আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ভয়াবহ বন্যায় ভেসে গেছে চারপাশ। রাজ্যের হুক্কেরির কাছে ইয়থনুর হাট্টি গ্রামের বাসিন্দা প্রতিবন্ধী কাড়াপ্পা জগান্নাভার ও তার স্ত্রী রত্নভা বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়ার উপক্রম। এমন অবস্থায় তারা একটি গাছে নিজেদের দড়ি দিয়ে বেঁধে নিলেন। পুরো ৫০ ঘণ্টা নিজেদের গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধেই প্রাণ বাঁচালেন তারা।
ভারতের দা হিন্দুর এক প্রতিবেদনে জানা গেছে,
ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের হুক্কেরির কাছে ইয়থনুর হাট্টি গ্রামের বাসিন্দা
প্রতিবন্ধী কাড়াপ্পার জন্য এই দুইটি রাত, একটা দিন বাকিদের থেকে অনেকটা
বেশি কঠিন ছিল। তারা তাদের কোমরে একটি দড়ি বেঁধে গাছের অন্য প্রান্তে সেটা
বেঁধে নেন।
কাড়াপ্পা তার লুঙ্গিটি দিয়ে স্ত্রীকে বেঁধে
নেন। যাতে কেউ কাউকে ছেড়ে না যান পানির তোড়ে। ইস্পাত প্লেটের একটি অংশ
বের করে কোনওক্রমে তাদের মাথার উপরে একটি ছাতার মতো ব্যবহার করেছিলেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫০ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার
তাদের কাছে এনডিআরএফের টিম গিয়ে পৌঁছায়। সে সময় তারা নড়াচড়া বা কথা বলার
অবস্থাতে ছিলেন না। টানা ৫০ ঘণ্টা খেতে না পেয়ে এবং ঠাণ্ডায় কার্যত জড়
পদার্থে পরিণত হয়েছিলেন। কিন্তু বাঁচার অসম্ভব আকাঙ্খাই তাদের বাঁচিয়ে
রেখেছিল।
প্রথম যখন তাদের বাড়ির কাছে পানি বাড়তে
থাকে, তখন তারা বাড়ির ছাদে উঠে বাঁচার চেষ্টা করেছিলেন। তারপর যখন আরো
পানি বাড়তে থাকে, নিরুপায় হয়ে গাছে উঠে পড়াটাই তারা শ্রেয় মনে করেন।
বৃহস্পতিবার সকালে কিছু লোকজন ওই দম্পতিকে
নালার পাশে একটি গাছে দেখতে পান। তারাই খবর দেন পুলিশে। পুলিশ দমকল এবং
ইমারজেন্সি সার্ভিসে জানায়। তারপরই তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে
নিয়ে যাওয়া হয়।
ডা. এস ডি কালাসাড় ওই দম্পতির চিকিৎসার
দায়িত্বে আছেন। তিনি জানান, ওই দম্পতি কথা বলার অবস্থাতেই ছিলেন না। শুধু
বলতে পেরেছেন সবই ঈশ্বরের কৃপা।
আপাতত তারা আইসিইউতে রয়েছেন। অনেক ঘণ্টা
খাবার না পেয়ে, খুব ঠাণ্ডায় থেকে হাইপোথার্মিয়া, হাইপোগ্লাইসেমিয়ায় ভুগছেন
তারা। আর এক দুদিন অবজার্ভেশনে রেখে তাদের ছেড়ে দেয়া হবে।
জানা গেছে, কাড়াপ্পা জগান্নাভার ও তার
স্ত্রী রত্নভা একটি ফার্মহাউসের দেখাশোনা করেন। খামারটি বাল্লারি নালার
তীরে। এই নালাটি মার্কোন্ডেয় নদীর মাঝারি আকারের একটি শাখা। এই দম্পতি
খামারেরই একটি পুরনো বাড়িতে থাকেন।
পুলিশ কমিশনার সুমা লাতকর বলেছেন, আমি বলব
এটি তাদের বেঁচে থাকার তাগিদের জোর। মঙ্গলবার কাড়াপ্পা বেশ কিছুটা ভয়
পেয়ে তার খামারের মালিককে ফোন করে সবটাই বলেছিলেন, তার গ্রামের বাড়িতে
ফিরে যেতেও চেয়েছিলেন।
কিন্তু তাকে তার মালিক ভয় না পেয়ে সেখানেই
থাকতে বলেছিলেন, অভয় দিয়েছিলেন পানি নেমে যাবে। কিন্তু বাস্তবটা একেবারে
আলাদা ছিল। তাই বেচারারা বাড়ির ছাদে উঠেও নিস্তার না পেয়ে গাছে চড়তে
বাধ্য হয়েছিলেন।
খবর বিভাগঃ
দেশের বাইরে
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়