কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক:
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নিয়েছেন ঠাকুরগাঁও-৩ (রানীশংকৈল)
আসনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচিত জাহিদুর রহমান। দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের দায়ে
তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হবে বলে দলীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার ( ২৫ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় সংসদ ভবনে স্পিকার ড.শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে শপথ নেন তিনি।
জানা যায়, জাহিদুর রহমানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানতে দলের মহাসচিব মির্জা
ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে কথা
বলবেন। তারেক রহমান যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটিই চূড়ান্ত। তবে জাহিদুর
রহমানের শপথের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের কেউ-ই কোনো
মন্তব্য করতে রাজি হননি। তারা জানিয়েছেন আজ বিকালে এ বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত
আসতে পারে।
বিএনপি নেতাদের সাম্প্রতিক বক্তব্যে এটি
স্পষ্ট যে, একাদশ সংসদে বিএনপির নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শপথ না নেয়ার
সিদ্ধান্ত দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আসা। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক
রহমানের সঙ্গে কথা বলে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী
কমিটি একাধিক বৈঠকে সর্বোতভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওইসব বৈঠকে যারা এই
সিদ্ধান্ত না মেনে শপথ নেবে তাদের বহিষ্কারের বিষয়েও নেতারা একমত পোষণ
করেন।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আজ বিকালে সংবাদ
সম্মেলন করে জাহিদুর রহমানের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমে জানানো হতে
পারে। কিংবা সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হতে পারে।
এ বিষয়ে বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের
সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, জাহিদুর রহমান শপথের বিষয়ে দল কিছু জানে না।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা
করছেন।কিন্তু তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। আজ শপথ নেয়ার আগে ও
পরে কয়েক দফা জাহিদুর রহমানের মুঠোফোনে কল করা হয়। কিন্তু ফোনটি বন্ধ পাওয়া
গেছে।
জাহিদুর রহমানের শপথ নেয়ার পর ঢাকার
এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, যারা
শপথ নিচ্ছেন তারা বেঈমান।জনগণ তাদের ক্ষমা করবে না।গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এর
আগেও বিএনপির নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সতর্ক করে বলেছিলেন, শপথ নেয়া তো
দূরের কথা সংসদের আশপাশেও যাওয়া যাবে না।
সম্প্রতি বিএনপির নির্বাচিতরা দলের
মহাসচিবের সঙ্গে দেখা করে শপথ নেয়ার বিষয়ে আগ্রহের কথা জানালেও তিনি দলীয়
সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন। পাশাপাশি দলীয় সিদ্ধান্ত না মানলে শাস্তি কি
হতে পারে সেদিকেও ইঙ্গিত করেন।
বিএনপির অপর স্থায়ী কমিটির সদস্য
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ গত শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে
বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলেই আমরা সংসদে না
যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাই এ বিষয়ে আর কোনো কথা নয়। এমনকি খালেদা জিয়ার
প্যারোলের বিনিময়েও বিএনপি শপথ নেবে না।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও দলের নির্বাচিতদের শপথ না নেয়ার বিষয়ে দলের সুদৃঢ় অবস্থানের কথা বারবার ব্যক্ত করেন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে নির্বাচিত
সুলতান মনসুর ও মোকাব্বির খানের শপথের পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন
মির্জা ফখরুল। সুলতান মনসুরকে জাতীয় বেঈমান আখ্যা দেন।মোকাব্বির খানকে
সিলেটে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে স্থানীয় বিএনপি।
এতদস্বত্ত্বেও জাহিদুর রহমান আজ শপথ নিয়েছেন।তাকে বহিষ্কারাদেশ অনিবার্য মনে করছেন বিএনপি নেতারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক
কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, দল থেকে বারবার সতর্ক করার পরও জাহিদুর শপথ নিয়েছেন।
তাই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে বিএনপির রাজনীতি বলতে কিছুই থাকবে না।
এমনকি জাহিদের পথ অনুসরণ করে অন্যরাও শপথ নিতে পারেন।
রংপুর বিভাগের মধ্যে জাহিদুর রহমানই একমাত্র
বিএনপির প্রার্থী, যিনি জয়ী হতে পেরেছেন।বিএনপি নেতা হিসেবে জাহিদই প্রথম
একাদশ সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন।
এর আগে বিএনপির এক নীতিনির্ধারক বলেন, দলীয়
সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে দু’জন এমপি শপথ নিতে পারেন আমাদের কাছে এমন তথ্য
রয়েছে। এদের মধ্যে একজন এবারই প্রথম নির্বাচিত হয়েছেন। আরেকজন সাবেক
প্রতিমন্ত্রী। আমরা তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথাও বলেছি। আশা করছি দলের
সিদ্ধান্তের বাইরে তারা যাবেন না।
এর আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে ধানের
শীষ প্রতীকে নির্বাচিত সুলতান মোহাম্মদ মনসুর একাদশ সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ
নিয়েছেন।তাকে অনুস্মরণ করে শপথ নেন সিলেট-২ আসন থেকে নির্বাচিত গণফোরাম
নেতা মোকাব্বির খান।
প্রসঙ্গত, ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ
নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৮ জনপ্রতিনিধি জয়ী হয়। ভোট ডাকাতির অভিযোগ
তুলে ঐক্যফ্রন্ট এই নির্বাচনে ফল বর্জন করে। সেই সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের কোনো
প্রতিনিধি সংসদে শপথ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
খবর বিভাগঃ
রাজনীতি
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়