Sunday, February 17

কানাইঘাটে শিশু শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের চেষ্টায় মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
কানাইঘাট রাজাগঞ্জ ইউনিয়নের জামেয়াতুল ইসলাম লিলবানাত খালপার টাইটেল মহিলা মাদ্রাসার সহকারি শিক্ষক হাফিজ কবির আহমদ (৪০) কর্তৃক মাদ্রাসার তৃতীয় শ্রেণির শিশু ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। 

ধর্ষণ চেষ্টার পর গত ৫ ফেব্রুয়ারি ভিকটিম এ শিশু ছাত্রীকে তার অভিভাবকরা সিওমেক হাসপাতালের ওসিসি বিভাগে ভর্তি করেন।

ছাত্রী নির্যাতনের অভিযোগের খবর পেয়ে ঐ দিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া সুলতানা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) লুসিকান্ত হাজং ও কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুল আহাদ সরেজমিনে মাদ্রাসায় গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে ভিকটিমের পরিবার ও স্থানীয় এলাকাবাসীকে আশ্বস্ত করেন।

এদিকে ডাক্তারী পরীক্ষায় মেয়েটিকে ধর্ষণের চেষ্টার আলামত পাওয়ার পর পুলিশ অভিযুক্ত শিক্ষক হাফিজ কবির আহমদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী/০৪) এর ৯ (৪) (খ) রুজু করা হয়।

কানাইঘাট থানার মামলা নং ১২, তাং-১০/০২/২০১৯ইং। 

জানা গেছে, থানায় মামলা দায়েরের পর থেকে মামলার আসামী শিক্ষক কবির আহমদ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা আব্দুর রহমান শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টার জঘন্য ঘটনাটি শুরু থেকে ধামাচাপা দিয়ে তিনি গত ৭ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় লোকজনদের তোয়াক্কা না করে বার্ষিক জলছার আয়োজন করলে এ নিয়ে জনমনে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। 

স্থানীয় এলাকাবাসীর পক্ষে বেশ কয়েকজনের স্বাক্ষরিত শিশু ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনার সাথে জড়িত শিক্ষক কবির ও মুহতামিম আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং জলছা বন্ধ করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে ৬ ফেব্রুয়ারি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে থানা পুলিশ জলছা সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দেওয়ায় জনমনে উত্তেজনার অবসান হয়।

এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেছেন, খালপার গ্রামের মৃত শহর উল্লাহর পুত্র মাওলানা আব্দুর রহমান স্বঘোষিতভাবে কোন ধরনের পরিচালনা কমিটি ছাড়াই তিনি নিজে পরিচালক আবার মুহতামিম পরিচয় দিয়ে স্থানীয় লোকজনদের কে তোয়াক্কা না করে দীর্ঘদিন ধরে লিলবানাত খালপার মহিলা মাদ্রাসাটি পরিচালনা করে আসছেন। বিভিন্ন সময় উক্ত মাদ্রাসার ভিতরে ছাত্রীদের সাথে খারাপ আচরনের নানা ঘটনা ঘটে থাকে। 

সর্বশেষ গত ১৭ জানুয়ারি মাদ্রাসার দ্বিতীয় তলার একটি নির্জন কক্ষে মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক স্থানীয় মইনা গ্রামের মৃত আব্দুস শুকুরের পুত্র হাফিজ কবির আহমদ তৃতীয় শ্রেণির ৯ বছরের এক শিশু ছাত্রীকে জোরপূর্বক ভাবে ধর্ষণের চেষ্টা করে শিশু ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন করলে মেয়েটি পরদিন থেকে মাদ্রাসায় আসা বন্ধ করে দেয়।

এ ঘটনায় ছাত্রীর অভিভাবকরা মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা আব্দুর রহমানের কাছে বিচার প্রার্থী হলে তিনি ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন এবং কাহারো কাছে এ বিষয়টি না বলার জন্য ছাত্রীর অভিভাবকদের বাধা নিষেধ করলে এ নিয়ে এলাকায় জনমনে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা দেখা দেয়।

স্থানীয়রা জানান, মাদ্রাসার পরিচালক ও মুহতামিম দাবীদার মাওলানা আব্দুর রহমান এক সময় মসজিদের ইমাম ছিলেন। সে সময় তার বিরুদ্ধে এ ধরনের নারী কেলেঙ্কারীর অভিযোগ ছিল। স্থানীয় লোকজনকে কোন ধরনের সম্পৃক্ত না করে তার বাড়ীর পাশে নিজস্ব জায়গার উপর লিলবানাত মহিলা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে মাদ্রাসার নামে দেশ-বিদেশ থেকে অনুদান এনে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে যাচ্ছেন। মাদ্রাসার কোন ধরনের আয়-ব্যয় প্রকাশ করা হয় না।

শিশু ছাত্রী ধর্ষনের চেষ্টায় অভিযুক্ত হাফিজ কবির আহমদ এলাকার লালারচক নামক একটি মাদ্রাসা শিক্ষকতা করার সময় সে একই ধরনের অভিযোগে মাদ্রাসা থেকে বহিষ্কার হয়েছিল।

এলাকাবাসী অবিলম্বে অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেপ্তার ও মাদ্রাসার মুহতামিম আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনের কাছে। 

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার এসআই আবু কাউছার জানিয়েছেন, মামলার আসামী শিক্ষক কবির আহমদকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে।

এব্যাপারে মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা আব্দুর রহমানের সাথে মাদ্রাসায় কথা হলে তিনি বলেন, তার মাদ্রাসাটি পুরোনো। এখানে ১১০ জনের মতো ছাত্রী লেখাপড়া করে থাকেন। এলাকার কিছু লোকজন তার বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। মাদ্রাসার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। 

মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক কবির উদ্দিনের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা তিনি জেনে মাদ্রাসায় ১০ জন শিক্ষক নিয়ে বৈঠক করেন। কিন্তু শিক্ষক কবির উদ্দিন মাদ্রাসা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় তিনি কিছু করতে পারেননি।

মাদ্রাসার টাকা আত্মসাৎ সহ তার বিরুদ্ধে আনা অন্যান্য অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।

কানাইঘাট নিউজ ডটকম/১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ইং

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়