Sunday, March 10

রাত পোহালেই ডাকসুর ভোট

কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক:

রাত পোহালেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচনে ভোট। এখন কেবল এক রাতের অপেক্ষা। সোমবার সকাল ৮ টা থেকে শুরু হবে ভোট গ্রহণ। চলবে দুপুর ২টা পর্যন্ত। নিজেদের পছন্দের ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন করতে ভোটের লাইনে দাঁড়াবে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। 

এরই মধ্যে শনিবার রাত ১২ টা থেকে শেষ হয়েছে ডাকসুর প্রচারণা। আগামীকাল এরই মধ্যে ভোটের সব ধরণের প্রস্তুতিও সম্পন্ন করা হয়েছে। ১৮ টি আবাসিক হলের বিপরীতে মোট বুথের সংখ্যা ৫০৮ টি। সবচেয়ে বেশি বুথ রয়েছে রোকেয়া হলে।

এবারের নির্বাচনের মাধ্যমে শেষ হতে যাচ্ছে ডাকসুর আটাশ বছরের দীর্ঘ অচলাবস্থা। তাই নির্বাচনকে ঘিরে শতাব্দী প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়ের উঠোন এখন উৎসবের আমেজ।
প্রচারণার সময় শেষ হলেও এখনো অনেক প্রার্থী সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিজেদের হয়ে কথা বলছেন। টিএসসি কিংবা মধুর ক্যান্টিনে ভিড় করা ছাত্ররাও জানাচ্ছেন নির্বাচনে হার-জিতের সম্ভাবনা। বসে নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনী কর্মকর্তারাও। সকাল থেকেই চিফ রিটার্নিং অফিসারের কক্ষে পরিচয়পত্র গ্রহণের জন্য ভিড় করেছিলেন প্রার্থী ও সাংবাদিকরা। এর ফাঁকেই নির্বাচনের অন্যান্য কাজও এগিয়ে নিতে হয়েছে তাদের। বিকেলে সিনেটের তৃতীয় তলার কক্ষ থেকেই হলগুলোতে পাঠানো হয়েছে ব্যালট বাক্স।
প্রতিটি হল ভিত্তিক হিসেবে, স্যার এ এফ রহমান হলে ১৬ টি; বাংলাদেশ- কুয়েত মৈত্রী হলে ১৯টি; মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল, শহীদুল্লাহ হল, কবি জসীম উদ্দীন হল, অমর একুশে হলে ২০ টি করে; শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে ২২ টি; জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ২৪টি, জগন্নাথ হলে ২৫টি; হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলে ৩০টি;  মাস্টারদা সূর্যসেন হলে ৩২টি; সলিমুল্লাহ মুসলিম হল, ফজলুল হক মুসলিম হল, শামসুন্নাহার হলে ৩৫ টি করে; বিজয় একাত্তর হলে ৪০ টি ও রোকেয়া হলে ৫০ টি।তবে পি জে হার্টস আন্তর্জাতিক হলে কোন বুথ বসানো হয়নি।
ডাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪২ হাজার ৯২৩ জন। কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলে মোট প্রার্থী ৭৩৮ জন। কেন্দ্রে ২৫ পদ ও হল সংসদে ১৩ পদসহ মোট ৩৮ টি পদে ভোট দিতে পারবে প্রত্যক ভোটার। সে হিসেবে ৩৮ টা ভোট দিতে একজন ভোটার ৪ মিনিট সময় পাবেন।
এবারের ১০টি ছাত্র সংগঠন প্যানেল দিয়েছেন। তবে সব হলে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল আছে কেবল ছাত্রলীগের। এবার ডাকসুতে মোট ভোটার ৪৩ হাজার ২৫৫ জন। যার ৩৬ শতাংশ নারী। আর হল সংসদ মিলিয়ে, মোট প্রার্থী ৭৩৮ জন। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে ২৫টি পদে লড়ছেন ২২৯ জন। বাকিরা ১৮টি হলের ১৩টি করে পদের জন্য লড়ছেন। সবমিলিয়ে নারী প্রার্থী আছেন ১৫ শতাংশের মতো।
মধ্যরাতের মধ্যেই বুথগুলোতে ব্যালট বক্স বসানো হবে। তবে নির্বাচনে ব্যবহৃত ব্যালট বাক্সগুলো নিয়ে এরইমধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অস্বচ্ছ ব্যালট বাক্স নিয়ে আপত্তি তুলেছে বেশ কয়েকজন প্রার্থী। রোববার দুপুরে ভাইস চ্যান্সেলের অফিসের সামনে বিক্ষোভ শেষে উপাচার্য আখতারুজ্জামান বরাবর স্বারকলিপিও দিয়েছে এ আর এম আসিফুর রহমান, অরনী সেমন্তি খান, লিটন নন্দী, উম্মে হাবিবা বেনজিরসহ অনেক প্রার্থী। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ভোটগ্রহণের সময় চার ঘণ্টা বাড়ানো ও স্বচ্ছ ভোটবাক্সের ব্যবস্থা করা, ভোটের দিন সকালে ব্যালট পেপার ও বাক্স ভোটকেন্দ্রে প্রেরণসহ মোট সাতটি দাবি জানায় প্রার্থীরা।
এ ব্যাপারে ডাকসু নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা ড. এস এম মাহফুজুর রহমান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচনে স্টিলের বাক্সই ব্যবহৃত হয়। এটা নতুন কিছু নয়। আগেও এমনটা হয়েছে। ঢাবি শিক্ষক সমিতি নির্বাচন ও রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট নির্বাচনে বাক্সগুলো ব্যবহার করা হয়েছে। কখনো কোনো আপত্তি উঠেনি।
এদিকে ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কী না- এ বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কয়েকজন প্রার্থী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ভিপি পদপ্রার্থী বলেন, আমরা আশঙ্কা করছি ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মতোই হবে ডাকসু নির্বাচন। এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ করছে। তারা একটি নির্দিষ্ট ছাত্র সংগঠনকে জেতানোর চেষ্টা করছে। তবে আমি বিশ্বাস করি শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে ওই চক্রান্ত প্রতিহত করবে।
জিএস পদপ্রার্থী এ আর এম আসিফুর রহমান বলেন, আমাদের একটাই চাওয়া যেন ভোটগ্রহণ ও গণনা প্রক্রিয়াটি যেন সুষ্ঠ হয়। আমরা চাই নির্বাচনে প্রত্যেক শিক্ষার্থী যেন নিজের ভোট দিতে পারেন। এ জন্য ভোটগ্রহণের সময় বাড়িয়ে দেয়ার দাবিও জানান তারা।
তবে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন উপস্থাপনের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাকে নিরাপত্তার চাদরে ঘিরে ফেলেছে প্রশাসন। রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কাজে জড়িতরা ছাড়া বহিরাগত কোনো ব্যক্তি কিংবা যানবাহন বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে না। শিক্ষার্থীদেরকেও পরিচয়পত্র প্রদর্শনকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে হবে।  
এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহবাগ, নীলক্ষেত, পলাশী, জগন্নাথ হল ক্রসিং, রুমনা ভবন ক্রসিং, দোয়েল চত্বর ও শহীদুল্লাহ হল ক্রসিংয়ে পুলিশ চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।  এসব স্পটে নিরাপত্তার দায়িত্বে র‌্যাব ও পুলিশ একযোগে কাজ করবে। এছাড়াও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপ, বিএনসিসি ও রেঞ্জার।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনে সম্পন্ন করতে আড়াই হাজার পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলেই পুলিশ আইন প্রয়োগ করবে। এ জন্য সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। নিরাপত্তা চৌকি সবানোর পাশাপাশি ১৮টি হলে ১১৩টি নজরদারি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) প্রথম নির্বাচন হয় ১৯৭২ সালের ২০ মে। এক বছরের মাথায় ১৯৭৩ সালে আগের ডাকসু নির্বাচনে বিজয়ী ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে জোট বাঁধে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ওই দুই ছাত্রসংগঠনের যৌথ প্যানেলের নাম দেয়া হয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। সংগ্রাম পরিষদের প্রতিদ্বন্দ্বী আ স ম আবদুর রব সমর্থিত জাসদ ছাত্রলীগের অবস্থানও ছিল বেশ শক্ত। ৩ সেপ্টেম্বর দিনভর নির্বিঘ্নে ভোট গ্রহণ হয়। সন্ধ্যায় ভোট গণনা শুরু হলে পাল্টে যায় দৃশ্যপট। পরদিন ৪ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচনে গোলাগুলি, হলগুলোতে ছিনতাই করা হয় ব্যালট বাক্স। এ ঘটনায় পরস্পরকে দোষারোপ করে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও রব পন্থী জাসদ ছাত্রলীগ। স্থগিত হয় ভোট গণনা। বন্ধ ঘোষণা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়। 
১৯৭২ ও ১৯৭৩ সালের পর আরো পাঁচবার ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। টানা ২৮ বছর পর কাল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে অষ্টম ডাকসু নির্বাচন। জিয়াউর রহমানের আমলে ১৯৭৯, ১৯৮০ ও ১৯৮২ সালে তিনটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া এরশাদের আমলে ১৯৮৯ ও ১৯৯০ সালে দুটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
সূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়