ফিচার ডেস্ক::
গভীর সমুদ্র তাদের আপনজন। ঐতিহ্যগতভাবে ছোট ছোট নৌকায় স্রোতের মাঝে মাছ ধরা এবং বৈঠা হাতেই জীবন কাটে তাদের। আর এসব কারণেই তাদের আরেক নাম ‘সামুদ্রিক যাযাবর’। ভালো নামটা হচ্ছে ‘বাজাউ’। এই উপজাতীর দেখা মিলবে ফিলিপাইন, মালোয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ব্রুনাইয়ের সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে।
তার মানে এই না যে, তারা একদমই ডাঙায় আসে
না! মৃতদেহ দাফন, নৌকা বানানো, সমুদ্র সম্পর্কিত নির্দেশনা নেয়া এবং
প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার জন্য মূলত ডাঙায় আসে তারা। এসেও খুব বেশি সময়
অবস্থান করে না। যতক্ষণ তাদের চাহিদা অনুযায়ী মাছ বিক্রি না হয়, ততক্ষন
পর্যন্তই থাকে!
বাজাউ উপজাতীর সমুদ্রে বসবাস নিয়ে আছে দীর্ঘ
ইতিহাস। প্রায় হাজার বছর আগের কথা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জোহর রাজ্যের
রাজকন্যা দায়াং আয়েশাকে সমুদ্রপথে সুলু রাজ্যে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পান
বাজাউরা। যারা এই এলাকার সমুদ্রকে নিজের হাতের তালুর মতই চেনে।
ব্রুনেইয়ের তৎকালীন সুলতান এর আগে আয়েশাকে
বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জোহরের রাজা তার মেয়ের সঙ্গে ব্রুনাইয়ের
সুলতানকে বিয়ে দিতে রাজি হয়নি। এই অপমান ভুলতে পারেননি ব্রুনাইয়ের তৎকালীন
সুলতান। তাই ওই সুযোগকে কাজে লাগালেন তিনি। আক্রমণ করলেন জোহর রাজ্যের
নৌবহরকে। গভীর সমুদ্রে তুমুল লড়াইয়ের পর ছিনিয়ে নিয়ে গেলেন রাজকন্যাকে।
দেশে ফিরেই রাজকন্যাকে বিয়ে করলেন সুলতান।
আর বিপদে পড়লো বাজাউরা। প্রাণের ভয়ে তারা আর দেশে ফিরতে পারেনি। স্থলের
সঙ্গে তাদের চিরকালের জন্য বিচ্ছেদ হয়ে যায়। সমুদ্রই হয়ে যায় ঘর। ঘুরতে
থাকে বাজাউরা বিভিন্ন উপসাগরে, দেশহীন যাযাবর হয়ে। তাদের আজও পুরো জীবন
কাটে সমুদ্রে। বাজাউরা এখন সমুদ্রের জলে মাছের মতই সাবলীল।
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি, এই উপজাতির অনেক
মানুষ আছে যারা মাটিতে কোনোদিন পা রাখেনি। নৌকাতেই জন্ম, সেখানেই মৃত্যু।
মাটিতে পা রাখবেই বা কী করে। নিজের দেশ নেই, নাম শুনলেই পুলিশ তাড়া করে।
সামুদ্রিক মাছের তেলের মশাল আজও তাদের রাতের অন্ধকার কাটায়। সমুদ্র
তীরবর্তী কয়েকটি গ্রাম মাছের বিনিময়ে তাদের জ্বালানী কাঠ ও জামা-কাপড় দেয়।
ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার গবেষক
মেলিসা ইলার্ডো ও রাসমুস নিয়েলসেন বাজাউদের নিয়ে গবেষণা করেছেন। গবেষকরা
জানিয়েছেন, বাজাউদের জিনে থাকা কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য তাদের প্রাকৃতিক
ডুবুরি করেছে। বাজাউরা যখন শ্বাস চেপে জলে ডুব দেয় তখন তাদের দেহে বিভিন্ন
পরিবর্তন দেখা দেয়। অক্সিজেন বাঁচিয়ে রাখার জন্য হৃদপিন্ড তার কাজ কমিয়ে
দেয়। পালস রেট নেমে দাঁড়ায় প্রতি মিনিটে মাত্র ৩০ বার!
সবসময় আতঙ্কে থাকতে হয় বাজাউদের। কারণ তারা
কোনো দেশেরই নাগরিক নন। সমুদ্রে যাযাবর হয়ে ঘুরে বেড়ান আজীবন। অসুস্থ হলেও
তীর ছোঁয়ার উপায় নেই। তাই জন্মের মত বাজাউদের মৃত্যুও হয় সমুদ্রে। এটাই
নাকি জীবন! কতটা বীভৎস, একবার ভাবুন!
খবর বিভাগঃ
ফিচার
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়