Tuesday, March 12

মায়ের দোয়া নিয়ে যুদ্ধে যাই

কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক:
ডা. শেখ মজিবর রহমান একজন মুক্তিযোদ্ধা। জন্মগ্রহণ করেন ১৯৫২ সালের ২৩ আগস্ট নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার সোনাপাতিল গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল দিনগুলোতে পাকহানাদার বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করেছেন সম্মুখ যুদ্ধে। স্বাধীনতার স্বপ্নে বিভোর তরুণ শেখ মজিবর রহমান তখন রাজশাহী কারিগরি কলেজের ছাত্র। দেশমাতৃকার টানেই মায়ের দোয়া নিয়েই ঘর ছেড়ে ছিলেন শেখ মুজিবর রহমান। 
নাটোর শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে নলডাঙ্গা উপজেলার বারনই নদীর তীরে মাটির ঘরে বসে বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মজিবর রহমান জানাচ্ছিলেন ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সেই রণাঙ্গনের দিনগুলির কথা।
ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকায় ৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থান সহ বেশ কয়েকটি গণ আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করে তিনি জেনেছিলেন সংগ্রাম, প্রতিবাদ আর যুদ্ধ কি, কেনই বা তা প্রয়োজন। তাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ৭ই মার্চের ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। 
৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর তিনি ছিলেন একটি আহবানের অপেক্ষায়। সে সোনালী দিনটি ছিল ১৭ মার্চ। তৎকালীন পাকিস্তানের এমএলএ রাজশাহীর কামরুজ্জামানের আহবানে রাজশাহী শাল বাগানের ওসি জাফর উল্লাহর কাছে ওই দিন মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নেন। 
মুক্তিযোদ্ধা শেখ মুজিবুর রহমান জানান, ২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনে পাকসেনারা আক্রমণ করলে আমরা রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট দখল নিয়ে অবাঙালি সেনা সদস্যদের নিরস্ত্র করি। এপ্রিলের ২৩ তারিখ পর্যন্ত রাজশাহী এলাকা হানাদারমুক্ত ছিল। কিন্ত পরে ঢাকা থেকে পাক সেনারা রাজশাহী দখল করে নেয়। আমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ি এবং শরণার্থী দলের সঙ্গে ভারতে চলে যাই। সেখানে নাটোরের শংকর গোবিন্দ চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। তিনি কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিংয়ে নিয়ে যান। এরপর প্রতিরামপুর শরণার্থী শিবিরে গিয়ে নওগাঁর আব্দুল জলিলের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। তার হাত ধরেই দেশে ফিরে আসি এবং ৬ নম্বর সেক্টর কমান্ডার আবুল বাশারের নেতৃত্বে কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, জয়পুরহাট ও বগুড়ায় যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। 
এরপর ৭ নম্বর সেক্টর কমান্ডার নুরুজ্জামানের নেতৃত্বে নওগাঁর মান্দা ও আত্রাই, রাজশাহীর বাগমারার রণাঙ্গনে অংশগ্রহণ করি। সর্বশেষ নাটোরে নলডাঙ্গায় ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানের সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধ করি এবং নলডাঙ্গা হানাদার মুক্ত হয়। নলডাঙ্গায় স্থলপথে মুক্তিযোদ্ধা ছাড়াও আকাশ পথে দুইটি যুদ্ধবিমান নিয়ে অংশগ্রহণ করেন ৬ নম্বর সেক্টর উইং কমান্ডার এমএ বাশার এবং ১ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর খালেদ মোশারফ। 
সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মরণপণ যুদ্ধের পর পাকবানাদার বাহিনী পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা কেউ হতাহত না হলেও ২৬৮ জন পাকহানাদার বাহিনীর সদস্য নিহত হয়। দেশের পশ্চিমাঞ্চলে নলডাঙ্গায় একমাত্র মুক্তিযুদ্ধ যা প্রকাশ্য দিবালকে সংঘটিত হয়। সঙ্গে ছিলেন নলডাঙ্গা উপজেলার বাঁশিলা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক মাস্টার, অধ্যাপক হুসেন আলী, খোলাবাড়িযা গ্রামের আফাজ, খাদেম, আব্দুস সাত্তার, বিলজোয়ানি গ্রামের সাহেব আলী দেওয়ান, সামাদ দেওয়ান, ইসাহাক দেওয়ান ও বাসুদেবপুরের সরদার সাইফুল ইসলাম সহ অনেকেই। 
যুদ্ধ শেষে  বাড়ি ফিরে এসে দেখেন এলাকার মানুষ অভাব অনটনে ভালো চিকিৎসা নিতে পারছেন না। তখন গ্রামের মানুষদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জাগরণ সংঘ গড়ে তুলেন। সেই থেকে এখন পর্যন্ত বৃক্ষরোপণ, চিকিৎসাসহ সমাজের বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক সেবা করে যাচ্ছেন এই মানুষটি।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান যে সোনার বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে ছিলেন তা আজ পূরণের পথে কাজ করছেন বর্তমান সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সন্মানী বাড়িয়েছেন, বীর নিবাস নামে বাড়ি করে দিয়েছেন। সকল ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেছেন। 
তার ইচ্ছা গরিব মানুষের জন্যে একটি হাসপাতাল করে দেয়া।
সূত্র: ডেইলি বাংলাদেশ

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়