নুরুল করিম ::
স্থাপত্যের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার ‘আগা খান অ্যাওয়ার্ড ফর আর্টিটেকচার ২০১৯’ পেয়েছে বাংলাদেশের একটি ‘বাঁশের স্কুল’। কেরানীগঞ্জের দক্ষিণ কানারচরে স্কুলটির অবস্থান। এটির নাম আর্কেডিয়া অ্যাডুকেশন প্রজেক্ট হলেও ‘উভচর স্কুল’ নামেই এর অধিক পরিচিতি। আজ ছবি ও কথায় জানবো স্কুলটি প্রসঙ্গে-
বাঁশ, দড়ি আর ড্রামের মতো খুবই সাধারণ
কাঁচামাল দিয়ে নিপুণভাবে গড়া হয়েছে স্কুলটি। দূর থেকে এটিকে দেখলে মনে হবে
সমতল সবুজের মাঠের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকটি বাঁশের ঘর। কিন্তু কাছে গেলে
সেই ভুল ভাঙবে। দেখবেন স্কুলটি ভাসছে, পানিতে কচুরিপানা থাকার কারণে এমনটা
মনে হয়।
আর্কেডিয়া অ্যাডুকেশন প্রজেক্টের প্রশাসন
বিভাগের মো. আব্দুস সালাম জানান, একটি উভচর কাঠামোর স্কুল। এই এলাকা বছরের
কয়েক মাস থাকে পানির নিচে। যখন পানি আসে, তখন স্কুলটি ভেসে থাকে। যখন পানি
চলে যায়, তখন তা মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকে।
উভচর স্কুলের স্থপতি সাইফ উল হক। তিনি
সমাজকর্মী রাজিয়া আলমের স্বপ্ন বুনন করেছেন বাঁশ ও দড়ির মাধ্যমে। আর্কেডিয়া
অ্যাডুকেশন প্রজেক্টের স্কুলটি নির্মাণ করতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪৫ লাখ
টাকা। স্কুলটির এই প্রতিষ্ঠাতা চেয়েছিলেন এলাকার হতদরিদ্র ও যারা শিক্ষার
আলো থেকে বঞ্চিত তাদের পাশে দাঁড়াতে।
রাজিয়া আলম ও সাইফ উল হক, দু’জনে মিলে ঠিক
করেন শুধুই বাঁশ দিয়ে নির্মাণ করবেন এই স্কুল। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে শুরু
হলো কাজ। প্রায় ২০ জন কাঠমিস্ত্রি দু-বছরে স্কুলটির পূর্ণাঙ্গ কাজ শেষ
করেন। কাঠমিস্ত্রি দলের প্রধান ছিলেন প্রাণ বল্লভ।
আগা খান পুরস্কারের জন্য মনোনীত হওয়ার পর
সম্ভবত সবচেয়ে খুশি হয়েছিলেন স্থপতি সাইফ উল হক। কারণ প্রত্যেক স্থপতিরই
স্বপ্ন থাকে এই পুরস্কার জেতার। সাইফ বলেন, এই কাজটি করতে গিয়ে আমার অনেক
স্মৃতি রয়েছে। আমার পছন্দের কাজগুলোর মধ্যে এটিও একটি। এটির জন্য সম্মাননা
পেয়েছি, আমি স্বাভাবিকভাবেই খুবই উচ্ছ্বসিত।
আর্কেডিয়া অ্যাডুকেশন প্রজেক্টটি সম্পর্কে
প্রতিযোগিতার বিচারকরা বলেছেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সময় স্থানীয়
সামগ্রী ব্যবহার করে কীভাবে সাশ্রয়ী ও টেকসই সমাধান সম্ভব, তা বাঁশের তৈরি
স্কুলটি দেখিয়েছে। প্রজেক্টটি স্থপতি, নির্মাতা ও গ্রাহকের দলীয় প্রচেষ্টার
ফল। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে তারা স্কুলটি নির্মাণে উদ্ভাবনী ক্ষমতা
দেখিয়েছেন।
বিশ্বজয়ী এই বাঁশের স্কুলটিতে বর্তমানে ২১
জন ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। এদের প্রত্যেকে দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তাদের
জন্য স্কুলে রয়েছেন দু’জন শিক্ষক। আর তাদের নিয়মিত দেখাশোনা করেন মো.
আব্দুস সালাম। জানা যায়, বছরে ৯ মাস চালু থাকে এই স্কুল। বর্ষাকালে পানি
ওঠার কারণে ৩ মাস স্কুল বন্ধ রাখতে হয়।
সূত্র:
ডেইলি বাংলাদেশ
খবর বিভাগঃ
ফিচার
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়