ডেস্ক নিউজ ::
প্রতিদিন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রচুর মানুষ হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। রাজধানী ছাড়িয়ে ডেঙ্গু এখন দেশের বিভিন্ন এলাকাতে ছড়িয়ে পড়ছে।
ডেঙ্গুজ্বর থেকে বাঁচতে বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের সাবেক
চেয়ারম্যান ও ডিন ডা. এবিএম আব্দুল্লাহর কিছু পরামর্শ দিয়েছেন।
এটি মূলত হয় এডিস জাতীয় একটি মশার কামড়ে,
মানে ভাইরাসবাহিত মশা, ওই মশার কামড়ে। আর একটা মশা আছে এডিস এলবোবটিকা,
এডিস এবিবসাই বলে, এটা হলো মেইন (প্রধান)। আর একটা হলো এডিস এলবোবটিকাস। এর
মধ্যে যদি এর ভাইরাসটা থাকে এবং এই মশাটা যদি কাউকে কামড় দেয়, এভাবেই
কিন্তু ডেঙ্গুটা ছড়ায়।
ডেঙ্গু ভাইরাস কিন্তু চার রকমের থাকে। আমরা
মেডিকেল টার্মে বলি ডেন-১, ডেন-২,ডেন-৩, ডেন-৪। চারটি ফাইরাস। এটা কিন্তু
গুরুত্বপূর্ণ বেশি। গুরুত্বপূর্ণ দুই কারণে, একটা হলো যে , এডিস যে মশা এটা
কামড়ের দ্বারাই হয়। এটা বলার উদ্দেশ্য হলো, কোনো ভাইরাস যদি কামড় দেয় তার
বডিতে (শরীরে) কিন্তু এ্যান্টিবডি তৈরি হয়।
অনেকে প্রশ্ন করেন, ডেঙ্গু একবার হলে কি
আবারো হয়? ডেঙ্গু কিন্তু চার বার হতে পারে। চারটা আলাদা ভাইরাস সেজন্য
একবার কারো যদি হলো ডেন- ১ দিয়ে হলো, অন্য ভাইরাস কিন্তু থাকে ওর বিপরীতে
যে এ্যন্টিবডি তৈরি হয়, সেটা কিন্তু অন্য ভাইরাস থেকে এসে নিরাপত্তা
(প্রোটেকশন) দেয় না। আর একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কেউ যদি প্রথমে একটা
ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয় ডেঙ্গুতে। এরপর দ্বিতীয় বার, তৃতীয় বার,
চতুর্থবার হয় সেটা কিন্তু বিপদজনক হতে পারে, অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যুও হতে
পারে।
লক্ষণ:
যেকোনো ভাইরাস জ্বরে শরীরের খুব অতিরিক্ত
তাপমাত্র হয়। এই রোগের বেলায় ১০৩-৪-৫ হতে পারে। ৪/৫ দিন জ্বর থাকে, জ্বরের
সাথে প্রচণ্ড মাথা ব্যাথা, শরীর ব্যাথা, কোমরে ব্যাথা, পিঠে ব্যাথা, হাড়ে
ব্যাথা তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। এগুলো দিয়ে ডেঙ্গু খুব সহজেই বোঝা যায়।’
৪/৫ দিন পর চলে যাওয়ার পর লাল লাল ফুসকুঁড়ি
(ঘামাচির মত) ওঠে। এসময় রক্তের প্লেটিলেট কমে যায়।রোগীর রক্তক্ষরণের ঝুঁকি
থাকে। নাকে রক্ত, মুখে রক্ত, বমির সাথে রক্ত, পায়খানার সঙ্গে রক্ত। আবার
অনেকর ব্রাশ করলে দাঁতের গোড়া দিয়ে রক্ত পড়ে।
মেয়েদের ক্ষেত্রে সমস্যাটা বেশি হয়। দেখা
যায়, ঋতুস্রাব শুরু হয়েছে, রক্তপাত আর থামছে না। আগে দু-একদিনে ভালো হতো,
এখন ভালো হচ্ছে না। অথবা সম্প্রতি ঋতুস্রাব শেষ হয়ে গেলো অসময়ে আবার শুরু
হয়ে গেলো। এটাও ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ।
যদি রক্তক্ষরণ বেশি হয়ে যায়। এর ফলে রক্তচাপ
কমে যায়, প্রস্রাব কমে যায়। তখন একটা জটিল রোগ হতে পারে যাকে বলে ডেঙ্গু
শকসিন্ড্রম। এতে রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়, সিরিয়াস হয়ে মারাও যেতে পারে।’
সতর্কতা:
অনেক সময় ডাক্তার বা রোগীর ভুল হতে পারে।
৪/৫ দিন পর জ্বর চলে গেলে রোগী মনে করতে পারে, আমি তো ভালোই হয়ে গেলাম।
সুতরাং ডাক্তারের কাছে যাওয়ার দরকার কী। অথবা ডাক্তার মনে করতে পারে, ৪/৫
দিনের ভাইরাস জ্বর কী আর হবে? ভালো হয়ে যাবে। এইটা কিন্তু অনেক বড় ভয়ানক
ভুল।
৪/৫ দিনের জ্বর কমে গেলে রক্তের প্লেটিলেট
কমে রোগির রক্তক্ষরণের ঝুঁকি থাকে; ডেঙ্গুর শকসিন্ড্রম যাকে বলে, এটা হতে
পারে। সেজন্য আমরা বলি ৫/৭ দিন বা জ্বরের ৪/৫ দিন পরে এই টার্মকে বলা হয়
জটিল সময় (ক্রিটিক্যাল পিরিয়ড)। এটাকে কোনো সময় অবহেলা করা যাবে না। এই সময়
যত অঘটন ঘটে। রোগী যদি সঠিকভাবে চিকিৎসা না নেয় তাহলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে
পারে।
দু-একদিনের জ্বরে রক্ত পরীক্ষা করে কোনো লাভ
নাই। রক্ত পরীক্ষা করা উচিত ৪/৫ দিন পরে। কারণ জ্বরের দু‘একদিন পর
সিবিসি‘তে রক্ত পরীক্ষা করেই ফেলেন তাহলে রির্পোট নরমাল থাকবে। ডেঙ্গু ধরা
পড়বে না। এ বিষয়ে ডাক্তার ও রোগীকে সাবধান থাকতে হবে।
এ্যান্টিবায়োটিক খাবো কি না?
ডেঙ্গু হলে এ্যান্ডিবায়োটিক দেয়া যাবে না এ
ধারণা ভুল। রোগীর যদি অন্য কোনো সমস্যা থাকে। সেটার জন্য যদি লাগে, ডাক্তার
এ্যান্টিবায়োটিক দিতে পারে। এতে ডেঙ্গুর কোনো ক্ষতি হবে না।
চিকিৎসা:
ডেঙ্গুর কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই।
আক্রান্ত হলে বিশ্রামে থাকবে, জ্বরের জন্য প্যারাসিট্যামল খাবে, ভেজা কাপড়
দিয়ে শরীর মুছতে পারে। প্রচুর পানি খাবেন- শরবত, গ্লুকোজ, ডাবের পানি খাওয়া
যাবে।
অনেকের ভুল ধারণা থাকে ডেঙ্গু হলেই রক্ত
দিতে হয়। যদি খুব বেশি রক্তক্ষরণ হয় সেক্ষেত্রে রক্ত দিতে হবে, অন্যথায় নয়।
আবার প্লাটিলেট কমে গেলও তা দেয়ার দরকার নাই। কারণ ৫/৬ দিন পর আবারো
প্লাটিলেট বেড়ে যাবে। হ্যাঁ, যদি বেশি কমে যায় ডাক্তার যদি মনে করে তাহলে
দিতে পারে।
খবর বিভাগঃ
স্বাস্থ্য
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়