয়েছিলেন। ঐ যুদ্ধ শেষে আমাদের কাছে কোনো কাজ বা অর্থ ছিল না।
অবশ্যই আমি রোনালদোকে দেখলে তার বাবার কথা মনে পড়ে। তার সমস্যা ছিল ও তার
কাছে খাওয়ার মতো কিছু ছিল না। ফলে সে মদ পানে চলে যেত। তার বন্ধুরা তাকে
মদের বিনিময়ে কিনতো। তার কাছে কোনো অর্থ ছিল না। পর্যাপ্ত খেতেও পেতেন না।’
সাক্ষাৎকারে রোনালদো তার বান্ধবী জর্জিনা
রদ্রিগেসকে নিয়েও বলেন, ‘সে আমাকে প্রচুর সাহায্য করেছে। অবশ্যই আমি তার
প্রেমে পড়েছি। আমরা একদিন একসাথ (বিয়ে) হবো, নিশ্চিত। এটা আমার মায়ের
স্বপ্ন।’
খবর বিভাগঃ
খেলাধুলা
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়