কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক:
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের
আবাসিক হলের রুমে সন্তান প্রসব করা সেই বয়ফ্রেন্ডের খোঁজ পাওয়া গেছে। তার
নাম রনি মোল্লা। তিনিও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সন্তান জন্মের
ঘটনার পর থেকে মোবাইল বন্ধ করে রেখেছেন রনি মোল্লা। ক্যাম্পাসে আসেননি
তিনি। এরই মধ্যে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের
কথা জানিয়ে সন্তানের পিতৃত্বের দাবি করেছেন রনি মোল্লা।
ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে তিনি জানিয়েছেন,
‘আমার সঙ্গে ওই ছাত্রীর প্রেমের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ওই সন্তানের বাবা আমি।
বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ঘটেছে। এ নিয়ে কেউ বাজে মন্তব্য করবেন না।’
এদিকে প্রসবের পরই নবজাতকটিকে ট্রাঙ্কের মধ্যে তালাবদ্ধ করে রাখায় শিশুটি মারা গেছে। ওই ছাত্রীও গুরুতর অসুস্থ বলে জানা গেছে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা
বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে শনিবার দুপুরে কন্যা সন্তানটি জন্মগ্রহণ করে।
প্রসবের পর সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানকে বাক্সে তালাবন্দি করে হাসপাতালে যান তার
মা। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ অযত্নে অবহেলায় ছিল নবজাতকটি। পরে নবজাতকের কান্নার
শব্দ শুনে বাক্স থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয় বাচ্চাটিকে।
বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা হলের আবাসিক
ছাত্রী ও প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ওই হলের ৪২৬নং কক্ষে সন্তানটি প্রসব
করেন এক ছাত্রী। তিনি ওই রুমেরই আবাসিক ছাত্রী। পরে বাচ্চাকে ট্রাঙ্কে তালা
দিয়ে হল প্রশাসনকে প্রসব বেদনার কথা জানিয়ে মেডিকেলে যান তিনি। পরে
বাচ্চার কান্নার আওয়াজ পেয়ে ওই রুমের একটি ট্রাঙ্কের তালা ভেঙে নবজাতককে
উদ্ধার করে মেডিকেলে নেয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী প্রক্টর
জানান, রাত ৯টা ৪০ মিনিটে নবজাতকটি মারা গেছে। আর মায়ের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
তবে মেয়েটি বিবাহিত কিনা এ বিষয়ে সহকারী প্রক্টর নিশ্চিত করতে পারেননি।
তবে অন্তঃসত্ত্বার বিষয়টি ওই ছাত্রী গোপন রেখেছিলেন বলে হলের বান্ধবীদের সূত্রে জানা গেছে।
হল সূত্রে জানা যায়, দুপুর আড়াইটার দিকে ওই
ছাত্রী নবজাতক প্রসব করে কাউকে না জানিয়ে ট্রাঙ্কে লুকিয়ে রাখে। তার রুমমেট
রুমে এলে তাকে শুধু প্রসব বেদনার কথা জানায়। শিক্ষার্থীরা বিষয়টি হল
প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে জানায়। চিকিৎসা কেন্দ্রের
নার্স এসে তাকে হাসপাতলে নেয়ার পরামর্শ দিলে সাভারের একটি বেসরকারি
হাসপাতালে নেয়া হয় তাকে।
পরে ওই কক্ষ থেকে নবজাতকের কান্নার আওয়াজ
শুনতে পান শিক্ষার্থীরা। পরে ট্রাঙ্কের তালা ভেঙে নবজাতককে উদ্ধার করে হল
প্রশাসন। এ সময় বাচ্চার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় এবং শরীর নীল বর্ণ ধারণ
করে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে বাচ্চাকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে
ওই হাসপাতালে (মায়ের কাছে) নেয়া হয়।
এ বিষয়ে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা হলের
প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মুজিবর রহমান বলেন, ঘটনা শুনে সঙ্গে সঙ্গে হলে যাই।
ছাত্রীরা যখন বলছিল ঘর থেকে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে, তখন ৪২৬নং
রুমে গিয়ে ট্রাঙ্কের তালা ভেঙে বাচ্চাকে উদ্ধার করে মেডিকেলে নিয়ে যাই।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রের
দায়িত্বরত চিকিৎসক আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ (সন্ধ্যায়) জানান, বাচ্চাটিকে
যখন মেডিকেলে নিয়ে আসা হয় তখন তার শরীর সম্পূর্ণ নীল রং ধারণ করেছিল। পরে
তাকে অক্সিজেন দিয়ে স্বাভাবিক করে মায়ের কাছে পাঠানো হয়।
তাদের সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগে রনি মোল্লা পড়াশোনা করেছেন
পাবনার শহীদ সরকারি বুলবুল কলেজে। একই কলেজে পড়াশোনা করেছেন গোপনে সন্তান
জন্ম দেয়া সেই ছাত্রীও। তাদের দুজনের বাড়ি পাবনায়। একই জেলায় বাড়ি হওয়ার
সুবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দুজনই হলে থাকার সুযোগে
ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয় তাদের মধ্যে।
ওই ছাত্রীর সঙ্গে দীর্ঘদিনের প্রেমের
সম্পর্ক রয়েছে রনি মোল্লার। একপর্যায়ে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তারা।
এরই মধ্যে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন ছাত্রী। এরপরও বিষয়টি গোপন রাখার
সিদ্ধান্ত হয়। তবে এ নিয়ে ছাত্রীর সঙ্গে রনির একাধিকবার বাগবিতণ্ডা হয়।
বিষয়টি নিয়ে তাদের সম্পর্কের অবনতিও হয়েছে।
হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মুজিবর রহমান বলেন,
তথ্য গোপন করে মেয়েটি অপরাধ করেছে। এতে অনেক বড় দুর্ঘটনাও ঘটতে পারত। এই
ঘটনায় তদন্তের জন্য হলের সহকারী আবাসিক শিক্ষক লাবিবা খাতুন তানিয়াকে
প্রধান করে চার সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে
তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে এলে যথাযথ
ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খবর বিভাগঃ
অপরাধ বার্তা
সারাদেশ
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়