ভারত নিয়ন্ত্রীত কাশ্মীরে দেশটির সরকার কর্তৃক আরোপিত বিধিনিষেধের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। এ বিধিনিষেধ আরোপের ফলে সেখানকার মানবাধিকার পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে বৈশ্বিক এই সংস্থাটি।
জাতিসংঘের এক মুখপাত্র কাশ্মীরে টেলিযোগাযোগ বন্ধ, নেতাদের নির্বিচারে
আটক ও সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞায় আপত্তির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপন
করেছেন।
সোমবার ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মাধ্যমে কাশ্মীরের বিশেষ
মর্যাদা বাতিল ও দ্বিখণ্ডিত করার বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু তারও
একদিন আগে রোববার থেকেই ঔই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয় দেশটির
সরকার।
যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় ভারতের অন্যান্য অংশে থাকা কাশ্মীরিরাও
তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। স্থানীয় রাজনৈতিক
নেতারাও বন্দি অবস্থায় আছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
টুইটারে পোস্ট করা ভিডিওতে জাতিসংঘের মুখপাত্র কাশ্মীরের মানবাধিকার
পরিস্থিতি নিয়ে বৈশ্বিক এ সংস্থাটির আগের উদ্বেগও পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, “আগের প্রতিবেদনে কর্তৃপক্ষ কিভাবে ভিন্নমত দমনে যোগাযোগ
ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া, রাজনৈতিকভাবে ভিন্নমত পোষণকারীদের শাস্তি
দিতে নির্বিচারে আটক এবং বিক্ষোভ মোকাবেলায় মাত্রাতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করে
যা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুরুতর জখম ঘটায় তার বিবরণ আছে।”
চলতি সপ্তাহে নতুন যে বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে তা পরিস্থিতিকে ‘নতুন এক মাত্রায়’ নিয়ে গেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
“জাতিসংঘ এখন ওই অঞ্চলে ফের টেলিযোগাযোগে বিধিনিষেধ আরোপের বিষয়টি
পর্যবেক্ষণ করছে, সম্ভবত এবারের বিধিনিষেধ আগে আমরা যা দেখেছি তার চেয়েও
তীব্র,” বলেন তিনি।
এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণকে তাদের অঞ্চলের ভবিষ্যৎ
নিয়ে গণতান্ত্রিক বিতর্কে অংশগ্রহণ থেকে বাইরে রাখবে বলেও মন্তব্য করেছেন
তিনি।
বিবিসি কাশ্মীরের জনগণের সঙ্গে কথা বলেছে, সেখানে বিক্ষোভরত লোকজন ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর দিকে পাথর ছুড়ছে বলে জানিয়েছে তারা।
ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই হিমালয় অঞ্চলে অবস্থিত কাশ্মীরের সমগ্র অংশে
নিজেদের মালিকানা দাবি করে আসছে; দেশ দুটি কাশ্মীরের দুটি অংশ নিয়ন্ত্রণ
করছে।
এর মধ্যে ভারতশাসিত অংশে দীর্ঘদিন ধরেই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তৎপরতা আছে।
তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ওই এলাকায় সংঘাত-সহিংসতায় হাজার হাজার লোক প্রাণও
হারিয়েছে, জানিয়েছে বিবিসি।
ভারতের সংবিধানে কাশ্মীরের জন্য বিশেষ মর্যাদার অংশটুকু অনুচ্ছেদ ৩৭০-এ
বিবৃত ছিল। এ অনুচ্ছেদ জম্মু ও কাশ্মীরকে নিজস্ব সংবিধান, আলাদা পতাকা ও
স্বতন্ত্র আইন বানানোর অধিকার দিয়েছিল। রাজ্যটির কেবল পররাষ্ট্র,
প্রতিরক্ষা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল দিল্লির হাতে।
সাত দশকজুড়ে কাশ্মীরের সঙ্গে ভারত রাষ্ট্রের যে জটিল সম্পর্ক ৩৭০
অনুচ্ছেদই তার মূল ভিত্তি বলে গণ্য করা হয়। পার্লামেন্টে বিরোধীদের তীব্র
প্রতিবাদ সত্বেও সোমবার এ অনুচ্ছেদটি বাতিল করে নরেন্দ্র মোদীর সরকার।
ভারতের এ সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয়
রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার ও নয়া দিল্লির সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।
সূত্র : বিবিসি
খবর বিভাগঃ
দেশের বাইরে
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়