Wednesday, February 27

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কানাইঘাট আ.লীগে দ্বিধা-বিভক্তি


নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
আসন্ন কানাইঘাট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। 


আগামী ১৮ মার্চ কানাইঘাট উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি ও জামায়াত জোটের কোন নেতা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় মূলত চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ ঘরনার ৩ প্রার্থীর মধ্যে ভোট যুদ্ধ সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। 

যার কারণে নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা দ্বিধা বিভক্ত হয়ে তিন প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী মাঠে তৎপর থাকায় দলের চেইন অব কমান্ড কেউ মানছে না।

নেতাকর্মীরা যার যার মতো আওয়ামী লীগ ঘরনার তিন প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়াম্যান প্রার্থী আলহাজ্ব মুমিন চৌধুরীর পক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতৃবৃন্দ থাকলেও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নাগরিক কমিটির ব্যানারে নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সাতবাঁক ইউপির ৩ বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মস্তাক আহমদ পলাশের পক্ষে নির্বাচনী মাঠে প্রকাশ্যে কাজ করে যাচ্ছেন দলের বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। 

নৌকার প্রার্থী মুমিন চৌধুরীর পক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর পদদারী বড় অংশের নেতাকর্মীরা পাশে থাকলেও পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক জামাল উদ্দিন, কয়েকটি ইউনিয়ন ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক গিয়াস উদ্দিন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল ইসলাম হারুন, যুগ্ম আহ্বায়ক সাহাব উদ্দিন সমর্থিত বড় অংশের নেতাকর্মীরা মস্তাক আহমদ পলাশের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন।

প্রতীক বরাদ্দের আগেই এক ধরনের মাঠ দখলের প্রতিযোগিতা চলছে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মুমিন চৌধুরী ও বিদ্রোহী প্রার্থী মস্তাক আহমদ পলাশের অনুসারীদের মধ্যে।

 প্রতিদিন দলের নেতাকর্মী এবং বিভিন্ন এলাকার ভোটারদের সমর্থন আদায়ে এ দুই প্রার্থী মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

 অপর দিকে চেয়ারম্যান প্রার্থী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আবুল খায়ের চৌধুরীর পক্ষে বৃহত্তর গাছবাড়ী অঞ্চলের অনেক আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী অবস্থান নিয়েছেন। 

যার কারণে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে দলের তৃণমূল নেতাকর্মী ও সমর্থকরা দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।

 এ নিয়ে নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিরোধ মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে বলে দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী ও সমর্থনকরা মনে করেন।

 তবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মুমিন চৌধুরী বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন বলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন।

 মুমিন চৌধুরী একজন সৎ নিষ্ঠাবান ও সদালিপি ব্যক্তি হওয়ায় এবং দীর্ঘদিন ধরে তার প্রবাস জীবনের একটি উপার্জনের বড় অংশ এলাকার গরীব দুঃখীদের মাঝে বিলিয়ে দেওয়ায় এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে তার বড় ধরনের অনুদান থাকায় দলের বাহিরে সাধারণ ভোটাররা মুমিন চৌধুরী কে ভোট দিবেন। 

তার দাবী দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী মুমিন চৌধুরীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন। তিনি মনে করেন স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুর প্রতীক নৌকা কে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ভালোবাসেন এবং তারা নৌকা প্রতীকে ভোট দিবেন অন্য কোন প্রতীকে নয়। নৌকার বিরুদ্ধে যারা বর্তমানে অবস্থান নিয়েছেন তারা নির্বাচনের আগেই নৌকা প্রতীকের পক্ষে চলে আসবেন।

 অপর দিকে মস্তাক আহমদ পলাশ দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক মাঠে সক্রিয় থাকায় এবং দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সুখ-দুঃখে পাশে থাকায় দলীয় মনোনয়ন না পেলেও তার পক্ষে দলের বড় অংশের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বলে তার অনুসারীরা জানান। 

পলাশ সমর্থকরা মনে করেন, নির্বাচনে মস্তাক আহমদ পলাশের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। তিনি একজন তৃন মূলের কর্মী এবং কি ভাবে এলাকার উন্নয়ন করতে হয় তা পলাশ ভাল করে জানেন। উন্নয়নের স্বার্থে পলাশ কে বেছে নিবেন ভোটাররা। তাদের দাবী যেহেতু উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে স্থানীয় সরকারের একটি নির্বাচন। 

বিএনপি জোট নির্বাচনে না আসায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর বাহিরে দলের অনেক পদদারী নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্র ভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এতে দলীয় ভাবে কোন বাধা নিষেধ নেই। বিজয়ী এবং পরাজিত হলেও ঘরের ছেলেই ঘরেই থাকবে। 

এদিকে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বরাবরের মতো কানাইঘাটে আঞ্চলিকতার আওয়াজ উঠেছে। তিন প্রার্থী ই ভোটের লড়াইয়ে সুবিধা করতে আঞ্চলিকতার জিকির তোলেছেন। 

মস্তাক আহমদ পলাশের পক্ষে প্রতিদিন বৃহত্তর সাতবাঁক পরগনার বিভিন্ন এলাকায় মতবিনিময় ও সভা, উঠান বৈঠক করে যাচ্ছেন মুরব্বীয়ানরা। এ সব বৈঠকে নির্বাচন বর্জন করলেও বিএনপি ও জামায়াতের পদদারী অনেক নেতাকর্মীকে অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে।

 আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মুমিন চৌধুরীর পক্ষে বাজেরাজ, চতুল, চাউরা ও ফালজুর পরগনার আওয়াজ তোলে দলের বাহিরে মুরব্বীয়ানরা তৎপরতা চালাচ্ছেন।

 আগের প্রতিটি উপজেলা নির্বাচনে আঞ্চলিকতার প্রভাবে জয় পরাজয় নির্ধারণ হলেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে ভোটের লড়াইয়ে পরগনা প্রথার বাহিরে দলীয় ইস্যু ও প্রার্থীর ব্যক্তি ইমেজ বেশি গুরুত্ব পাবে বলে সচেতন মহল মনে করেন।
কানাইঘাট নিউজ ডটকম/২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ইং


শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়