কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক:
পুরান ঢাকার চকবাজারে চুরিহাট্রা এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাতের ১৫ ঘণ্টা পর আগুন নিভিয়ে উদ্ধার অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন উদ্ধার অভিযান আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্ত ঘোষণা করেন।
এর আগে সকালে আগুন নেভানোর পর তল্লাশি চালিয়ে ৭৮টি লাশ উদ্ধারের কথা জানায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। লাশগুলো ব্যাগে পুরো তারা পাঠায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ বলেন, তারা ৬৭টি লাশ পেয়েছেন। ময়নাতদন্তের পর শনাক্তকরণের ভিত্তিতে এগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
সংখ্যার এই গড়মিলের বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক তারেক হাসান ভূইয়া বলেন, আমাদের হিসাবে লাশ ৭৮টি। তবে কয়েকটা ব্যাগে খণ্ড খণ্ড ডেডবডি ছিল। সম্পূর্ণ ডেডবডি হয়ত ৭৫টি হতে পারে।
নিহতদের অনেকের দেহ এতই পুড়েছে যে শনাক্ত করার অবস্থা নেই। তাদের ডিএনএ নমুনা রাখা হবে যেন স্বজন কারও সঙ্গে মিলিয়ে শনাক্ত করা যায়।
এই অগ্নিকাণ্ডে আহত হয়েছেন বহুলোক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন অন্তত ৪০ জন। এর মধ্যে বার্ন ইউনিটে আছেন নয়জন, তার মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
আগুনে চকবাজার চুড়িহাট্টা শাহী মসজিদের পাশের অন্তত পাঁচটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ভবনে বিভিন্ন দোকানের পাশাপাশি ছিল রাসায়নিক, প্লাস্টিক ও প্রসাধন সামগ্রীর গুদাম।
দাহ্য পদার্থ থাকার কারণে আগুন দ্রুত ছড়ায় বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।
সড়কে পড়ে আছে অসংখ্য পারফিউম, এয়ার ফ্রেশনারের কৌটাসহ পলিথিন তৈরির কাঁচামাল। এই দাহ্য পদার্থগুলোর কারণে আগুন বেশি ছড়ায় বলে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে।
আসিফ মাহমুদ অভি সড়কে পড়ে আছে অসংখ্য পারফিউম, এয়ার ফ্রেশনারের কৌটাসহ পলিথিন তৈরির কাঁচামাল। এই দাহ্য পদার্থগুলোর কারণে আগুন বেশি ছড়ায় বলে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে।
নয় বছর আগে নিমতলীতে অগ্নিকাণ্ডের পর পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিকের গুদামগুলো সরানোর দাবি উঠেছিল জোরেশোরে, কিন্তু তা না হওয়ার মধ্যে চকবাজারের অগ্নিকাণ্ড ঘটল।
নিমতলীর ঘটনা স্মরণে করে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক শাকিল নেওয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, এটা আমাদের ভালো একটা লেসন দিয়েছে, ওয়েক আপ কল দিয়েছে, তোমরা সতর্ক হও।
অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণার সময় ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, রাসায়নিকের গুদামগুলো সরাতে তারা এখন জোর পদক্ষেপ নেবেন।
প্রসঙ্গত, বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে চুড়িহাট্টার ওয়াহিদ চেয়ারম্যানের চারতলা ভবনটিতে প্রথমে আগুন লাগে, এরপর তা ছড়িয়ে পড়ে পাশের একটি, পেছনের একটি এবং সরু গলির বিপরীত পাশের দুটি ভবনে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুন লাগার পরপরই চার তলা ভবনটির সামনে থাকা বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরণ ঘটে, ওই সময় রাস্তায় থাকা কয়েকটি গাড়িতেও আগুন ধরে যায়।
হায়দার বক্স লেনের একজন বাসিন্দা বাশার বলেন, আগুনের সময় রাজমনি হোটেলের সামনের রাস্তায় কয়েকটি গ্যাস সিলিন্ডার ছিল। ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরণের পর ওই গ্যাস সিলিন্ডারেও আগুন লেগে ভবনে ও রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে।
অগ্নিনির্বাপক বাহিনীর ১০টি ইউনিট সঙ্গে সঙ্গে কাজ শুরু করে। পরে ইউনিটের সংখ্যা ৩৭টিতে গিয়ে ঠেকে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারী মিলিয়ে কর্মীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২০০ জন।
এর বাইরে পুলিশ, র্যাবের পাশাপাশি হেলিকপ্টার নিয়ে বিমানবাহিনীও যোগ দেয় আগুন নেভানোর কাজে।
পুরান ঢাকার ওই সংকীর্ণ সড়কে ভবনগুলোর ছোট ছোট কক্ষে আগুন জ্বলতে থাকায় তো নেভাতে বেগ পেতে হচ্ছিল বলে জানান অগ্নি নির্বাপক বাহিনীর মহাপরিচালক আলী আহাম্মেদ খান।
ভোররাতে একবার আগুন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনার পরও আবার তা ছড়িয়ে পড়েছিল।
সকাল ৯টার দিকে আগুন আয়ত্তে আনার কথা জানান ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক শাকিল নেওয়াজ।
তখন ভবনের ভেতরে ঢুকে একের পর এক লাশ বের করে আনছিলেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা, সেখানে একটি তথ্য কেন্দ্র খুলে বোর্ডে সর্বশেষ তথ্যও জানিয়ে দেওয়া হচ্ছিল।
দুপুর পৌনে ১টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিভেছে বলে ঘোষণা আসে ফায়ার সার্ভিসের, তার আধা ঘণ্টা পর উদ্ধার অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন মেয়র খোকন।
খবর বিভাগঃ
সারাদেশ
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়