অফিসের ডেস্কে একটানা অনেকক্ষণ বসে
কাজ করাটা কখনোই সুখকর হয় না। কেননা কম্পিউটারের পর্দায় টানা চোখ রাখলে
তার প্রভাব পড়ে শরীরেও। প্রাথমিকভাবে সমস্যাটা বোঝা না গেলেও এটি সাধারণত
টের পাওয়া যায় পরে। যন্ত্রণা বাড়তে থাকে ঘাড়, কাঁধ ও কোমর জুড়ে।
কিন্তু সামান্য চেষ্টা করলেই এই যন্ত্রণা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
এর জন্য দরকার কাজের ফাঁকে কয়েক মিনিট
বিরতি।আর সেই সময়টায় চেয়ারে বসেই খুব সহজে করে ফেলা যায় কয়েকটি ব্যায়াম।
ব্যায়ামগুলো সাধারণ মনে হলেও, শরীরের জন্য তা খুবই উপকারী।
এবার চলুন জেনে নিই কাজের ফাঁকে সুস্থ থাকার সেই কৌশলগুলো-
ঘাড়ের স্ট্রেচ: চেয়ারে
বসেই ঘাড় ডান দিকে কাত করুন। তার পরে ডান হাত দিয়ে মাথাটা আলতো করে ডান
দিকে চাপ দিতে হবে বা টানতে হবে। এই একই পদ্ধতিতে দুদিকেই তিন বার করে
স্ট্রেচ করতে হবে। এতে ঘাড়ের কাছের পেশি দীর্ঘায়িত হয় এবং আরাম পাওয়া
যায়।
চিন টাক: থুতনিতে চাপ দিয়ে
ঘাড় আস্তে আস্তে পেছন দিকে হেলাতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি ব্যায়ামটার
জন্য দেয়ালের সাহায্য পাওয়া যায়। ধরা যাক, দেয়ালে হেলান দিয়ে চেয়ারের ওপরে
বসলেন। এ বার থুতনিতে চাপ দিয়ে মাথা ধীরে ধীরে দেওয়ালে ঠেকানোর চেষ্টা
করতে হবে। তবে হাত দিয়ে থুতনিতে চাপ দিলে চলবে না। ব্যায়ামটি করতে হবে
তিন বার।
কাঁধ: ঘাড়ের
যন্ত্রণা ছড়ায় কাঁধেও। শুধু একটানা বসে কাজই নয়, রোজ ভারী ব্যাগ নেওয়াতেও
ঘাড়ে ব্যথা হয়।আবার ভুল ভঙ্গিমায় বসে ঝুঁকে কাজ করার জন্যও কাঁধের পেশিতে
সমস্যা হয়।কনকনে ব্যথা হয়।অনেকের ক্ষেত্রে কাঁধের মুভমেন্ট রেঞ্জ অর্থাৎ
হাত যতটা পর্যন্ত ঘুরতে পারে,সেই পরিসর কমে যায়।একে বলে ফ্রোজেন শোল্ডার।
তাই ভালো থাকার জন্য রোটেটর পেশির স্ট্রেচ ও এক্সটার্নাল রোটেশন করতে হবে।
রোটেটর স্ট্রেচ: ডান হাত
বুকের কাছে আড়াআড়ি নিয়ে আসতে হবে। এর পরে বাঁ হাত দিয়ে ডান হাতের কনুইয়ে
চাপ দিতে হবে। এর ফলে কাঁধের পেছনের দিকের পেশিতে চাপ পড়ে। ১০ সেকেন্ড
করে দুহাতে তিন বার করে এই স্ট্রেচ করতে হবে।
এক্সটার্নাল রোটেশন: এটি
আসলে রোটেটর পেশির জোর বাড়ানোর ব্যায়াম। এর জন্য হাতে পানিভর্তি এক
লিটারের বোতল নিন। ডান হাতে পানির বোতল ধরে হাতটাকে আর্মপিটের কাছে চেপে
রাখতে হবে। এ বার কনুইটা সরিয়ে হাতটাকে বাইরের দিকে ঘোরাতে হবে। ১০
সেকেন্ড করে দুহাতে তিন বার করে করতে হবে এই ব্যায়াম।
কোমর: ডেস্কে বসে কাজের
সময়ে পিঠ টানটান করে রেখে কাজ করার সতর্কবাণী আমরা প্রায়ই ভুলে যাই।
কিন্তু এটি বিপদ ডেকে আনতে পারে। হিপে থাকে গ্লুটিয়াস ও হ্যামস্ট্রিং
পেশি। স্ট্রেচিং করলে সেই পেশিতে ব্যথায় আরাম পাওয়া যাবে।
ফিগার ফোর স্ট্রেচ: চেয়ারে
বসে এক পা আর একটি পায়ের ওপরে তুলে দিলে ইংরেজি 4-এর মতো দেখতে হয়। সেই
অবস্থায় বসে শরীরটাকে সামনের দিকে ঝোঁকাতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে, মেরুদণ্ড
যেন টানটান থাকে। এতে হিপের অংশে টান পড়বে। হিপের পেশি স্ট্রেচও হবে।
দুই পায়ে ১০ সেকেন্ড করে তিন বার করে করতে হবে।
হ্যামস্ট্রিং স্ট্রেচ: চেয়ারে
বসে একটি হাঁটু ভাঁজ রাখতে হবে। আর একটি পা সামনের দিকে সোজা করে ছড়াতে
হবে অর্থাৎ বাঁ হাঁটু ভাঁজ থাকলে ডান পা ছড়াতে হবে। এতে হিপের
হ্যামস্ট্রিং পেশিতে টান পড়বে। দুপায়ে তিন বার করতে হবে এই ব্যায়াম। এর
ফলে কোমরে আরাম পাবেন। এর সঙ্গে জোর বাড়ানোর ব্যায়াম করতে পারেন।সেটা
চেয়ারে বসে করা সম্ভব নয়।
হাঁটু: হাঁটুর ব্যায়ামের জন্য কোমরের স্ট্রেচিং দুটি অবশ্যই করতে হবে। তার পাশাপাশি করতে হবে সিটেড লেগ এক্সটেনশন।
সিটেড লেগ এক্সটেনশন: চেয়ারে
বসে একটা পা মেঝের ওপরে রাখতে হবে। আর একটি পা টানটান করে সামনের দিকে
ছড়াতে হবে। মেরুদণ্ড থাকবে সোজা। এ ভাবে ১০ অবধি গুণে পা পরিবর্তন করতে
হবে। দুই পায়েই এই ব্যায়াম মোট ১০-১২ বার করতে পারেন। এতে থাইয়ের পেশির
জোর বাড়ে।
রোজ অল্প সময় ধরে এই সমস্ত ব্যায়ামের নিয়মিত
অভ্যাস শুধু ব্যথা কমায় না, শরীরও ভালো রাখে।টিভি দেখার ফাঁকে হোক বা
অফিসের বিরতিতে, সুস্থতাই তাই চেয়ারে বসেই হোক শারীরচর্চা।
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়